Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবেন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৩

ফাইল ছবি

ঢাকা: সনাতন সম্প্রদায়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারা কেন নিজেদের সংখ্যালঘু বলবেন? এখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কোনো কথা নাই। সকল নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। সংখ্যালঘু বলে নিজেকে ছোট করবেন না।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণভবনে শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবনের খোলা মাঠে প্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রী এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের দেশ আরও এগিয়ে যাবে, আরও উন্নত হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে সেটা লেখা ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ১২ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছিল।’

ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই স্লোগান আওয়ামী লীগের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মাষ্টমী উৎসব করার জন্য আপনাদের এখানে দাওয়াত দিয়েছি। আপনারা সেই দাওয়াত কবুল করেছেন, এসেছেন। আমি আগেই বলেছি, আমার গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। কারণ, আমরা সব ধর্মের মানুষ উৎসবের সাথে শামিল হতে চাই এবং একসাথে তা পালন করি। আমরা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।’

স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে বিএনপির শাসনামলে বারবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির ভেঙে দিয়েছিলে, পুড়ে দিয়েছিল। আমি সরকারে আসার পর সেই মন্দির নিজে তৈরি করে দিয়েছি। সেখানকার জমি-পুকুর সংস্কার করে দিয়েছি। হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। সেখানে সিড মানিও দিয়েছি এবং ট্রাস্টে প্রতিবছর টাকা দিই। যার মাধ্যমে সমস্ত জায়গায় বিভিন্ন মন্দির সংস্কারের জন্য কাজ করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে তিনটি করে মন্দির সংস্কারের জন্য ১০ লাখ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। পৌরসভায় তিনটি করে মন্দিরের জন্য ১৫ লাখ করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও বড় উপজেলা হলে সেখানে তিনটা থেকে ৫টা পর্যন্ত মন্দির সংস্কার করা হচ্ছে।’ পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পুরনো মন্দিরগুলো দর্শনীয় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সভাপতি, ‘আমাদের সবসময় একটাই লক্ষ্য, দেশের মানুষ সমানভাবে কাজ করবে, থাকবে। সকলে অধিকার নিয়ে থাকবে। আমি একটা কথা সবসময় আপনাদের বলব, যারা এই মাটিতে জন্ম নিয়েছেন, তারা এই মাটিরই সন্তান। এই মাটিরই নাগরিক হিসেবে আপনাদের অধিকার। আর সেভাবেই আপনারা বসবাস করবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর পাই না? আপনারা কেন নিজেদের সংখ্যালঘু বলবেন? এখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কোনো কথা নাই। সকল নাগরিক সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। সংখ্যালঘু বলে নিজেকে ছোট করবেন না। সেটা কেন করবেন আপনারা? আপনারা তো এই দেশের মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধে যখন পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, তখন তো কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান সেই বিভেদ ছিল না। ওই ঘাতকের বুলেটে সব রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেছে। সব রক্তের রং কিন্তু লাল।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে ফের ধর্ম নিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কাজেই আমি এটা চাই, সবাই যার যার ধর্ম যথাযথভাবে পালন করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে অনেক বৈষম্য ছিল, এখন আর নেই। আমরা কে দক্ষ সেটাই দেখি। প্রমোশন দক্ষতা দেখেই দিই। কে কাজ করে সেটা দেখেই করি। কার কার যোগ্যতা আছে তা দেখেই মূল্যায়ন করি। এখানে কোনো কিছু ধর্মীয়ভাবে চিন্তা করা হয় না। কোথাও যদি কোনো ধর্মের লোক কম থাকে খুঁজে বের করে সেখানে নিয়ে আসি। যাতে বৈষম্য না হয়।’

অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল করে আপনারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে করে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইসলাম ধর্মে হেবা আইন আছে। সেখানে আমাকে নির্দিষ্ট আকারে টাকা দিতে হয়। কিন্তু আপনাদের হিন্দু ধর্মে সেটা ছিল না। আমরা সেই হেবা আইন হিন্দু ধর্মের জন্যেও করে দিয়েছি। কারণ, আপনার সম্পত্তি আপনি আপনার সন্তানকে দিয়ে যাবেন। আমরা (মুসলমান) যে অধিকারটা ভোগ করি হেবা আইনে। ঠিক সেই অধিকারটাও আমরা হিন্দু ধর্মসহ অন্যন্যা ধর্মের মানুষদের জন্য করে দিয়েছি। যাতে আপনার সম্পত্তি অন্য কেউ নয়-ছয় করতে না পারে, সুরক্ষিত থাকে। আপনার উত্তরাধিকার যা তার অধিকার পায়।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, প্রতিটি ধর্মের ধর্মগুরু একই কথা বলেছেন। সবার উপরে মানুষ সত্য। মানবধর্ম এখানে বড়। একেকজন নিজের মতো করে সেটা পালন করে। আসলে মূল কথা তো একই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নবী করিম হযরত মুহম্মদ (সা.) বিদায় হজে বলে গেছেন, সকল ধর্মের প্রতি সমান সম্মান দেখাতে হবে। কাজেই আমি এটা বলব, আপনারা কখনো নিজেদের ছোট করে দেখবেন না। আমরা সেভাবে দেখি না। আমাদের কাছে সবাই সমান। অন্তত আওয়ামী লীগ এটা বিশ্বাস করে। আর সেই চেতনা নিয়েই তো আমাদের স্বাধীনতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন-সার্বভৌম এই বাংলাদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিস্টান যত ধর্মের লোকই থাকুক না কেন, সবাই সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। সেটাই আমরা করে যাচ্ছি। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। যেমন আমরা আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বাস করি, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। এটাও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিখিয়ে গেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় চেষ্টা করি বাংলাদেশে যেন ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকে। একটা সামাজিক সম্প্রতি যেন আমরা ধারণ করে চলি। যেখানে কাউকে ছোট না করে সবাই সমান অধিকার নিয়ে চলতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে যারা কেবল দেশের ভেতর নয়, বিদেশে গিয়েও বাংলাদেশের বদনাম করে। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোনো মানুষ গৃহহীন-ঠিকানাবিহীন থাকবে না বলেও অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যালঘু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর