প্রতি ৩ শিশুর একটি জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৭
ঢাকা: দেশে প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একটি বিরূপ আবহাওয়া, বন্যা, নদীভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য পরিবেশগত সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশে এমন শিশুর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) নিউ বেইলি রোডে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ডা. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বে এর প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শিশুদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ।
‘শিশুদের ওপর জলবায়ু সংকটের প্রভাব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে ফারাহ কবির বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হওয়ায় আমাদের ঝুঁকি বেশি। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জলবায়ু ন্যায্যতার লড়াইয়ে শিশুদের সম্পৃক্ত করা একটি টেকসই ও সহিষ্ণু ভবিষ্যত গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক।’
অনুষ্ঠানে জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে, তা তুলে ধরার জন্য অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুড়িগ্রাম, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার ৩০০ শিশুর মধ্যে জরিপটি চালানো হয়েছিল।
জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত ঝুঁকির কারণে ৩০০ শিশুর মধ্যে ১২৩টি অর্থাৎ ৪১ শতাংশ শিশুর শিক্ষা ব্যাহত হয়েছে। ২০ শতাংশ (৬০ জন) শিশু তাদের এলাকার পানিতে লবণাক্ততা অনুভব করছে এবং ১৯ শতাংশ (৫৮ জন) শিশু বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের এলাকায় চাষাবাদ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
জরিপ আরও উঠে এসেছে, প্রায় ১৮ শতাংশ (৫৩ জন) শিশু জানিয়েছে যে তারা গত তিন বছরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রভাবিত হয়েছে। চারটি শিশু জানিয়েছে যে তারা অ্যালার্জি ও শ্বাসকষ্টের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে পরিবার আবাসস্থল হারিয়েছে— এমনটিও জানিয়েছে দুটি শিশু।
অনুষ্ঠানে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান পৃথিবী এক নজিরবিহীন জলবায়ুসংকটের মুখোমুখি, যা মোকাবেলার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের কোনো কাজে যেন শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জলবায়ুসংকট মোকাবেলায় তাদের অংশগ্রহণ কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং অপরিহার্য।’
সাবেক সচিব ড. অপরুপ চৌধুরী বলেন, জলবায়ুসংকট কেবল একটি পরিবেশগত ঘটনা নয়, এটি আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। তারা গৃহহীন হচ্ছে, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, এমনকি শিশুবিবাহ ও শিশুশ্রমের মতো কাজের যুক্ত হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অরিজীত চৌধুরী বলেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকার কিছু করছে কি না, তা অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার সময় লক্ষ রাখতে হবে। যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রমে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
শিশু প্রতিনিধি সিদরাতুল মুনতাহা প্রমি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না । শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী না হয়েও পরিণাম ভোগ করছে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে একশনএইড বাংলাদেশের উদ্যোগ, ‘শিশু বিকাশ কেন্দ্রে’র শিশুরা ঢাকার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমানের কাছে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুদের ওপর প্রভাব ও এ থেকে উত্তরণের জন্য কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ সম্পর্কে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের শিশুদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর