Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বকেয়া ৩০০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে গ্যাস পাবে না বিদ্যুৎকেন্দ্র

ঝর্না রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১১

ঢাকা: গ্যাসখাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ কমছেই না। এই তালিকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান, রয়েছে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রও। বকেয়া বিলের মধ্যে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ খাতেই বকেয়ার পরিমান তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই বিশাল বকেয়া বিল আদায় করতে হিমশিম খাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তুকির অর্থ না পাওয়ায় নিয়মিত বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। একই অবস্থা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রতেও। ফলে বিদ্যুৎ খাতেই আটকে গেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিল। এই পরিস্থিতিতে বিল পরিশোধ না করা আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোকে গ্যাস সরবরাহ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে পিডিবি এবং আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) মিলিয়ে গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে দুই হাজার ৮৮৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বিভিন্ন সার কারখানায় গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে ৮৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ দুই খাতেই ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিল বকেয়া পড়েছে তিন হাজার ৭৮৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

দেশে মোট ছয়টি কোম্পানি গ্যাস বিতরণ করে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এবং সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

বিজ্ঞাপন

সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের। কোম্পানিটি পিডিবি’র কাছে বকেয়া রয়েছে ৬০৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা আর আইপিপিগুলোর কাছে এই বকেয়ার পরিমান ৩৯৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এই বিল আদায়ের জন্য বার বার নোটিশ করার পরেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বিল পরিশোধ না করা আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

সূত্র অনুযায়ী, বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি দেশে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার দেশের মধ্যে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকেও গ্যাস কিনে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করছে। কিন্তু বিল আদায় না হওয়ায় আমদানি করা তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম পরিশোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। বিষয়টি এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে আইপিপি ও পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিল আদায়ের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও তা কাজে আশানুরূপ কাজে আসেনি।

জ্বালানি বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, কমিটি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে কিন্তু আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই। সবশেষ অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে নির্দিষ্ট সময় বেধে চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে বলা হয়, কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র বিল পরিশোধ না করলে তাদের লাইন কেটে দেওয়া হবে।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া (অপারেশন) সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর চেয়ে তিতাসের বকেয়া অনেক কমেছে। তিতাস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। তবে বিদ্যুৎ খাতের বিষয়টা ভিন্ন রকম। কারণ এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত হতে পারে। তারপরও বড় বড় বকেয়া বিল আদায়ের ক্ষেত্রে আমরা সংযোগ বিচ্ছিন্নের মতোও সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকি।’

সম্প্রতি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দুটি বিভাগই এক মন্ত্রণালয়ের। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি খাতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তাতে গোটা বিশ্ব ভুগছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুৎ খাতকে পর্যাপ্ত ভূর্তুকি দেওয়া যাচ্ছে না ফলে বকেয়া পরিশোধ করতে পারছে না। আশা করছি এ সংকট বেশিদিন থাকেব না।‘

উল্লেখ্য, দেশে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি। এই সংখ্যক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩ হাজার ৩৩৪ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। এদের মধ্যে ১১টি আইপি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে যারা গ্যাস ব্যবহার করে। এই ১১ বিদ্যুৎকেন্দ্র ২ হাজার ৫৯৭ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এছাড়া এসআইপিডি রয়েছে আরও ৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

গ্যাস বকেয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর