যেসব পথে ওঠানামা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে, কোন গাড়ির টোল কত
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯
ঢাকা: অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার। তারপরই উদ্বোধন হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ পেরোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকার যন্ত্রণারও অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আর এর সঙ্গে মেট্রোরেলের পর এলিভেটেড এবার এক্সপ্রেসওয়ে যুগে প্রবেশ করছে ঢাকা।
আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাওলা থেকে টোল দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে পার হবেন এক্সপ্রেসওয়ে। এরপর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। আগামীকাল রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টায় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এই উড়ালসড়ক।
এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য কাওলা-ফার্মগেট অংশে আছে মোট ১৫টি র্যাম্প বা সংযোগ সড়ক। রোববার এর মধ্যে ১৩টি র্যাম্প খুলে দেওয়া হচ্ছে চলাচল তথা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামা করার জন্য। এক্সপ্রেসওয়েতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার আর র্যাম্পে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে যানবাহনের জন্য।
আরও পড়ুন- এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: রাজধানীবাসীর আরেক স্বপ্নপূরণ আজ
সেতু বিভাগের তথ্য বলছে, এক্সপ্রেসওয়েতে করে দক্ষিণ দিকে যারা যাত্রা করবেন, তারা উঠতে পারবেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা, প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাব থেকে। অন্যদিকে যারা উত্তর থেকে দক্ষিণে যাবেন, তারা নামতে পারবেন বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে এবং ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে।
এদিকে যারা দক্ষিণ থেকে উত্তরের পথে যাত্রা করবেন, তারা এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবেন বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন থেকে এবং বনানী রেলস্টেশনের সামনে থেকে। আর যারা দক্ষিণ থেকে এসে উত্তরে নামবেন, তারা নামতে পারবেন মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর সামনে বিমানবন্দর সড়কে, কুড়িল বিশ্বরোডে এবং বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।
এই হিসাবে ফার্মগেট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, কাঁঠালবাগান, গ্রিনরোড থেকে শুরু করে শাহবাগ, সেগুনবাগিচা বা পুরান ঢাকা থেকে যারা এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে চান, তাদের জন্য বিজয় সরণি ফ্লাইভার থেকে এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযোগ সড়কটি ব্যবহার করা সহজ হবে। আবার যারা বনানী এলাকায় থাকবেন, তারা বনানী রেলস্টেশনের সামনের র্যাম্প ব্যবহার করেও এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবেন।
আরও পড়ুন- খুলছে এক্সপ্রেসওয়ে: ১৫ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট
আবার উত্তর দিক থেকে যারা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে দক্ষিণের দিকে আসবেন, তাদের মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি বা নিউমার্কেটগামী যারা তারা ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে নেমে যেতে পারেন। গুলশান-বাড্ডার দিকে যেতে চাইলে নামনে পারেন বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে। আর তেজগাঁও কিংবা মগবাজার, কাকরাইল, পল্টন বা পুরান ঢাকাসহ এই এলাকায় যেতে আগ্রহীরা নামতে পারেন মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে।
এদিকে এই এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কথা আগেই জানিয়েছে সেতু বিভাগ। নেই পথচারী চলাচলের অনুমতিও। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার এক গণবিজ্ঞপ্তিতে সেতু বিভাগ জানিয়েছে, এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে দাঁড়ানো কিংবা যানবাহন থেকে নেমে ছবি তোলাও নিষেধ।
এদিকে গত ২০ আগস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য টোল নির্ধারণের তথ্য জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে সেতু বিভাগ থেকে টোল নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনকে চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে টোল নির্ধারণ করেছে সেতু বিভাগ।
আরও পড়ুন- এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের টোল ১৬০ টাকা, ট্রাকে সর্বনিম্ন ৮০
প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, ১৬ বা তার কম সিটের মাইক্রোবাস এবং তিন টনের কম হালকা ট্রাক। এসব যানবাহনের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ টাকা।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে ছয় চাকা পর্যন্ত মাঝারি আকারের ট্রাক, যেগুলোকে টোল দিতে হবে ৩২০ টাকা। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ছয় চাকার বেশি বড় আকারের ট্রাকের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। আর চতুর্থ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ১৬ বা তার বেশি সিটের সব ধরনের বাস, যেগুলোকে টোল দিতে হবে ১৬০ টাকা।
আরও পড়ুন- ‘২ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়ে, ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন’
কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ উদ্বোধন হলেও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এটি ফার্মগেটের পর মগবাজার, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজধানীবাসীর যানজটে নাকাল হওয়ার কথা বিবেচনায় রেখে আপাতত কাওলা-ফার্মগেট অংশ খুলে দেওয়া হচ্ছে। পুরোটা চালু করা যাবে আগামী বছর।
২০১১ সালে কাজ শুরু হওয়া দেশের প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় ধরা হয়েছিল আট হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। তবে কয়েক দফা প্রকল্প সংশোধনের পর এই ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে পাঁচ দফা। তবু পুরো কাজ শেষ হয়নি। এখন ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ রেখে চলছে কাজ।
সারাবাংলা/টিআর
এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে