Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ইউরিয়া সার কারখানা

শ্যামল মিত্র, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০৭

নরসিংদী: দেশের অভ্যন্তরীণ ইউরিয়া সারের চাহিদা মেটানো এবং সুলভমূল্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিতে নরসিংদীর পলাশে স্থাপিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’। ইতোমধ্যেই কারখানার ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এটি চালু হলে দৈনিক ২৮০০ মেট্রিক টন করে বছরে গড়ে ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন সম্ভব হবে। অক্টোবরের শেষ নাগাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।

দেশের ইউরিয়া সারের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালে বার্ষিক ৩ লাখ ৪০ হাজার এবং ১৯৮৫ সালে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন যথাক্রমে ঘোড়াশাল এবং পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপিত হয়। কারখানা দু’টি পুরাতন হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস এবং ডাউন টাইম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানা দু’টির স্থানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, শক্তিসাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের নির্দেশনা দেন। সে প্রেক্ষিতে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন গ্রানুলার ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়। পরে ২০১৮ সালে প্রল্পটির কাজ শুরু করে শিল্পমন্ত্রণালয়।

জাপানি প্রতিষ্ঠান এমএইচআই-এর কাছে কারখানাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার কাজ ইতোমধ্যে ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর মাসে কারখানাটি সার উৎপাদনে যাবে। যা থেকে দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পরে যেকোনো সুবিধাজনক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে প্রকল্পের উৎপাদন কাজ উদ্বোধন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৪৩৬ একর জায়গার মধ্যে ১১০ একর জায়গা নিয়ে স্থাপিত কারখানাটি নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ লাখ ৫২০ কোটি টাকা।

ঘোড়াশাল-পলাশ ফার্টিলাইজার প্রজেক্ট নরসিংদীর ডিরেক্টর রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, গ্যাস আর পানির সমন্বয়ে তৈরি হওয়া ইউরিয়া সার ফসল ফলানোয় অতি জরুরি। তাই ভর্তুকি দিয়ে আমদানি করে কৃষকের কাছে ন্যায্য মূল্যে সার পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর উদ্দ্যোগ নেয় কারখানা নির্মাণের। গ্যাসের সংকট দেখা না দিলে অক্টোবরেই উৎপাদন হবে সার। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ সার কারখানায় উৎপাদিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড পুনরায় সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে সারের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সারের যোগান বাড়নো সম্ভব হবে।

বিসিআইসি চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) সাইদুর রহমান বলেন, ‘দেশের কৃষিখাতের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ সার কারখানা। দেশের মোট সারের সিংহভাগ পূরণের লক্ষমাত্রা নিয়ে উৎপাদনে যেতে আর অপেক্ষা অল্প সময়ের। এটি চালু হলে দেশের অন্যান্য কারখানায় চাপ কমার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমবে। প্রয়োজনে আরও কারখানা চালু করে দেশের সারের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা হবে।’

শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই জাপানি প্রতিষ্ঠান (এমএইচআই) মিটসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। জ্বালানিসংশ্লিষ্ট নিশ্চয়তা নিরবচ্ছিন্ন থাকায় চলতি মাসেই সারের দেখা পাবে কারখানাটি। অক্টোবরের শেষ নাগাদ প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন বলে আশাবাদ জানান মন্ত্রী।

শিল্পমন্ত্রী আরও জানান, এটি চালু হলে শিল্পখাতে এক নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। দেশের বাইরে থেকে সার আমদানি হ্রাস পাবে ফলে বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

উল্লেখ্য, দেশে কম-বেশি প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন সারের চাহিদা রয়েছে। গ্যাসসহ অন্য সংকট কাটিয়ে ঘোড়াশাল-পলাশ, যমুনা, শাহজালাল, আশুগঞ্জসহ অন্য কারখানায় যথাযথ উৎপাদন করা গেলেও ৬/৭ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করতে হবে প্রতি বছর।

সারাবাংলা/এমও

ইউরিয়া সার কারখানা দক্ষিণ এশিয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর