Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাজেকে পর্যটক সুবিধা বাড়াতে আসছে প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি পর্যটন সমৃদ্ধ পার্বত্য এলাকার উন্নয়নে সরকার জোর দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সাজেকে পর্যটকদের সুবিধা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য সাজেক পর্যটন এলাকাসহ রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাথুরে এলাকায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৩১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনে বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (ডিপিএইচই)। প্রস্তাবটি নিয়ে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকের কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাজেকে পর্যটন এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এটি দেশের সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেক উপত্যকা দেশের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান। সাজেক ভ্যালি রাঙ্গমাটির চাঁদ নামেও পরিচিত। সাজেকে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার পর্যটক আসে। সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটির সময় এখানে প্রায় আট হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যটক বেড়াতে আসে। এখানে প্রায় ১৫০টির অধিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসী ও হোটেল রিসোর্ট পরিচালনাকারীদের নিয়ে এই ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার লোকের স্থায়ী বসবাস।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এই সাজেক ভ্যালিতে নেই কোনো পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। হোটেল বা রিসোর্টগুলো পাঁচ কিলোমিটার দূরে প্রায় আড়াই হাজার ফুট নিচে অবস্থিত একটি ছড়া থেকে জিপের মাধ্যমে এক হাজার লিটার বা দুই হাজার লিটার পানি নিয়ে আসে। সেই পানি হোটেলে স্থাপিত ট্যাংকগুলোতে মজুদ করে পর্যটকদের দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটায়। আর এই পানি নিয়ে আসার প্রক্রিয়াও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাছাড়া শুস্ক মৌসুমে এই ছড়ায় পানির প্রবাহ একবারেই কমে যায়। আর বর্ষাকালে পানি অত্যাধিক ঘোলা থাকে। কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়াই জিপে বহন করা পানি দিয়ে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের ও স্থানীয় জনগণের ব্যবহারের পানির প্রয়োজন মেটানো হয়। পান করতে গেলে পর্যটকদের সম্পূর্ণভাবে বোতলের পানির উপরই নির্ভর করতে হয়। স্থানীয় জনগণ পাহাড়ে ঝিরিতে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করে পানীয়জলের চাহিদা মেটায়। এই পানি ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদজনক।

বিজ্ঞাপন

ভৌগলিক অবস্থার জন্য রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকা এবং সাজেকে অধিকাংশ এলাকা পাথুরে হওয়ায় নলকূপ স্থাপন সফল হয় না। সাজেকে পানি সরবরাহেরর জন্য ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ দুটি উৎস থেকেই পানির প্রাপ্তি খুবই অপ্রতুল। পাথুরে কঠিন শিলা স্তর হওয়ায় নলকূপ স্থাপন খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পানিবাহিত বালিস্তর না পাওয়ায় নলকূপ স্থাপন সফল হয় না। সাজেক উপত্যকাটি সম্পূর্ণ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এবং অত্যন্ত উচুঁতে হওয়ায় পানির স্থিতি তল অনেক নিচে।

যা রয়েছে প্রস্তাবিত প্রকল্পে

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১২ কিলোমিটার সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ কোটি ৬৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ছয় কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যাসের বিতরণ পাইপলাইন স্থাপনের জন্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ১০টি টাইপ-বি পাবলিক টয়লেট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি টাইপ-বি টয়লেটের একক ব্যয় প্রাক্কলনধরা হয়েছে ১০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ টয়লেট নির্মাণ করা হবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) আছে।

প্রকল্পের আওতায় ছয়টি পরীক্ষামূলক নলকূপ স্থাপনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তিনটি নলকূপ স্থাপনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিন কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হবে। যেখানে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় ৬১টি জিএসএফ নির্মাণ ব্যয় বাবদ ২২ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে পিইসি সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে।

 

সূত্র জানায়, সাজেকে একটি মিনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। এর পর সেখানে যে ছড়াটি আছে সেখান থেকে পানি উত্তোলন করে কয়েকটি বুস্টিং পাম্প দিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সেই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা যাবে। অন্যদিকে, যেহেতু ছড়াটিতে শুস্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যায়, সেহেতু ওই সময় পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পরীক্ষামূলক নলকূপ এবং উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করে পানীয় জলের চাহিদা মেটানো হবে। অন্যদিকে, রাঙ্গামাটি জেলার পাথুরে এলাকার প্রাকৃতিক ঝর্ণা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

পর্যটক পর্যটন প্রকল্প রাঙ্গামটি সাজেক সুপেয় পানি স্যানিটেশন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর