অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সজাগ থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৮
ঢাকা: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন,আমার ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা ২০৪১’র বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে। সেটিই তোমাদের কাছে চাই। শুধু ২০৪১’এ থেমে থাকবে না বাংলাদেশ। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যানও করে দিয়েছি। এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সবসময় সজাগ থেকে ছাত্রলীগের মূলনীতি নীতি মেনে তোমাদের চলতে হবে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। শোকের অগাস্ট মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে বিকেল এই ছাত্র সমাবেশ হয়।
‘আজ আবারও জেগেছে স্বদেশ/ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে/শোক এবার শক্তির উৎস/ একসাথে হাতে হাত ধরে’ অঙ্গীকারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগের এই ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধান অতিথি মঞ্চে আসন গ্রহণ করার মূল সমাবেশ শুরু হয়। শুরুতে সমাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনা করেন। হৃদয় জুড়ে গ্রাফিতি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর ১৫ আগস্টসহ সকল শহিদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথিকে সংগঠনের পক্ষ ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হয়। সংগঠনের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্মারক নৌকা উপহার প্রদান করা হয়। ১৫ আগস্ট পোস্টার ও ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রসমাবেশের পোস্টার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ সমাবেশ হয়। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদাম হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
২০৪১ সালের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘আহ্বান করেছিলাম ধান কাটতে, তোমরা ধান কাটতে গিয়েছ। তোমরা যেখানে পড়াশোনা কর নিজের প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ক্লাসরুম থেকে যেখানে বসবাস করবা নিজেরা করবা অন্যকে শেখাবা। নিজের বাড়িতে গ্রামের বাড়িতে কোনো জমি যেন অনাবাদি না থাকে, যাদের জমি অনাবাদি তাদেরকে উৎসাহিত করবে। যেন অনবাদি জমি চাষ করে। ফসল ফলায় নিজেরা পরিবেশ রক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ করবে। উপকলূীয় অঞ্চল যারা তাদের আরও বেশি কাজগুলো করতে হবে।’
ছাত্রলীগের গঠনতান্ত্রিক নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, স্যাংশন কাউন্টার স্যাংশন তার ফলে সারাবিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি। এই মুদ্রাস্ফীতির কারণে যাদের ফিক্সড ইনকাম তাদের খুব কষ্ট হয়। গ্রামে গ্রামে মানুষ উৎপাদন করতে পারে। আমরা যদি প্রত্যেকে সেই উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি দেই তাহলে আমাদের কখনো কারো কাছে খাবারের জন্য হাত পাততে হবে না। কারণ স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে নগদ টাকা দিয়ে কেনা খাদ্যশস্য বাংলাদেশে আসতে দেয়নি। কৃত্রিম উপায়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। সেই কথা মাথায় রেখেই আমরা সবসময় প্রচেষ্টা যে, আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যশস্য উৎপাদন আমরা কিন্তু বাড়িয়েছি। আমরা যদি সার্বিক উৎপাদন দেখি বিএনপির আমলে মাত্র ২ কোটি মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হতো, আমরা সেখানে ৯ কোটির উপরে এখন খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে তরি-তরকারি ফলমূল মাছ মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই আমাদের এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’
তাই সবাইকে ফসল উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি সর্বজনীন পেনশনের বিষয়ে বিএনপি অপপ্রচারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম বিএনপির কিছু কিছু নেতারা বললেন, এটা নাকি আমাদের নির্বাচনি ফান্ড তৈরি করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে? নিজেরা কিছু করতে পারেনি মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই। মানুষের ভালোর জন্য যখন আমরা কাজ করি তখন সেটি নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এই বিভ্রান্তিতে যেনে কেউ কান না দেয়। এটি আমার ছাত্রলীগকে দায়িত্ব দেব, নিজের এলাকায় বাড়ির পরিবার যারা যারা সরকারি চাকরি করে না তাদেরকে এই পেনশন স্কিমে আনতে হবে। তারা যদি তাদের আমানত রাখেন সেই আমানত কখনও খোয়া যাবে না। সেটি সরকারি কোষাগারেই জমা হবে এবং সেখান থেকেই সরকারি অফিসাররা যেভাবে অবসর পাওয়ার পর তারা অবসর ভাতা পায় সেই পেনশনের টাকা সকলেই তুলতে পারবেন।’
বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ছাত্রলীগের পাশে ওতপ্রোতভাবে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজী নজরুলের ভাষায় বলতে হয়, বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। আমার মা সবসময় আমার বাবার পাশে ছিলেন বলেই তিনি নির্বিঘ্ন চিত্তে এ দেশের মানুষকে ভালবেসে তাদের জন্য কাজ করতে পেরেছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমার একটাই লক্ষ্য এই বাংলাদশটাকে উন্নত করা। সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই, এই বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। আমার আব্বার খুব প্রিয় পঙক্তি, উদয়ের পথে শুনি কার বাণী ভয় নাই ওরে ভয় নাই। নিঃশেষে যে প্রাণ করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নেই।’
‘আমি সেই আদর্শ নিয়েই পথ চলি। আমার কোনো ভয় নেই। দেশের মানুষের ভালবাসি। স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। আমার ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা ২০৪১’র বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে; আমার এই ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা। সেটাই আমি তোমাদের কাছে চাই।’
‘শুধু ২০৪১’এ থেমে থাকবে না বাংলাদেশ। ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যানও আমি করে দিয়েছি। কাজেই এই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। সবথেকে বড় কথা শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা শান্তি প্রগতি ছাত্রলীগের মূলনীতি এই নীতি মেনেই ছাত্রলীগকে চলতে হবে’ বলে আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছরই ছাত্রলীগ ৩১ অগাস্ট এই প্রোগ্রামটি করে থাকে। কিন্তু এবার এইএসসি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে একদিন পিছিয়ে করার উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সারাবাংলা/এনআর/একে