‘অসময়ে’র তরমুজে বেশি লাভ, বেড়েছে আবাদ
৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: গ্রীষ্মের দাবদাহে পিপাসা মেটাতে এক গ্লাস তরমুজের শরবতের চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! কিন্তু সেই তরমুজের দেখা যে সেই গ্রীষ্ম ছাড়া খুব একটা মেলে না। তবে সেই দিনও ফুরিয়েছে। এখন বছরের বিভিন্ন সময়েই দেখা মিলছে তরমুজের। ভরা মৌসুমের বাইরে ‘অসময়ে’র তরমুজ আবাদে লাভ বেশি বলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার কৃষকরাও এই তরমুজ আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন।
দেশে তরমুজের প্রধান মৌসুম বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ তথা খ্রিষ্টাব্দ বর্ষপঞ্জির এপ্রিল-মে মাস। তবে এখন ছোট, লম্বাটে, ডিম্বাকার, কালো খোসা ও ভেতরে টকটকে লাল শাঁসের তরমুজ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে। ‘বারোমাসি’ কিংবা ‘গ্রীষ্মকালীন’ হিসেবে পরিচিত অমৌসুমের এই তরমুজ মার্চ থেকে জুলাইয়ের মধ্যে লাগানো যায়। এই তরমুজ হয় মাচায়।
আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথবারের মতো গত বছর প্রদর্শনী আকারে দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। ওই আবাদে মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও কৃষক লাভ পেয়েছিলেন এক লাখ টাকার বেশি। প্রদর্শনী আবাদে সফল্য মেলায় এ বছর পুরো উপজেলায় এই ফসলের আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ একরেরও বেশি জমিতে।
ভোলাহাটের তরমুজ চাষি মো. আমিরুল ইসলাম দুই বিঘা জমিতে এই তরমুজ আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, আমি একজন সবজি চাষি। গত বছর জোর করে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করায় উপজেলা কৃষি অফিস। এক বিঘা জমি থেকে খরচ বাদে এক লাখ টাকার বেশি আয় করেছি। ওই বছরই একই জমিতে একই মাচায় দ্বিতীয়বার তরমুজ চাষ করি এবং তাতেও অনেক লাভ হয়। ফলে এবার আমি দুই বিঘা জমিতে এই তরমুজ চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ফল ভালো আছে। আশা করছি এবারো ভালো লাভ পাব।
আরেক কৃষক মো. আনসারুল ইসলাম বলেন, এ তরমুজ মাত্র ৬০ দিনে বিক্রির উপযুক্ত হয়ে যায়। এত অল্প সময়ে অন্য কোনো ফসলে এত বেশি লাভ হয় না । ফলে আমি এবার এক বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। সামনের বছর আরও বেশি জমিতে এই তরমুজ আবাদ করব।
কৃষক আশরাফুল গত বছরের সামান্য জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদে লাভের অঙ্ক দেখে এ বছর আবাদ বাড়িয়ে তিন বিঘা করেছেন। আশরাফুল বলেন, অনেক ফল এসেছে। ফলের ভারে মাচা ভেঙে পড়ছে। আশা করছি লাভবান হতে পারব। প্রথমে অসময়ে তরমুজ চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়ার ভয় দেখালেও এখন অনেকেই বলছে সামনের বছর তারাও তরমুজ চাষ করবেন।
এই তরমুজ আবাদে সাফল্যের পেছনে কৃষি বিভাগকেও ধন্যবাদ দিচ্ছেন কৃষকরা। তেমনই এক কৃষক মো. মুনিরুল ইসলাম বলেন, নতুন ফসল চাষ একটু কঠিন। তবে কৃষি বিভাগ সবসময় আমাদের পাশে ছিল এবং পরামর্শসহ সব ধররে সহযোগিতা করেছে। তাই আশা করছি আমি ভালো ফলন পাব।
অসময়ের তরমুজের আবাদ ক্রমেই বাড়বে আশাবাদ জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সুলতান আলী বলেন, গত বছর মাত্র দুই বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। এবার পাঁচ একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। আগামী বছর আবাদ আরও বাড়বে। কারণ গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক। অসময়ে তরমুজের দামও ভালো পাওয়া যায়। পাইকাররা জমিতে গিয়ে তরমুজ নিয়ে যান। ফলে তরমুজ বাজারজাত নিয়ে কৃষককে চিন্তা করতে হয় না।
সুলতান আলী আরও বলেন, অল্প সময়ে ফলন হয় বলে একবার জমি তৈরির পর একই জমিতে একই খরচে দুই বার তরমুজ চাষ করা যায়। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের ফসল চাষ এবং কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তারে কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকের পাশে আছে এবং থাকবে।
সারাবাংলা/টিআর