মূর্খদের হাত দেশ পড়লে দেশের অগ্রযাত্রা হয় না: প্রধানমন্ত্রী
১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৫
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়া বলেছিল, ছাত্রদলই যথেষ্ট আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে। আর সেখানে আমি ছাত্রলীগেকে দিয়েছিলাম খাতা আর কলম। কারণ লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো না মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। অশিক্ষিত-মূর্খদের হাত দেশ পড়লে সে দেশের কোনোদিন অগ্রযাত্রা হতে পারে না। আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশকেই ছাত্রলীগের এই তারুণ্য শক্তি এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্রসমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে বিকেল এই ছাত্র সমাবেশ হয়৷
ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথির মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর সমাবেশ শুরু হয়। শুরুতে মাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনা করেন। হৃদয় জুড়ে গ্রাফিতি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর ১৫ আগস্টসহ সব শহিদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথিকে সংগঠনের পক্ষ ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হয়। সংগঠনের প্রকাশনা ‘মাতৃভূমি’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে স্মারক নৌকা উপহার দেওয়া হয়। ১৫ আগস্ট পোস্টার ও ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রসমাবেশের পোস্টার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদাম হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই ছাত্রলীগেই হচ্ছে সেই শক্তি, এই তারুণ্যের শক্তি একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ আজকে আমরা যে গড়তে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এখন দেখি; আমিও ছাত্রলীগের একজন সদস্য ছিলাম, সেই সঙ্গে সঙ্গে আমার কেবিনেটে অনেকেই আছে সবাই তো ছাত্রলীগ করে আসা। কাজেই প্রত্যেকটা কাজ আমরা যে দেশের উন্নয়নে করতে পারছি ছাত্রলীগের কিন্তু অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। কারণ একটি আদর্শ নিয়ে যে সংগঠন তৈরি হয় সেই সংগঠনেই পারে একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। সেজন্য মনে ছাত্রলীগ সবসময় যে কোনো দুযোগ-দুর্বিপাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেই এক/এগারোর সময়ও ছাত্রলীগ কোনো আপস করেনি। সর্বপ্রথম আমাদের ছাত্ররাই মাঠে নামে এবং এর প্রতিবাদ করেছে।’
করোনা অতিমারির সময় মানুষের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন সংগঠনের গঠনতান্ত্রিক নেত্রী শেখ হাসিনা।
পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশকে কী দিয়েছে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের আমরা পরাজিত করেছি, পরাজিত শক্তির পদাঙ্ক অনুসরণ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল খুনি মোশতাক-জিয়া ক্ষমতায় আসার পর। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আসা তো মনে হয় আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকেই ধ্বংস করার জন্যই।’
আজকে কোনো হত্যা হলে সবাই বিচার চায়। আজকে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা দেখি মানবাধিকারের কথা বলে? আমার প্রশ্ন, সেই ১৫ আগস্ট যখন মা-বাবা-ভাই সব হারালাম। আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। আমরা তো বিচার চাইতে পারিনি।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে সরকার গঠন করে জাতির পিতার অসমাপ্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আদর্শ নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে এগিয়ে যেতে পারে তাহলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি।
২০০১ সালে দেশি-বিদেশি চক্রান্তে সরকার গঠন করতে না পারার প্রসঙ্গ তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করলে দেশে সন্ত্রাস নৈরাজ্য দুর্নীতির নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এক/এগারোর প্রেক্ষাপটের প্রসঙ্গ তুলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওরা তো ভোট করতে আসে না, ভোট চায় না। ভোট পায় না, ভোট পাবে না। ওরা তো লুটেরা জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাস মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়, মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। কাজেই এরা লুটেরা সন্ত্রাসী জঙ্গিতে বিশ্বাসী। এরা কোন মানুষের কল্যাণ করতে পারে না।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ইলেকশন তাদের কথা (লক্ষ্য) না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারও তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। কারণ তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। কারণ তারা নাকি এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে? যাদের জন্ম মিলিটারি ডিটেকটরদের হাতে; মার্শাল’র মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে; সেই ক্ষমতাধারীদের হাতে তৈরি সংগঠন ওই বিএনপি আর সংবিধানে যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ ছিল, সংবিধান সংশোধন করে আবার যাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী যারা তাদেরকে, তারা এ দেশের কোনদিন কল্যাণ চাইতে পারে না। তারা চায় না। তারা ধ্বংস করতে চায়।’
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর অপবাদ চাপাতে চেয়েছিল। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি। নিজের ভাগ্য না। রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। নিজেও তো আরও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কই আমার নিজের জন্য আমি কখনও চিন্তা করিনি বা আমাদের ছেলেমেয়েদেরও না। তাদের শিক্ষা দিয়েছি লেখাপড়া করার,ওই একটা সম্পদই দিয়ে যেতে পারব। সেটি হচ্ছে শিক্ষা। তাও তারা নিজেরা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। তারা কিন্তু সেভাবেই পড়েছে। ধন-সম্পদ টাকা কড়ি কোনোকিছু কাজে লাগে না। সেটি তো মানুষ করোনায় টের পেয়েছে। কাজেই আমিও চাই, আমাদের ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, তারাও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে। এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত নেতৃত্ব হিসাবে গড়ে উঠবে। সেটিই আমার লক্ষ্য, সেটিই আমরা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে ,বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারবে। তার বয়স সত্তরের বেশি। সে মামলায় হেরে যায়। তারপরেই তাদের বিদেশি বন্ধু দ্বারা পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে।’
‘তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। কারো কাছে হাত পাতব না। আমরা সেটি করেছি। বিশ্বকে দেখিয়েছি বাংলাদেশ পারে। বাংলাদেশের মানুষ পারে’ বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।
বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না— জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি আমরা চাইলে নিজের টাকায় করতে পারি। এরপরেই কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। করোনার সময়ও আমাদের অর্থনীতির গতি আমরা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। তারপরও অনেকে কোনোকিছুই তাদের ভালো লাগে না। কোনোকিছুই তারা দেখে না যে, দেশের উন্নতি হচ্ছে। যাদের চোখ অন্ধ, আমি তো খুব চমৎকার অত্যন্ত আধুনিক আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। খুব ভালো আই ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে এখন। একেবারে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন। সমস্ত আধুনিক মেশিনপত্র সেখানে আছে। আমি নিজেও চক্ষু দেখাতে যাই সেখানে। তো যারা এখন অন্ধ আমাদের উন্নতি দেখে না তাদের বলব, দশ টাকা টিকিট কাটলেই সেখানে চোখ দেখানো যায়। তারা যেন চোখটা একটু দেখিয়ে আসে।’
‘আসলে তাদের মনের দরজাই অন্ধকার। আর তারা ওই পরাজিত শক্তি তাদের পদলেহনকারী। সেই জন্য বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তারা দেখে না। আজকে ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে ঘর দিচ্ছি, মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে, এটা তাদের পছন্দ না। কারণ তারা হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া খেতে পাারছে না বলেই তাদের যত দুঃখ সেটাই আমরা জানি’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সমাবেশ শুরুর বৃষ্টি ভোগান্তি পড়েন সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা। বিকেল ৩টায় ছাত্র সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও বৃষ্টি বাধায় কিছুটা বিলম্ব হয়।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছরই ছাত্রলীগ ৩১ আগস্ট এই প্রোগ্রামটি করে থাকে। কিন্তু এবার এইএসসি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে একদিন পিছিয়ে করার উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
সারাবাংলা/এনআর/একে