Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিভাজন প্রকাশ্যে, কেন্দ্র-ইউনিটের বিরোধে জেরবার ছাত্রলীগ

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৪২

ঢাকা: দেশে শিক্ষার্থীদের অন্যতম বৃহৎ ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর মতবিরোধ নতুন নয়। তবে সম্প্রতি ছাত্রলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘ইতিহাসের বৃহত্তম’ সমাবেশ ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ছাত্রলীগের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এসব ইউনিটের নেতাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী এ ধরনের সমাবেশে এই ইউনিটগুলোর শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার প্রথা থাকলেও এবার তাদের সেই ‘অধিকার থেকে বঞ্চিত’ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। শেখ হাসিনা সরাসরি যাদের নির্বাচিত করেছেন, তাদের কাউকেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য এসব নেতাদের।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ ছাত্রলীগের ইউনিটগুলোকে ঢাবি ছাত্রলীগের আওতায় আনা, গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র ও ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য এই মতবিরোধকে সবার সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের বক্তব্য পেতে একাধিকবার কয়েকভাবে চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) একটি গণমাধ্যমকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেছেন, সময় স্বল্পতার কারণে ওই সমাবেশে সবাইকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যায়নি। এদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় বলছে, ছাত্রলীগের মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব কাম্য নয়।

কী হয়েছিল ছাত্রসমাবেশে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গত ১ সেপ্টেম্বর ছাত্রসমাবেশ আয়োজন করে ছাত্রলীগ। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, রীতি অনুযায়ী এমন কর্মসূচিতে ঢাবি ছাত্রলীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অর্থাৎ ছয় নেতা বক্তব্য দিয়ে থাকেন। ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময় এমন একটি কর্মসূচিতেই প্রধানমন্ত্রীর সামনে বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

বিজ্ঞাপন

ঢাবি এবং মহানগর ছাত্রলীগের দুই কমিটির নেতারা বলছেন, এবারের সমাবেশে ওই রীতির ব্যত্যয় ঘটে। শেষ পর্যন্ত এই ছয়জনের কেউই ওই সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পাননি। অথচ গুরুত্ব বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাবি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ নেতৃত্বও বাছাই করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে এসব কমিটির শীর্ষ নেতাদের ‘ছোট’ করা হয়েছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন এসব কমিটির নেতারা।

সমাবেশের পর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব দায়িত্ব পায় গত বছরের ডিসেম্বরে। ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের ১২ দিন পর ২০ ডিসেম্বর রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি পদে সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নাম ঘোষণা করা হয়। একই সময়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি পদে মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক পদে তানভীর হাসান সৈকত; ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পদে রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাগর আহমদে; এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে রাজীবুল ইসলাম বাপ্পী ও সাধারণ সম্পাদক পদে সজল কুণ্ডুর নাম ঘোষণা করা হয়।

এসব কমিটি ঘোষণার আট মাস না পেরোতেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটগুলোর, সর্বশেষ সমাবেশের পর যা প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। ওই সমাবেশের চার দিন পর ৫ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বিভিন্ন বিষয়কে ইস্যু করে ফেসবুকে ‘ইঙ্গিতবহ’ স্ট্যাটাস দেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন। স্ট্যাটাসে ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি’সহ বিভিন্ন ইঙ্গিত দেন তিনি।

অনেকটা তাৎক্ষণিকভাবেই ওই স্ট্যাটাস শেয়ার করেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রলীগের শীর্ষ চার নেতা। এরপর থেকেই মূলত কেন্দ্রের সঙ্গে এই ইউনিটগুলোর ‘সম্পর্কের টানাপোড়েনে’র বিষয়টি প্রকাশ্যে আলোচনায় আসে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতির স্ট্যাটাস কারও বিরুদ্ধে বা কারও সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না— আমার জানা নেই। আমি বিশ্বাস করি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নাম্বার ইউনিট ঢাবির সভাপতি হিসেবে শয়ন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সারাবাংলাকে বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আমাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠান ছিল ৩টা ৪৫ মিনিট থেকে ৬টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ‍দুই ঘণ্টা ২৫ মিনিটের। আমাদের বলা হয়েছিল, সময়স্বল্পতার কারণে আমরা তিন থেকে চার মিনিট করে বক্তব্য দিতে পারব আর কেন্দ্রের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য দেবেন আট মিনিট করে। কিন্তু আমরা বক্তব্য দিতে পারিনি।’

শয়নের দাবি, কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই নেতা সাদ্দাম ও ইনান নিজেদের বক্তব্য প্রলম্বিত করেন। আবার সমাবেশ সফল করতে রাত-দিন কাজ করে গেলেও সমাবেশ শেষের চার দিনেও কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করার ‘কার্টেসি’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ দেখায়নি।

শয়ন বলেন, ‘তারা নিজেদের বক্তব্য প্রলম্বিত করেছেন। তারা এটি কেন করেছেন, বলতে পারব না। মাইকে অন্তত ঘোষণা দিতে পারতেন যে সময়স্বল্পতার কারণে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। সেটিও তারা করেননি। কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্মসূচির পর চার দিন অর্থাৎ ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলেননি। তারা কেন এগুলো করেছেন, কেন তারা কার্টেসিটুকু দেখাননি— এসব বিষয় তারাই ভালো বলতে পারবেন।’

আওয়ামী লীগ সভাপতির সামনে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত।

সৈকত বলেন, ‘কেন আমাদের এড়িয়ে চলা হচ্ছে, আমরা জানি না। সত্যিই জানি না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে বক্তব্য দিতে পারা রীতি অনুযায়ী আমার অধিকার, আমার হক। শেখ হাসিনার প্রতিটি কর্মীর সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো তার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারা। সেই অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

একই ধরনের আক্ষেপ ও অভিযোগ জানিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কর্মসূচি সফল করেছি। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের সঙ্গে সৌজন্যবোধও দেখায়নি। এখনো তারা বিষয়টি (বক্তব্য দিতে না পারা) ক্লিয়ার করার প্রয়োজন মনে করেনি। সাদ্দাম ভাই নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন এমন কর্মসূচিতে বক্তব্য দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। কেউ অতীত ভুলে গেলে কীভাবে হবে?’

অধিকার ক্ষুণ্নের কথা বললেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজীবুল ইসলাম বাপ্পীও। তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরে আর যোগাযোগও করা হয়নি। বলা হয়নি কেন এমন হলো। আমি একটি কথাই বলতে চাই— আমাদের যে আটজনকে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্বাচন করেছেন, তাদের কাউকে ছোট করে অন্যদের বড় করার সুযোগ নেই।’

কেন্দ্রের সঙ্গে ঢাবি ছাত্রলীগের টানাপোড়েন চরমে

গত বছর ডিসেম্বর মাসে কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ‘সমন্বয়হীনতা’র প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে অনেকটা মাঝপথেই কর্মসূচি ছেড়ে যান ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এ ছাড়া শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক হলসহ বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় নিজেদের ‘বিপক্ষে’র কর্মীদের অব্যাহতি ও বহিষ্কারের মতো শাস্তি দেওয়ার অভিযোগও আলোচনায় আসে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ‘নিজেদের বলয়ের সুবিধাজনক’ ব্যক্তিদের পদায়নের অভিযোগও চাউর হয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন মহলে।

ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক লেজুড়বৃত্তিক’ কার্যকলাপের অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, এতে সংগঠনেরই ক্ষতি হবে। কেন্দ্রের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে সমাধানের পরিবর্তে সমস্যা জিইয়ে রাখার অভিযোগও তুলেছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে ইঙ্গিত করে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, হলে থাকা অবস্থায় যেন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পরিবেশ ব্যাহত না হয়। সেভেন সিটের বড় গাড়ি নিয়ে ঘুরলাম, পেছনে কয়েক শ বাইক ঘুরছে, হর্ন দিচ্ছে প্রতিনিয়ত— এগুলো যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। আমি কোনো আবাসিক হলে অবস্থান করলে তার পরিবেশ বজায় রাখা আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ডিজার্ভ করে, সে অনুযায়ী রাজনীতি করা উচিত।’

শয়ন আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। তিনি যখন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন, তখন তিনি বাঘ নির্বাচন করেন। অথচ এদিকে এখন দেখা যায়, নেতারা বিড়াল নির্বাচন করেন। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ঢাবি ছাত্রলীগকে ‘নষ্ট’ করার চেষ্টা করছেন দাবি করে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘ঢাবি ছাত্রলীগকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হচ্ছে না। অথচ ঢাবি ছাত্রলীগ ছাত্রলীগের হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড না থাকলে বাঁচা যায় না। তিনি যা করছেন, সেটি হৃৎপিণ্ডকে নষ্ট করার চেষ্টা। এ কর্মকাণ্ড আত্মঘাতী।’

সৈকত আরও বলেন, ‘নিজের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি জরুরি। তিনি ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন। সুতরাং সমস্যা যা দেখা দিচ্ছে, সেগুলো তিনি বোঝেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ঘটনা হচ্ছে উল্টো। তিনি ঢাবি ছাত্রলীগকে ভয় পাচ্ছেন!’

ঢাবির হলগুলো নিয়েও দ্বন্দ্ব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ইউনিটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অধীন হলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী প্রার্থীও হলগুলোতে থাকেন। মূলত নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার শীর্ষ নেতারা ‘সমঝোতা’র ভিত্তিতে নিজেদের প্রার্থীদের হল নেতৃত্বে আনেন। তবে ‘অন্ধকার সময়ের সংস্কৃতি’ আখ্যা দিয়ে এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।

ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি শয়ন বলেন, ‘ঢাবি ছাত্রলীগে আমরা কোনো গ্রুপিং চাই না। হলগুলোর কমিটিতে যোগ্যতম কর্মীদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করতে চাই। হলগুলোতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ বা বলয় তৈরি ঢাবি ছাত্রলীগের স্বাতন্ত্র্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ।’

‘আমরা কথা দিতে চাই, এই সংস্কৃতি পরিবর্তন হলেও অন্যদের (কেন্দ্রীয় দুই নেতা) সঙ্গে রাজনীতি করার কারণে কাউকে বঞ্চিত করা হবে না। যোগ্যতম প্রার্থীকেই আমরা অগ্রাধিকার দেবো।’

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘এগুলো ছাত্রলীগের অন্ধকার সময় নামে পরিচিত সময়ে তৈরি কিছু রীতি। এগুলো তো এখন থাকার কথা না। ছাত্রলীগে এখন কোনো সিন্ডিকেট নেই। ছাত্রলীগের একমাত্র নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আর কেউ না। এসব রীতি আমরা ভাঙব।’

অধিভুক্ত সাত কলেজের ইউনিটগুলো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী?

