জি২০ নেতাদের ঘোষণায় যা আছে
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২২
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে চলছে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন। ইউক্রেন প্রসঙ্গে সদস্য দেশগুলোর মতপার্থক্যে যৌথ ঘোষণা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। তবে শেষ পর্যন্ত কূটনীতিকদের প্রচেষ্টায় ভাষাগত পরিবর্তন এনে যৌথ ঘোষণার খসড়া সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। আর এটিকে দিল্লির কূটনীতিক সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
ইউক্রেন প্রসঙ্গ
জি২০ যৌথ ঘোষণায় ইউক্রেন প্রসঙ্গে বড় ধরনের মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আয়োজক দেশ ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে ইউক্রেন নিয়ে রচিত অনুচ্ছেদে ভাষাগত পরিবর্তন এনে ঘোষণাটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ইউক্রেন সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদগুলোতে বলা হয়েছে যে, ‘যেকোনো রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অধিগ্রহণের জন্য হুমকি বা শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।’ এতে আরও বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি বা ব্যবহার অগ্রহণযোগ্য।’
রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়েছে এমন কয়েকটি অঞ্চলকে একে অন্যের বলে দাবি করে আসছে। জি২০-এর ঘোষণাপত্রে এই বাক্যগুলো রুশ এবং ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র উভয়ের জন্যই গ্রহণযোগ্য। কেননা উভয় পক্ষই মনে করে অপরপক্ষ অন্যায়ভাবে অঞ্চল দখল করে রেখেছে।
উল্লেখ্য যে, জি২০ ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানের আদর্শ প্ল্যাটফর্ম নয়। তবুও ঘোষণায় কৃষ্ণ সাগর শস্য চুক্তি ফের কার্যকর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘোষণাটিতে স্পষ্টভাবে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয় দেশকেই শস্য, খাদ্যসামগ্রী এবং সার নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবহনের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
টেকসই প্রবৃদ্ধি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার সকালে প্রতিনিধিদের বলেন, গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে শীর্ষ সম্মেলনে প্রবেশ করেছেন তিনি।
তার এই ঘোষণা অনুযায়ী, সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ‘প্রবৃদ্ধির বিকাশ, বৈষম্য হ্রাস এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্বিন্যাসের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
উন্নয়নশীল দেশগুলোর কিছু ক্ষেত্রে তাদের ঋণ পুনর্গঠন করা উচিত। এবং এই দেশগুলোকে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায্য, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত, টেকসই এবং স্বচ্ছ বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাতে প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত।
ঘোষণাপত্রে ‘জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক এবং পুষ্টিকর শস্য’ নিয়ে গবেষণা বাড়ানো এবং খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী সার উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়েছে।
জলবায়ু এজেন্ডা
ঘোষণায় প্যারিস চুক্তি এবং এর তাপমাত্রা হ্রাসের লক্ষ্য ‘পূর্ণ ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের’ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রাক-শিল্পযুগের তুলনায় তাপমাত্রা স্তর দুই ডিগ্রি পর্যন্ত উপরে রাখতে ‘অর্থপূর্ণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ’ প্রয়োজন। যার মধ্যে উচ্চ কার্বন কর, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি বন্ধ করা এবং কয়লা বিদ্যুৎকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করারা কথা বলা হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
তবে এই লক্ষ্যে পৌঁছানো ব্যয়বহুল। ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে। যেখানে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্যে নামিয়ে আনতে ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো বিশ্বে প্রতি বছর ৪ ট্রিলিয়ন ডলার খরচের প্রয়োজন হবে।
সারাবাংলা/আইই