এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: রাজধানীবাসীর আরেক স্বপ্নপূরণ আজ
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০০:১৩
ঢাকা: যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। তবে একের পর এক মেগাপ্রকল্পে সেই যানজটকে দূর করার প্রচেষ্টায় কমতি নেই সরকারের। গত বছরের একদম শেষ ভাগে মেট্রোরেলের উদ্বোধন যানজটের নগরীতে অনেকটা স্বস্তি এনেছে। এবার রাজধানীবাসীকে আরেকটু স্বস্তির নিঃশ্বাস দিতেই চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) অবশ্য খুলছে না পুরোটা পথ। আপাতত বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশের উড়ালসড়কের দ্বার উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টা থেকে যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। আগামী বছর বাকি অংশ উদ্বোধন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন উপলক্ষে আজ অনুষ্ঠান থাকছে দুই প্রান্তেই। প্রথম পর্বে বিকেল সাড়ে ৩টায় বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হয়ে ফলক উদ্বোধন ও মোনাজাতে অংশ নেবেন। এরপর বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করবে। প্রধানমন্ত্রী টোল দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে উঠবেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে, ফার্মগেট অংশে নেমে চলে যাবেন আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে। সেখানে দ্বিতীয় পর্বে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি।
আরও পড়ুন- খুলছে এক্সপ্রেসওয়ে: ১৫ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট
এর আগে দ্বিতীয় পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সেতু বিভাগের সচিব। দেখানো হবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প সম্পর্কিত ভিডিও। এরপর বিনিয়োগকারী প্রতিনিধির বক্তব্য শেষে বক্তব্য রাখবেন বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে আরও বক্তব্য রাখবেন সমাবেশের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে চলছে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। এই বিভাগের তথ্য বলছে, এক্সপ্রেসওয়েটি কাওলা থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। রাজধানীতে যানজট পরিস্থিতি বিবেচনায় কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হওয়ায় এই অংশটি উদ্বোধন করে দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বিভিন্ন অংশে ওঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যে ৩১টি র্যাম্প তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার পয়েন্টগুলোতে যানজট বাড়িয়েও দিতে পারে।
আরও পড়ুন- ‘২০২৪ সালের মধ্যে পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হবে’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার কোনো যানবাহন চলবে না। পথচারী চলাচলের সুযোগও নেই। বাকি যানবাহনগুলোর জন্য এরই মধ্যে টোল নির্ধারণ করেছে সেতু বিভাগ। ১৬ আসনের কম প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস এবং তিন টনের কম মিনি ট্রাকের জন্য টোল ধরা হয়েছে ৮০ টাকা। ছয় চাকা পর্যন্ত মাঝারি আকারের ট্রাকের টোল হবে ৩২০ টাকা। ছয় চাকার বেশি বড় আকৃতির ট্রাককে টোল দিতে হবে ৪০০ টাকা। আর ১৬ বা তার বেশি আসনের সব বাস ও মিনিবাসকে ১৬০ টাকা টোল দিতে হবে।
এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ লোকের উপস্থিতি আশা করছে দলটি। সুধী সমাবেশ সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে যৌথসভাও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের টোল ১৬০ টাকা, ট্রাকে সর্বনিম্ন ৮০
এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের আগের দিন গতকাল শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে সুধী সমাবেশস্থল পরিদর্শন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে সাংগঠনিক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে সেতুমন্ত্রী বলেন, যানজট নিরসনে তৈরি করা হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও এখন পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছর নাগাদ পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু করতে পারব।
আরও পড়ুন- ‘২ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়ে, ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন’
সুধী সমাবেশ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধন উপলক্ষে আমরা জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি প্রত্যাশা করছি। মানুষের আগ্রহ আছে। কারণ মানুষ শুধু কথা শুনতে অভ্যস্ত নয়। মানুষ কাজ দেখতে চায়। আমরা কাজও দেখাব, কথাও বলব। আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি। প্রধানমন্ত্রীও তার বক্তব্যে তার আমলে বিভিন্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পসহ বিস্তারিত দেশের জনগণকে জানাবেন।
সুধী সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে সড়ক সেতুমন্ত্রী বলেন, এটি নির্বাচনি সভা নয়। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড ও প্রস্তুতি-পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদের নেত্রী সমবেত সমাবেশকে অবহিত করবেন, দিকনির্দেশনা দেবেন।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
এক্সপ্রেসওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ওবায়দুল কাদের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু বিভাগ সেতুমন্ত্রী