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজের ছাত্রলীগের ইউনিটিগুলোর রাজনীতি নিয়ে ‘নতুন’ আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। এই ইউনিটগুলো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আওতামুক্ত করে ঢাবি ছাত্রলীগের আওতাভুক্ত করার রব ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

সম্প্রতি তিতুমীর কলেজে ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়া ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগসহ অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখাকে ঢাবি ছাত্রলীগের আওতাভুক্ত করার দাবি উঠলে একদিন পরই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতৃত্ব নির্বাচনে সিভি আহ্বান করলে আলোচনা থেমে যায়। মূলত ওই সময় থেকেই সাত কলেজের ছাত্রলীগ ইউনিটগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে।

এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে বিবেচনাধীন আছে বলে জানিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। তারা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ওবায়দুল কাদের তাদের জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

সরকারি সাত কলেজের ইউনিটগুলো ঢাবি ছাত্রলীগের আওতায় আনার প্রসঙ্গে মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চান যে সাত কলেজের একাডেমিক মান যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি হয়। এ কারণেই তিনি এগুলোকে ঢাবির অধিভুক্ত করেছেন। কয়েকদিন আগেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কিছু সমস্যাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করেছে। নানা সংকট-সমস্যা নিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে। তারা আমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন। যেহেতু বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে রয়েছে, তাই আমরা এ বিষয়ে আপাতত চুপ রয়েছি।’

তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘ঢাবিতে সুন্দর রাজনীতির যে পরিবেশ রয়েছে, তা অধিভুক্ত সাতটি কলেজে থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও সুন্দর হতো।’ তার দাবি, অধিভুক্ত সাতটি কলেজ ইউনিটকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সময় দিতে পারছে না। তাছাড়া ওই ইউনিটগুলোর নেতাকর্মীরাও ঢাবি ছাত্রলীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংকট-সমস্যা নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগ দ্রুতই মতবিনিময় সভা করবে বলে জানান সৈকত।

ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের এসব অবস্থানের ঠিক বিপরীতে কেন্দ্রের অবস্থান। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সাত কলেজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আওতায় থাকবে। ইনান গণমাধ্যমকে বলেন, সাত কলেজ বরাবরই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ইউনিট হিসেবে ছিল, এখনো আছে। সবসময়ই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাদের কমিটি দিয়ে থাকে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

গঠনতন্ত্রের সংস্কার চাইবে ঢাবি ছাত্রলীগ

বহিষ্কার ইস্যুতে গঠনতন্ত্রের সংস্কার চাইবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউকে স্থায়ী বহিষ্কারের ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হাতে রয়েছে। এই ধারারই পরিবর্তন চান ঢাবি ছাত্রলীগের নেতারা।

ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এখন থেকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা নিয়ে চলবে। আমার যদি মনে হয় সংক্রমণ ঠেকাতে টিউমার কাটতে হবে, আমরা অবশ্যই কাটব। গঠনতন্ত্রে এই বিষয়গুলো কারও কারও সুবিধার জন্য সংযোজন করা হয়েছিল। অনেকে এগুলোকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখন তো কালো অধ্যায় আর নেই। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা ছাড়া অন্য কারও কথা আমরা শুনব না।’

ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থায়ী বহিষ্কারের ক্ষমতা কেবল কেন্দ্রের হাতেই রয়েছে। তবে ঢাবি ছাত্রলীগের দাবি, গঠনতন্ত্রের এই বিষয়টি যথাযথভাবে মানেন না কেন্দ্রীয় নেতারা। গঠনতন্ত্রের এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তোয়াক্কাও করে না। তারা দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেন। দুজনে মিলে তো এমন সিদ্ধান্ত হয় না। এসব ব্যাপার আমরা আরও পর্যালোচনা করব।’

এদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে অন্য ইউনিটগুলো সম্পর্কের এমন পরিস্থিতি কাম্য নয় বলছেন ছাত্রলীগকে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় চার নেতার একজন বি এম মোজাম্মেল হক। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা না। আমি তাদের সবার সঙ্গে কথা বলব। কথা বলার পর বিষয়টি জানতে পারব। তারপর জানাব আসলে কী হচ্ছে।’

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ছাত্রলীগ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের দ্বন্দ্ব ছাত্রলীগের সভাপতি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ঢাবি ছাত্রলীগ তানভীর হাসান সৈকত মাজহারুল কবির শয়ন রাজীবুল ইসলাম বাপ্পী রিয়াজ মাহমুদ শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সজল কুণ্ডুর সাগর আহমদে সাদ্দাম হোসেন

বিজ্ঞাপন

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর