ওয়াসার গবেষণা ইনস্টিটিউট: পরামর্শ নিতেই যাবে ১০৬ কোটি টাকা
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০০
ঢাকা: ঢাকা ওয়াসার একটি আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও গবেষণা ইনস্টিটিউট তৈরি করতে পরামর্শকের জন্য দুই প্যাকেজে ১০৬ কোটি ১০ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘ঢাকা ওয়াসায় আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। এই খাতে পরামর্শকদের প্যাকেজ না রাখাও যৌক্তিক ছিল বলে মনে করছে সংস্থাটি।
প্রস্তাবটি নিয়ে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সেখানে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নানা প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৬৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, নিজস্ব অর্থ ৬০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ৫০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৯ সালের জুনে বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা। এটি বাস্তবায়িত হবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর এলাকায়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মানসম্মত কাজ করলে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শকের প্রয়োজন আছে। বিদেশি ঋণ বা অনুদান নিয়ে তাদের শর্ত অনুযায়ী কিছু পরামর্শক নিতেই হয়। কিন্তু তাই বলে আমাদের ক্ষতি হবে এমন শর্ত মেনে নেওয়া যায় না। আলোচনার মাধ্যমেই নিশ্চয়ই এই খাতে ব্যয় যৌক্তিক করবে পরিকল্পনা কমিশন।’
ঢাকা ওয়াসার একটি সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, ইতিমধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে কি-ওয়াটারের কারিগরি সহায়তায় প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়েছে। বর্তমানে ইকনোমিক ডেভলপমেন্ট করপোরেশন ফান্ড, কোরিয়া (ইডিসিএফ), সরকার ও ঢাকা ওয়াসার নিজেস্ব অর্থায়নে মোট ৭০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা ৪১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ২০ কোটি নগরবাসীর পানি এবং ২ শতাংশ এলাকায় পয়ঃসেবা দিয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা ৫টি পানি শোধনাগার, ৯০৬টি গভীর নলকূপ এবং ২টি পয়ঃশোধনাগারের মাধ্যমে সেবা দিয়েছে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে সেবাভুক্ত এলাকায় অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি অর্জনে ঢাকা ওয়াসা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা ওয়াটার মাস্টার প্ল্যান এবং সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এই প্ল্যান অনুসারে বর্তমানে ২টি পানি শোধনাগার এবং একটি পয়ঃশোধনাগারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সিস্টেম লস কমানো এবং প্রেসারাইজড পদ্ধতিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য সমগ্র ঢাকা শহরকে ১৪৫টি (ডিস্ট্রিক মাস্টার্ড এরিয়া) ডিএমএতে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮৯টি ডিএমএ স্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলো নির্মণাধীন।
এছাড়াও সেন্ট্রাল মনিটরিং এবং ডাটা একুইজিশনের জন্য স্মার্ট মিটার এবং এসসিএডিএ ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে এই বিষয়গুলোর ওপর ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জ্ঞান না থাকায় এই সমস্ত কাজগুলো দেশি বা বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার বিদ্যমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে অবকাঠামো এবং মানবসম্পদ অপ্রতুলতার কারণে আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন এবং দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ খুবই কম। এছাড়াও মাইক্রোবায়োলজি ও কেমিক্যাল বিভাগ থেকে শুধু পানির কোয়ালিটি পরিমাপ করা হয় । কিন্তু কোয়ালিটি বাড়ানো সংক্রান্ত কোন গবেষণা খুবই অপ্রতুল।
এ অবস্থায় টেকসই পানি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য পানি ও পয়ঃশোধনাগারের নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণ, পরবর্তীতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে পানি ও পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ, ডিএমএ স্থাপন, লেক ডিটেকশন, স্মার্ট মিটার, এসসিএডি ব্যবহারে জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলোর উপর জ্ঞান অর্জনের জন্য ঢাকা ওয়াসার আন্তর্জাতিক মানের একটি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। যেখানে ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় পানি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নলেজ শেয়ারিং এবং দক্ষতা উন্নয়নের কাজ করা হবে।
তবে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৬০ কোটি টাকা ধরা হলেও কি পরিমাণ ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে তা বলা হয়নি। এছাড়া এ ব্যয় প্রাক্কলনে জেলা প্রশাসন সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা সেটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।
এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবে ল্যান্ড ক্লিয়ারেন্স অ্যান্ড ডিমোলিশন উইথ অব সাইট ইউটিলিটিজ ইনিন্সটলেশন খাতে ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ খাতে কি কি কাজ করা হবে তা জানতে চাইবে পিইসি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩৭ জন জনবলের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির কোন সুপারিশ নেওয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হবে পিইসি সভায়।
এছাড়া প্রকল্পে সম্মানী খাতে ৩০ লাখ টাকা, ওভার টাইম খাতে ৫০ লাখ টাকা, জ্বালানি ও মেরামত খাতে ৯০ লাখ টাকা , স্টেশনারি ও স্ট্যাম্প খাতে ৯০ লাখ টাকা, ট্রেনিং ওয়ার্কশপ খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে সরকারি খাত হতে যানবাহন ও মোটরসাইকেল কেনা বাবদ ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কয়টি যানবাহন ও মোটরসাইকেল কেনা হবে এবং অর্থবিভাগ হতে এ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে কিনা সেগুলোও জানতে চাওয়া হবে পরিকল্পনা কমিশনের সভায়।
সারাবাংলা/জেজে/এমও