Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এবার মশা ‘মারতে’ ৬০ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের প্রস্তাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫২

ঢাকা: এর আগে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাস চাষ, খিচুরি রান্না শেখাসহ নানা প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফরে যাওয়ার প্রস্তাব যায় পরিকল্পনা কমিশনে। এমনকি সেই প্রস্তাব পাসও হয়। সেই ধারাবাহিতকায় এবার মশা নিধনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় ৬০ কর্মকর্তার জন্য বিদেশ সফরের প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিডি)। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছ ১০ কোটি টাকা। ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর পলিসি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে গবেষণা করতে বিদেশে যাবেন এসব কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

এই কর্মকর্তাদের অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চায়না, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা ব্রাজিলে ভ্রমণে যাওয়া লাগতে পারে। ‘ইম্প্রুভমেন্ট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। অনুমোদন পেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে এলজিডি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানান, সম্প্রতি প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। সেখানে নানা বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ২০টি পাবলিক টয়লেট খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি টাকা। আর একটি ফগার মেশিন কিনতে ব্যয় সংস্থান করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। অথচ বাজারে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ভালো মানের ফগার মেশিন পাওয়া যায়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পে বিদেশ ভ্রমণের বিষয়টি ঠিক নয়। মূলত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে রিসার্চ করার খাতে টাকা রাখা হয়েছে। যেসব দেশ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সফল হয়েছে সেসব দেশে রিসার্চ করতে যাবেন কর্মকর্তারা। আগে দুই মাস ডেঙ্গু থাকতো, কিন্তু এখন সারা বছর দেখা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এই সময়ে তাপমাত্রা বাড়ছে। এ বিষয়ে রিসার্চ করা হবে।

সূত্র জানায়, পিইসি সভায় একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে প্রায় তিন কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু পাবলিক টয়লেট-ই নয়, এমন নানা ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। জনবহুল জায়গায় ওয়াটার পয়েন্ট স্থাপন, মশা মারার ফগার মেশিন কেনা বা ময়লা সরানোর ট্রলি কেনাসহ প্রকল্পটির অধিকাংশই কেনাকাটা নির্ভর। এক হাজার ২৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্পে এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০টি মোবাইল বা পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ, একেকটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে খরচ হবে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অথচ দেশের সবচেয়ে বেশি টয়লেট নির্মাণ করা স্থানীয় সরকার বিভাগেরই আরেক প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই) ২০ থেকে ২২ লাখ টাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করছে। ঢাকা শহরে সেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা লাগার কথা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটিতে মশা মারার ধোঁয়া ছাড়ার ১০০টি ফগার মেশিন কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। অর্থাৎ, একেকটি ফগার মেশিনের দাম পড়বে পাঁচ লাখ টাকা করে। অথচ বাজারে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে এসব ফগার মেশিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা সরানোর জন্য ৪০টি হুইল ব্যারো বা ময়লা স্থানান্তরের ট্রলি কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ট্রলি কিনতে খরচ পড়ছে সাড়ে সাত লাখ টাকা। অথচ এসব ট্রলি অন্য প্রকল্পে মাত্র ২০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বিদেশে প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রকল্প ঋণের অর্থায়নে স্থানীয় প্রশিক্ষণ বাবদ ৯৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে কোন বিষয়ে কত জনকে, কাদের কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি। দেশে মশা নির্মূল ও স্বাস্থ্যখাতের কাজ বছরের পর বছর ধরে চলে এলেও ঋণের অর্থায়নে ১৩ জন পরামর্শকের পেছনে ৩৯ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। এত পরামর্শক ও তাদের পেছনে ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে পিইসি সভায়।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

৬০ কর্মকর্তা গবেষণা বিদেশ সফরের প্রস্তাব মশা নিধন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর