ব্যাটারি চালিত রিকশা উচ্ছেদ বন্ধসহ ৪ দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩০
মৌলভীবাজার: ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধসহ চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের চৌমুহনায় অবস্থিত সংগঠনের কার্যালয় হতে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি কোর্ট রোড, চৌমুহনা প্রদক্ষিণ করে কুসুমবাগ এসে শেষ হয়। পরে কুসুমবাগ এস আর প্লাজার সামনে জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সোহেল মিয়ার সভাপতিত্বে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল মিয়ার পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মো. গিয়াস মিয়া, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. জমিমউদ্দিন প্রমূখ।
অপর তিন দাবি হলো— নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুনরায় নির্ধারণ এবং রিকশা-ভ্যানসহ সব শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।
সভায় বক্তারা বলেন, গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে তারা জীবন ও জীবিকা রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। তার উপর বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ ভাড়া নির্ধারণ না করায় যাত্রী সাধারণের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাদানুবাদ লেগেই থাকে। অনেক ক্ষেত্রে রিকশা শ্রমিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। তাছাড়া কোনো কোনো যাত্রী যাত্রা পথে এক মিনিটের কথা বলে রিকশা থামিয়ে সময়ক্ষেপণ করলেও সেই অনুপাতে ন্যায্য ভাড়া পরিশোধ করেন না।
তারা আরও বলেন, বাজারে সকল পণ্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। এ পরিস্থিতিতে সহায় সম্বল বিক্রি করে, মহাজন ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক কিনে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন দরিদ্র মানুষ। এ সময় সরকার কখনো যানজট, কখনো দুর্ঘটনা, আবার কখনো বিদ্যুত অপচয়ের অজুহাতে এই বাহনগুলো উচ্ছেদের তৎপরতা চালাচ্ছে। অথচ এখনো বাজারে প্রকাশ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা বিক্রি হচ্ছে অবাধে। শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা না করে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চরম অমানবিক।
সমাবেশে নেতারা আরও বলেন, বর্তমানে সারাদেশের ন্যায় মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ উপজেলাতেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে। বলা চলে পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। তাছাড়া গত ৪ এপ্রিল/২০২২ উচ্চ আদালতের এক রায়ে মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্ঠাও স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎচালিত পরিবহন জ্বালানি তেলের চেয়ে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। বিদ্যুৎ অপচয়ের অজুহাত তুলে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ করা অযৌক্তিক। তাই হাজার হাজার শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করতে হবে।
দেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের সমস্যা-সংকটের জন্য দায়ী হচ্ছে প্রচলিত বিদ্যমান বৈষম্যমূলক নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী আর্থসামাজিক ব্যবস্থা। জনগণের তিন শত্রু সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি পুঁজিকে উচ্ছেদ করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল করে শ্রমিক-কৃষক-জনতার মুক্তি অর্জিত হতে পারে। এই সত্যকে আড়াল ও অস্বীকার করে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালাল শাসক-শোষক গোষ্ঠী এবং তাদের লেজুড় শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভক্তি বৃদ্ধি করে জনগণের ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকদের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা তথা মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের বসবাস উপযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আহ্বান জানান নেতারা।
সমাবেশ থেকে ব্যাটারি-মোটর চালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক উচ্ছেদ বন্ধ, রিকশা শ্রমিকদের স্থায়ী স্ট্যান্ড, বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ন্যায্য ভাড়ার তালিকা প্রদান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধ করা, পূর্ণাঙ্গ সর্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান নেতারা।
সারাবাংলা/এনএস