Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পোশাক রফতানির আড়ালে ৩০০ কোটি টাকা পাচার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৬

ঢাকা: পোশাক রফতানির আড়ালে ১০টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২৩৪টি চালানের বিপরীতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে বলে জানিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের যুগ্ম-পরিচালক মো. শামসুল আরেফিন খান।

তিনি জানান, রফতানি জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যচালান বিদেশে রফতানি হচ্ছে কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রাপ্রত্যাবাসিত হচ্ছে না- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহারকরে পণ্য রফতানি করেছে এবং বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নং কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থ দেশে প্রত্যাবাসিত না হয়ে সমুদয় রফতানি মূল্য বাবদ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।

অনিয়মের তদন্তে ১০টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে ১ হাজার ২৩৪টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছেবলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। রফতানি সম্পন্ন ১২৩৪টি চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ৯১২১ মেট্রিক টন। যার প্রত্যাবাসনযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার সম্ভাব্য পরিমাণ ৩,৫৩,৬৬,৯১৮ মার্কিন ডলার (৩০০ কোটি টাকা প্রায়)।

তিনি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানসমূহ টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, পোলো শার্ট, প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রফতানি দেখিয়ে অর্থ পাচার করেছে।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া ১০টি প্রতিষ্ঠানেরবিল অব এক্সপোর্টসমূহ পর্যালোচনায় বিল অব এক্সপোর্ট ও ইএক্সপিতে বর্ণিত তথ্যের মধ্যে মিল পাওয়া যায় নি। অধিকন্তু, বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সাউথ ইস্ট ব্যাংক হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, উল্লিখিত ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই ওই ব্যাংকে লিয়েনকৃত নয়। প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে উক্ত ব্যাংক সম্পর্কিত বিধায় নয়। এই ব্যাংকের মাধ্যমে বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত সেলস কন্ট্রাক্ট বা ইএক্সপি এর রফতানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হয়নি বা হওয়ার কোনো সুযোগও নেই।

জালিয়াতি করা ১০টি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে
১. প্রজ্ঞা ফ্যাশন লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে ৩৮৩টি এবং ২০২০ সালে ৮টি সহ ৩৯১টি রফতানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। রফতানি করা পণ্য চালানগুলোতে ৩০৮০ মেট্রিক টন টি-শার্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামা প্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। চালানগুলোতে রফতানি করাত পণ্যের মূল্য প্রায় ১,০৮,৪১,৬৯৯ মার্কিন ডলার (৯২,০৪,৬০,২৪৫ টাকা প্রায়)।

২. ফ্যাশন ট্রেড প্রতিষ্ঠানি ২০২০ সালে ৭৩টি, ২০১৯ সালে ১১৬টি, ২০১৮ সালে ৫৭টিসহ ২৪৬টি রপ্তানিচালান জালিয়াতি করেছে। রফতানি করা পণ্যচালানগুলোতে ১৭৭৯ মেট্রিক টন টি-শার্র্ট, প্যান্ট, ট্যাংক-টপ, পাজামাপ্রভৃতি পণ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ফলিপিাইন, নাইজরেয়িা, সঙ্গিাপুর, অস্ট্রলেয়িা, থাইল্যান্ড, সুদান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্য চালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৮০,৫১,৬৪০ মার্কিনডলার (৬৮,৩৫,৮৪,২৩৬ টাকা প্রায়)।

বিজ্ঞাপন

৩। এম.ডি.এস ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ২০২০ সালে ১৮২টি রফতানিচালানে জালিয়াতি করেছে। রফতানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে ১৩৭৬ মেট্রিক টন টি-শার্ট। প্রতিষ্ঠানের রফতানি সংশ্লিষ্ট দলিলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও ফিলিপাইনে রফতানি করা হয়েছে। চালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৫১,৮২,৫৮৬ মার্কিন ডলার (৪৪,০০,০১,৫৫১টাকা প্রায়)।

৪। হংকং ফ্যাশনস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ১৫৬টি রফতানিচালানে জালিয়াতি করেছে। রফতানি করা পণ্য চালানগুলোতে ১১৬১ মেট্রিক টন টি-শার্ট রফতানি করেছে। তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রফতানি সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, কাতার, নাইজেরিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৪৭,৮৯,৬০৬ মার্কিন ডলার (৪০,৬৬,৩৭,৫৮৬ টাকা প্রায়)।

৫। থ্রি-স্টার ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১২০টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। রফতানি করা পণ্যচালানগুলোতে ৮১৬ মেট্রিক টন টি-শার্ট রফতানি করেছে। প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, কানাডা মিসর প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। আলোচ্য পণ্যচালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৩০,৫৩,১০৮ মার্কিন ডলার (২৫,৯২,০৮,৮৬৯ টাকা প্রায়)।

৬। ফরচুন ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ৫৯টি রফতানিচালানে জালিয়াতি করেছে। রফতানি করা পণ্য চালানগুলোতে ৪৩৫ মেট্রিক টন টি-শার্ট রফতানি করেছে। অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনস, মিশর, কানাডা প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্যপ্রায় ১৫,২৪,৮১৩ মার্কিন ডলার (১২,৯৪,৫৬,৬২৩ টাকা প্রায়)।

৭। অনুপম ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৪২টি রফতানি চালানের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছে। রফতানি করা পণ্যচালানগুলোতে ১৯৫ মে. টন টি-শার্ট রফতানি করেছে। সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলজিয়াম, নাইজেরিয়া, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। পণ্য চালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ৮,৭৭,৪৭০ মার্কিন ডলার (৭,৪৪,৯৭,২০৩ টাকা প্রায়)।

৮। পিক্সি নিট ওয়্যারস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ২০টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। পণ্য চালানগুলোতে ১৭০ মে. টন টি-শার্ট রপ্তানি করেছে। সংশ্লিষ্ট দলিলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, কুয়েত, ফিলিপাইনস, নাইজেরিয়া, শ্রীলংকাপ্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ৫,৯৬,২৮২ মার্কিনডলার (৫,০৬,২৪,৩৪১ টাকা প্রায়)।

৯। স্টাইলাইজ বিডি লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ১০টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। রফতানি করা পণ্যচালানগুলোতে ৬৬.৮ মেট্রিক টন টি-শার্ট রফতানি করেছে। প্রতিষ্ঠানের রফতানি সংশ্লিষ্ট দলিলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালান ফ্রান্স, কানাডা, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, পানামা প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। পণ্যচালানগুলোতে রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ২,৫৫,৬২৯ মার্কিন ডলার (২,১৭,০২,৯০২ টাকা প্রায়)।

১০। ইডেন স্টাইল টেক্স প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালে ৮টি রফতানি চালানে জালিয়াতি করেছে। পণ্য চালানগুলোতে ৪২ মে. টন টি-শার্ট রফতানি করেছে। সংশ্লিষ্ট দলিলা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অধিকাংশ পণ্যচালানগুলো টোঙ্গা, ওমান, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে রফতানি করা হয়েছে। রফতানি করা পণ্যের মূল্য প্রায় ১,৯৪,০৮৫ মার্কিন ডলার (১,৬৪,৭৭,৮১৬ টাকা প্রায়)।

সারাবাংলা/এসজে/এমও

পোশাক রফতানি বিদেশে পাচার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর