‘ভয়কে জয় করেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে’
২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪১
ঢাকা: সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম দেখে ভয়ে ঘাবড়ে যাওয়া নেতাদের অভয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাঝে মাঝে আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে অনেকেই একটু ঘাবড়ে যান। তারপর স্যাংশন, ভিসা স্যাংশন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার স্পষ্ট কথা, এই মাটি আমাদের; আমরা দেশ স্বাধীন করেছি জাতির পিতার নেতৃত্বে এই সমস্ত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ভয়কে জয় করে বাংলাদেশের জনগণ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।’
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শেরে বাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
এর আগে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট অংশের ওপর দিয়ে ১৪ মিনিটে ফার্মগেট পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। কাওলা প্রান্তে গাড়ি বহরের টোল দিয়ে ফার্মগেটের উদ্দেশে রওনা হন। শনিবার বিকেল ৩টা ৫৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফার্মগেট প্রান্তে এসে পৌঁছান।
রাজধানীবাসীর যানজট ভোগান্তি নিরসনে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারের পর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দরের কাওলা টু ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করা হলো। তিনটার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশেনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাওলা প্রান্তে ফলক উন্মোচনে অংশ নেন। এরপর দোয়া মোনাজাত অংশ নেন। এসময় বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
ফার্মগেট থেকে প্রধানমন্ত্রী পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে যান। এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেট অংশ দিয়ে শেরে বাংলা নগরে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ভোর ৬টা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন কেন হয়েছে? একটাই কারণ। ২০০৯ সাল থেকে যে গণতন্ত্র এবং মানুষের ভোটের অধিকার আমরা নিশ্চিত করে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে একটা গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা পরিবেশ রাখতে পেরেছি। তার কারণেই আজকে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই নাকি গণতন্ত্র চোখে দেখেন না আর গণতন্ত্র উদ্ধার করবেন? যাদের জন্মই হচ্ছে অগতান্ত্রিকভাবে সংবিধান লংঘন করে উচ্চ আদালত যাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ ঘোষণা করেছে। তাদের হাড়ে গড়া দল কি গণতন্ত্র দেবে? তারা তো গণতন্ত্র দিতে জানে না। তারপরও তারা আন্দোলনের নামে অনেক সময় অনেক কথা বলে।’
শেখ হাসিনা বলেন, “তবে বাংলাদেশ তো ছয় ঋতুর দেশ। ছয় ঋতুর দেশে আমরা তো দেখি? কখনো বর্ষা কখনো ঝড়? কখনো জলোচ্ছ্বাস? কখনো রৌদ্দ্রজ্বল সময় বিভিন্ন দেখে আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। তাই আজ যারা আন্দোলনের নামে রোজই ক্ষমতা থেকে আমাদের ফেলে দিচ্ছে। আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, যারা এখানে উপস্থিত সবাইকে বলব; সেটা কবির ভাষায় বলব। মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/ আড়ালে তার সূর্য হাসে/ হারা শশীর হারা হাসি/ অন্ধকারেই ফিরে আসে।”
আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘মেঘের ঘনঘটা আমরা দেখি। আবার তারপর তো সূর্য ওঠে। কাজেই ওই ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। নৌকা সারাজীবন উজান ঠেলে ঠেলেই এগিয়ে গেছে। ঝড় ঝঞ্জা পাড়ি দিয়েই নেকৈা আজকে তীরে ঠেকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা মার্কা অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়েছে, নৌকা মার্কা ডিজিটাল বাংলাদেশ দিয়েছে নৌকা মার্কাই স্মার্ট বাংলাদেশ আমাদের দেবে।’
প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন স্মার্ট জনশক্তি তৈরি করার অঙ্গীকার পুর্নব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার স্মার্ট সরকার হবে। আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট অর্থনীতি হবে। আমাদের সমাজ স্মার্ট সমাজ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলে এদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে। আর সেইভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
দলের সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,‘ সবাইকে এটাই বলব, আত্মবিশ্বাস রেখে জনগণের কল্যাণে কাজ করলে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব। আমরা তা প্রমাণ করেছি। যার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, হত্যা, অনেক কিছু আমরা দেখেছি। কিন্তু সেগুলোর উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ এগিয়ে যাবে।’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদের সবার প্রতিও ধন্যবাদ জানান এবং যথাসময়ে অবশিষ্ট কাজটাও যেন শেষ হয় সে বিষয়েও আশাবাদ করেন সরকার প্রধান।
সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
সুধী সমাবেশ মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী ছোট বোন শেখ রেহানা, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নুর তাপস, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রওশন আরা মান্নান, সংসদ সদস্য হাবিব হাসান ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী সমাবেশে ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের বিষয়ে একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। পরে প্রকল্পটির বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধি লি গুয়াংজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্ষুদে সংস্করণ উপহার দেন এবং তিনি তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য দেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা হাফেজ মুহিবুল্লাহিল বাকী মোনাজাত পরিচালনা করেন।
‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর একটি। আজ বিমানবন্দরের কাওলা টু ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করা হয়। বাকি অংশের কাজ শেষ হলে ২০২৪ সালের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে।
সারাবাংলা/এনআর/এমও