এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফলক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০৮
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীবাসীর যানজট ভোগান্তি নিরসনে এবার উড়াল মহাসড়কের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের পর এবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দরের কাওলা টু ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করা হলো।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ৩টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাওলা প্রান্তে ফলক উন্মোচনে অংশ নেন। এরপর দোয়া মোনাজাত অংশ নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পগুলোর একটি। আজ বিমানবন্দরের কাওলা টু ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন উপলক্ষে বিকেলে শেরে বাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভোর ৬টা থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে।
উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে ১ম পর্বে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে বিকেল সাড়ে তিনটায় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনি ফলক ও মোনাজাতে অংশ নেন। এরপর বাংলাদেশ সেতৃ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। প্রধানমন্ত্রী টোল প্রদান করে গাড়িবহর নিয়ে কাওলা প্রান্ত থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠের উদ্দেশে রওনা করেন।
দ্বিতীয় পর্বে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে বিকেল চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমন এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র ফলক উন্মোচন ও মোনাজাত। এরপর সেতু বিভাগের সচিবের স্বাগত বক্তব্য প্রদান। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন। এরপর বিনিয়োগকারী প্রতিনিধির বক্তব্য প্রদান, বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য প্রদান। এরপর সুধী সমাবেশের সভাপতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদান।
প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হয়েছে। শনিবার ঢাকার যানজট ভোগান্তি কমাতে এক্সপ্রেসওয়ের এই অংশটির দুয়ার খুলে দেওয়া হবে।
মূলত কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরের ভেতরে র্যাম্প (সংযোগ সড়ক) নামানোর কারণে উড়ালসড়কটি নগরীর যানজট বাড়িয়ে দিতে পারে। এক্সপ্রেসওয়েটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। র্যামম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। শনিবার এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনকৃত অংশে ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনকে চারটি ক্যাটাগরিতে টোল দিতে হবে। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস (১৬ আসনের কম) এবং মিনি-ট্রাক (৩ টনের কম) ৮০ টাকা, মাঝারি আকারের ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত) এবং ৬ চাকার বেশি বড় ট্রাক যথাক্রমে ৩২০ টাকা এবং ৪০০ টাকা দিতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা-ফার্মগেট অংশে ১৬ বা তার বেশি আসন বিশিষ্ট সব বাস ও মিনিবাসকে ১৬০ টাকা দিতে হবে। থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও পথচারী চলাচল করতে পারবে না।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুপুর ১২টার পর বৃষ্টি বাধা উপেক্ষা করে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলোতে নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেয়। সমাবেশে দুই থেকে তিন লাখ লোকের উপস্থিতিতে নির্বাচনি যাত্রার বার্তা দিতে চায় টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন দলটি।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/এনআর/একে