বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একমত দিল্লি-ঢাকা
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৫৮
ঢাকা: বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একমত হয়েছেন দুই দেশের সরকারপ্রধান। বৈঠক শেষে টুইট করেও বাংলাদেশ-ভারতের এই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন ভারতনেতা নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে এই বৈঠক হয়েছে। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা) নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের তথ্য জানিয়ে টুইটারে পোস্ট দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় সংযোগ, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও একান্ত বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিতে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মোদি।
হাসিনা-মোদির দ্বিপক্ষীয় এবং একান্ত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানান, হাসিনা-মোদি বৈঠকে তিস্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। কিছুক্ষণ তারা একান্তে আলোচনা করেছেন। এই একান্ত আলোচনায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
মোমেন আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করেন। জি২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণের জন্য তিনি নরেন্দ্র মোদিকে বিশেষভাবে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
গ্লোবাল সাউথের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে জি২০তে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদিও জি২০তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য হাসিনাকে সাধুবাদ জানান।
মোমেন বলেছেন, শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার ভারত। দেশটি থেকে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধও তিনি মোদিকে করেছেন।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগ জানিয়েছে, দুই সরকারপ্রধান দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে একমত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা ক্ষেত্রে প্রভূত দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। এ নিয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রভূত উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যকার অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
ভারতের সঙ্গে ৩ সমঝোতা স্মারক
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের প্রাক্কালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি বা সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা নিয়ে যৌথভাবে কাজ করার জন্য। অন্যদিকে শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক খাতে দুই দেশের সহযোগিতা জোরদারে ‘সংস্কৃতি বিনিময় কর্মসূচি ২০২৩-২৫’ শীর্ষক একটি সমঝোতা সই হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের মেধ্য লেনদেন সহজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতের এনপিসিআই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টেস লিমিটেডের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সকালে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পথে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নয়াদিল্লি অবতরণের পর বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতি দর্শনা জারদোশ। শুক্রবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী -২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতেই তার এ সফর।
এবারের জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৯টি দেশকে অতিথিরাষ্ট্র হিসেবে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজন দেশ ভারত। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে—মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিংগাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নানা সম্পর্কের ভিত্তিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর জি-২০-এর দুটি পৃথক অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/একে