Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ বছরেই মাল্টার উৎপাদন বেড়ে ৪ গুণ!

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৪৩

ঢাকা: দেশে মাল্টা আবাদে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে মাল্টার আবাদ বেড়ে হয়েছে প্রায় তিন গুণ। একই সময়ে মাল্টার উৎপাদন বেড়ে হয়েছে চার গুণেরও বেশি। মাল্টা চাষিরা বলছেন, অন্য যেকোনো ফসল আবাদের চেয়ে মাল্টা চাষে লাভ বেশি। আর অনাবাদি জমিতেও মাল্টা আবাদ করা যায়। সবমিলিয়ে ‘দেশীয়’ বা ‘সবুজ মাল্টা’ আবাদে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন কৃষিসংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তিন বছর পর ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে মাল্টার আবাদ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। একই সময়ে উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারাদেশে মাল্টার আবাদ ছিল দুই হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২০০ হেক্টরে। অন্যদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাল্টার উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার ৩ টন, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৪৪০ টনে।

বিজ্ঞাপন

কেবল মাল্টা নয়, দেশে লেবুজাতীয় ফসলেরও উৎপাদন বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানেই দেশে লেবু জাতীয় ফসলের আবাদ বেড়েছে ২০ শতাংশ, উৎপাদন বেড়েছে ৫ শতাংশ। এর মধ্যে কমলা, লেবু ও বাতাবীলেবুর উৎপাদন কমলেও মাল্টাতে ভর করে বেড়েছে লেবুজাতীয় ফসলের সামগ্রিক আবাদ।

দেশে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চলছে। দেশের সাত বিভাগের ৩০ জেলার ১২৩টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া ১৪৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার এই প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন
তিন বছরের ব্যবধানে মাল্টার উৎপাদন বেড়ে চার গুণ ছাড়িয়েছে। ছবি: সারাবাংলা

তিন বছরের ব্যবধানে মাল্টার উৎপাদন বেড়ে চার গুণ ছাড়িয়েছে। ছবি: সারাবাংলা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের প্রভাবে দেশে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মাল্টা ও কমলার উৎপাদন আরও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বেশ কিছু জায়গায় নতুন নতুন বাগান গড়ে উঠেছে। সেসব বাগানে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। নতুন করে করা ওইসব বাগান থেকে মাল্টা ও কমলাসহ লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন শুরু হলে সামগ্রিক উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব দেখা যাবে।

জানতে চাইলে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, গত তিন বছরে দেশে লেবুজাতীয় ফসলের সামগ্রিক উৎপাদন অনেক বেড়েছে। মাল্টার উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য দেখা গেছে। প্রকল্পটি করা হয়েছিল দেশে পুষ্টি, বিশেষত ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণে। প্রতিবছর মাল্টা ও কমলা আমদানিতে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। মাল্টা ও কমলার আমদানি কমাতে এই প্রকল্প ভূমিকা রাখছে। করোনা মহামারির সময় দেশীয় মাল্টা ও কমলা ৮০ টাকা কেজিতে কেনা গেছে, যেখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা এসব ফলের কেজি প্রায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত ছিল। দেশে মাল্টা ও কমলার চাষ ব্যাপক সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে। অনেক কৃষক অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আশা করি এই প্রকল্পের অগ্রগতি সামনের দিনে আরও বেশি দৃশ্যমান হবে।

দেশে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন সার্বিকভাবে বাড়লেও কমেছে কমলার উৎপাদন। এর পেছনে মাল্টার আবাদ বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখছেন ফারুক আহমদ। তিনি বলেন, কমলার স্থান দখল করে নিচ্ছে মাল্টা। আবার বাতাবীলেবুর উৎপাদনের সব চিত্র পরিসংখ্যানে উঠে আসে না। প্রায় সব বাড়িতে লেবু ও বাতাবীলেবু হচ্ছে। তিন বছরের ব্যবধানে সামগ্রিকভাবে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। আবার নতুন অনেক বাগান হয়েছে, যেখানে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। নতুন বাগানগুলোতে উৎপাদন শুরু হলে লেবুজাতীয় ফসলের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাবে।

যা বলছেন মাল্টা চাষিরা

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের চন্দরিয়া ইউনিয়নের জাবারহাট গ্রামের আবদুর রহমান। কৃষি ডিপ্লোমার পর বিএ বিএড করেছিলেন। কিন্তু চাকরি হচ্ছিল না। ইউটিউবে দেখতে পান, পার্বত্য অঞ্চেলে মাল্টার ফলন বেশ ভালো হচ্ছিল। তখনই তার মাথায় আসে মাল্টা আবাদের কথা। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এক একর জমিতে মাল্টার প্রদর্শনী করেন। ভালো ফলন হওয়ায় ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন ‘সুকানদিঘি মাল্টা বাগান’। পৈত্রিক সম্পত্তিসহ অন্যদের জমি লিজ নিয়ে এখন ২৪ একর জমিতে মাল্টা চাষ করছেন তিনি।

রাজধানীসহ সারাদেশে এখন হরদম বিক্রি হচ্ছে দেশি মাল্টা। দামে কম বলে বিক্রিও ভালো। ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীসহ সারাদেশে এখন হরদম বিক্রি হচ্ছে দেশি মাল্টা। দামে কম বলে বিক্রিও ভালো। ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা। ছবি: সারাবাংলা

আবদুর রহমান সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক একর জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালে বাকি জমিতেও মাল্টা লাগাই। গাছ লাগানোর পর ২০২১ সালে আংশিক ফলন পেয়েছিলাম। সে বছর মাল্টা বিক্রি করি তিন লাখ টাকার। পরের বছর ১৬ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেচি। সব খরচ বাদ দিয়ে আমার ছয় লাখ টাকার মতো লাভ ছিল। চলতি মৌসুমেও মাল্টার আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করি ভালো ফলন পাব। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মাল্টা উঠাতে শুরু করব।

ঠাকুরাগঁওয়ের এই চাষি আরও বলেন, গাছ লাগানোর পর প্রথম বছরে আংশিক ফলন পাওয়া যায়। দুই বছর পর থেকে পূর্ণ ফলন পাওয়া যায়। মাল্টা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। যেসব জমিতে অন্য ফসল হয় না অর্থাৎ পরিত্যক্ত জমি, সেখানেও মাল্টা চাষ করা যায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের আরেক মাল্টা চাষি নির্মল চন্দ্র রায় দুই একর জমিতে মাল্টা চাষ করছেন। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ৪০ শতক জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করি। সফল হওয়ায় পরে জমি বাড়াই। আমি মূলত কৃষিকাজেই সম্পৃক্ত। কৃষি অফিস থেকে আমাদের মাল্টা চাষি উৎসাহিত করা হচ্ছিল। আর আমার চাচাতো ভাই নার্সারী ব্যবসা করায় সেও বলেছিল, মাল্টা চাষ হয়তো লাভজনক হতে পারে। সেই থেকে মাল্টা চাষ শুরু।

গত বছর দুই একর জমি থেকে পাঁচ লাখ টাকার কিছু বেশি লাভ হয়েছিল নির্মল চন্দ্র রায়ের, খরচ ছিল এক লাখ টাকার কিছু বেশি। এ বছর সব খরচ বাদ দিয়ে আট থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ আশা করছেন। তিনি বলেন, মাল্টা চাষ অবশ্যই লাভজনক। পাঁচ একর জমিতে ধান চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে যেখানে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ থাকে, সেখানে মাত্র দুই একর জমিতে মাল্টা চাষ করে আট থেকে ১০ লাখ টাকা লাভ হয়। সে হিসাবে মাল্টা চাষ অবশ্যই অনেক লাভজনক।

কথা হয় খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বড়টিলার বাসিন্দা লনি মিয়ার সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, এক একর জমিতে মাল্টা চাষ করছি। কৃষি অফিসররা চারা দিয়েছে। গত বছর ছয় ক্যারেট মাল্টা বিক্রি করতে পেরেছি। এ বছর এইর মধ্যে ১৮ মণ মাল্টা বিক্রি করেছি। আরও ২০ থেকে ২৫ মণ মাল্টা পেতে পারি। তবে মাল্টার দাম বেশি নয়, মাত্র ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। সে তুলনায় খরচ অনেক বেশি। এখনো ভেবে উঠতে পারছি না মাল্টা চাষ কতটা লাভবান হবে!

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি মাল্টার আবাদ হচ্ছে। পার্বত্য জেলার খাগড়াছড়িতেও মাল্টার উৎপাদন ভালো হচ্ছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের সখিপুর মধুপুর ও ঘাটাইলে এবং গাজীপুর ও ময়মনসিংহের ভালুকায় মাল্টার ভালো ফলন হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি এবং সিলেটে মাল্টার আবাদ বেশ জনপ্রিয়।

গাছে ঝুলছে মাল্টা। পরিত্যক্ত ও অনাবাদি জমিতেও এর আবাদ করা যায়। লাভও বেশি। তাই কৃষকরা মাল্টা আবাদে ঝুঁকছেন। ছবি: সারাবাংলা

গাছে ঝুলছে মাল্টা। পরিত্যক্ত ও অনাবাদি জমিতেও এর আবাদ করা যায়। লাভও বেশি। তাই কৃষকরা মাল্টা আবাদে ঝুঁকছেন। ছবি: সারাবাংলা

তবে উত্তরবঙ্গের মাল্টার মান সবচেয়ে ভালো। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ হচ্ছে। পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ে অনেকে ২০ থেকে ৩০ বিঘা জমিতেও মাল্টা চাষ করছেন। বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জকে অনেকে মাল্টার রাজধানী অভিহিত করছেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, দেশে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বারি মাল্টা-১। বর্তমানে ভিয়েতনামী বারোমাসি মাল্টার চাষও শুরু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে মাল্টা দেখা যায়, সেটি বারি মাল্টা-১। একে অনেক পয়সা মাল্টাও বলে থাকে।

যা বলছেন বিক্রেতারা

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি দোকানেই সবুজ মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে এসব মাল্টা বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফার্মগেটে ১৪ বছর ধরে ফলের ব্যবসা করেন আনোয়ার হোসেন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে আমাদের কেনা পড়ে। গড়ে একেক দিন ৫০ কেজি সবুজ মাল্টা বিক্রি হয়। দেশি ও দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা এই মাল্টার প্রতি বেশ আগ্রহ দেখান। এগুলো দেশি মাল্টা হলেও কেউ কেউ একে মোসাম্বিও বলে। মোসাম্বি মূলত ভারতীয় শব্দ।

ফার্মগেটের আরেক ফল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, সবুজ মাল্টার চাহিদা বেশ ভালোই। আমরা ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। অনেকই কিনছেন।

ঢাকার বাইরেও দেশের বিভিন্ন এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছে এই সবুজ মাল্টা। দেশের পূর্ব-দক্ষিণ প্রান্তের শেষ জেলা কক্সবাজারেও দেখা মিলছে এই মাল্টার। কক্সবাজার শহরের দোকানগুলোতে বিদেশি মাল্টা থাকলেও দেশি এই মাল্টা দেদারছে বিক্রি হচ্ছে ভ্যানে করে। কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সেগুলোর ক্রেতাও কম নেই। বিক্রেতা আব্দুল মজিদ সারাবাংলাকে জানান, কেজিতে ১০ থেকে ২০ লাভ হলেই তারা মাল্টা বিক্রি করেন। সকালে ভ্যানে ৪০ থেকে ৫০ কেজি মাল্টা নিয়ে বের হলে সাধারণত সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।

বাড়ছে লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, সারাদেশে লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ ও উৎপাদন বেড়েছে ৫ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ হয়েছিল ৩০ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন হয়েছিল তিন লাখ ৬৯ হাজার ১২২ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এই আবাদ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ২৮ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন কিছুটা কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৬১ হাজার ৮২৪ টনে। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৬৮ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন বেড়ে হয়েছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৮ টন।

মাল্টাসহ লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানোর প্রকল্পে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শনে। ছবি: সংগৃহীত

মাল্টাসহ লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়ানোর প্রকল্পে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শনে। ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৫৩ হাজার ৪৬০টি প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। লেবুজাতীয় ফল চাষের উন্নত কলাকৌশলের ওপর এক হাজার ৬২৭ ব্যাচ (প্রতি ব্যাচে ৩০ জন) কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও প্রকল্প চলাকালে প্রকল্প এলাকায় ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ আবাদ এলাকা বেড়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪৬০টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ সালে স্থাপিত ১০ হাজার ২০০টি প্রদর্শনী ও দুই ২০০টি পরিচর্যা প্রদর্শনী উৎপাদনের আওতায় এসেছে এবং ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে। ৪৯০টি মাঠ দিবসের মাধ্যমে ৪৯ হাজার জন ও ১৮১টি উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণের মাধ্যমে পাঁচ হাজার ৪৩০ জন কৃষককে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়াও সফল প্রদর্শনী পরিদর্শন করে প্রতিবেশী কৃষকরাও লেবুজাতীয় ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ২০টি হর্টিকালচার সেন্টারে লেবুজাতীয় ফলের মাতৃবাগান স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার, বিএডিসি থেকে মাল্টা, কমলা, লেবু ও বাতাবি লেবুর উন্নত জাত সংগ্রহ করে মাতৃবাগানে লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় উন্নত জাতের লেবু ফসলের চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে প্রকল্পভুক্ত ২০টি হর্টিকালচার সেন্টারে বারি মাল্টা-১, বাউ মাল্টা-৩, শৈলেশ্বরী মাল্টা, শৈলেশ্বরী কমলা, দার্জিলিং কমলা, সাদকি কমলা, বারি লেবু-৪, বিনা লেবু-১, রেড পোমেলো, ইয়েলো লেমন, জুড়ি বাতাবি লেবু-১ এবং জুড়ি বাতাবি লেবু-১ প্রভৃতি জাতের মাতৃবাগান স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোতে মাল্টার দুই হাজার ৭০৪টি, কমলার দুই হাজার ৬৪৯টি, লেবুর তিন হাজার ২২৭টি এবং বাতাবি লেবুর এক হাজার ৮৩টিসহ মোট ৯ হাজার ৬৬৩টি চারা রয়েছে। এসব নার্সারিতে লেবুজাতীয় ফসলের উন্নত চারা উৎপাদন করে উপজেলা পর্যায়ে প্রকল্পভুক্ত প্রদর্শনী ছাড়াও বাইরে বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রকল্পের তথ্য বলছে, ২০টি হর্টিকালচার সেন্টারে ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত এক লাখ ২৭ হাজার ৭২৭টি মাল্টা, ১৩ হাজার ৮০টি কমলা, ৮১ হাজার ৪০৭টি লেবু এবং ৬২ হাজার ৫৬৩টি বাতাবি লেবুর চারা উৎপাদন করা হয়েছে। মোট উৎপাদিত চারার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৭টি। আর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত পাঁচ হাজার পুরাতন লেবুজাতীয় ফল বাগানের পরিচর্যা প্রদর্শনী স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে স্থাপিত দুই হাজার ২০০টি বাগানেই ফলন বেড়েছে। ওই বাগানগুলোতে প্রায় এক হাজার ৬০০ টন ফলন হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশে লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ ও উৎপাদন আরও বহুগুণে বাড়বে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দেশি মাল্টা দেশি মাল্টার আবাদ মাল্টা মাল্টার আবাদ লেবুজাতীয় ফসল

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর