Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ড. ইউনূসের উদ্দেশে খোলা চিঠি— অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতারোহণ নয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। চিঠিতে নোবেলজয়ীকে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় ক্ষমতারোহণের অনুঘটক না হওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ইউনূস সেন্টারের ঠিকানায় এবং ই-মেইলে এ খোলা চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস আমার শিক্ষাগুরু। উনি যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, আমি তখন ছাত্র ছিলাম। ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে গরিব হটানো, গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ওনার নানা কর্মকাণ্ড আমাদের চোখের সামনে হয়েছে। কিন্তু নোবেলজয়ের পর থেকে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ওনাকে নিয়ে যেসব নেতিবাচক আলোচনা হয়, একজন ছাত্র হিসেবে নোবেলজয়ীকে এসব আলোচনা বিবেচনার জন্য কিছু অনুরোধ করেছি। আশা করছি, ওনার সাবেক ছাত্রের আহ্বানে নোবেলজয়ী সাড়া দেবেন।’

খোলা চিঠিতে নোবেলজয়ী ইউনূসকে ‘সর্বহারা বিপ্লবের ভয়ে সন্ত্রস্ত পশ্চিমা বিশ্বের কাছে বিপ্লব ঠেকানো আলোকবর্তিকা’ বলে উল্লেখ করে সুজন বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণদান নিয়েই আপনার বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যতা এবং একপর্যায়ে আপনার নোবেলপ্রাপ্তি। আপনি যখন শান্তিতে নোবেল পেলেন, তখন বাংলাদেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলনে ছিলাম, প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের রক্ত ঝড়ছিল রাজপথে। এর মধ্যেই আপনি ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সংবর্ধনা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিতর্কিত নির্বাচনে যাবার নসিহত করেছিলেন, মনে কষ্ট পেয়েছিলাম। একজন নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার সেই বক্তব্য অভিভাবকসুলভ ছিল না।’

বিজ্ঞাপন

জরুরি পরিস্থিতিতে ইউনূসের দল গঠনের চেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জরুরি অবস্থায় রাজনীতি নিয়ে আপনার অবস্থান এবং নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আমার মতো অনেকের কাছে আপনার প্রতি শ্রদ্ধার আসন নড়বড়ে করে ফেলেছিলেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। জরুরি অবস্থা পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এল। ততদিনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আপনার বয়স পেরিয়ে গেল। কিন্তু বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আপনি সেই পদে থেকে যেতে আগ্রহী ছিলেন, এটাও নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলে মনে করি।’

‘সেই পদে থাকতে না পেরে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আপনি আটকে দিয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি, এর বিশ্বাসযোগ্য কোনো সদুত্তর আপনার কাছ থেকে পাইনি। আপনার এই কর্মকাণ্ড আমার মতো কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের কারণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই দেশের টাকায় আজ পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে।’

নোবেলজয়ীকে উদ্দেশে করে সুজন আরও বলেন, ‘আপনি সম্মানি মানুষ অবশ্যই, আপনি নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব, দেশবাসী আপনাকে অবশ্যই মাথার ওপরে রাখবে। কিন্তু বিশ্বনেতাদের বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আপনাকে সম্মান দেওয়ার জন্য নসিহত করতে হবে, সরকারকে চোখা রাঙানিসহ বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে হবে, এটা কাম্য নয়।’

‘আপনার বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ স্থানান্তর, গ্রামীণ ফোনের শেয়ার কেলেঙ্কারি, শ্রম আইন লঙ্ঘনসহ আরও যেসব অভিযোগ উঠেছে এবং ইতোমধ্যে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে, এটা শুধু নোবেলজয়ী হিসেবে আপনার জন্য নয়, দেশের জন্যও লজ্জার বলে আমরা মনে করি। আপনি যতবেশি শিক্ষিত-সচেতন, সমাজ আপনার থেকে তত বেশি দায়িত্বশীলতা আশা করে। গ্রামীণ ব্যাংকসহ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় আপনি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি বলে মনে করি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইন আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, আপনি আইনের শাসনে বিশ্বাসী নাগরিক হিসেবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সেটা মোকাবেলা করবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনার পক্ষ নিয়ে কখনো বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, কখনো বিশ্বনেতারা যেভাবে বাংলাদেশকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন, তাতে কি আপনার সম্মান বাড়ছে— প্রশ্নটা আপনার বিবেকের কাছে রাখলাম।’

‘একজন নোবেলজয়ী বাঙালি হিসেবে আপনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে প্রত্যাশা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি একবার বুকে হাত দিয়ে বলুন, দেশের কোনো সংকটে মানুষ কি আপনাকে পাশে পেয়েছে? দেশের অভ্যন্তরীণ নানা সংকট নিয়ে আপনি কখনো এক লাইনের একটি বিবৃতি দিয়েছেন? অথচ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আপনার যে সখ্যতা সেটাকে ব্যক্তিগত উদ্দেশে কাজে না লাগিয়ে আপনি বাংলাদেশের মানুষের সামষ্টিক জীবনমানের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারতেন।‘

‘দেশে গণতন্ত্রের সংকট আছে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতেও সংকট আছে’— এমন মন্তব্য করে সুজন বলেন, ‘সবই নিজেরা নিজেদের মধ্যে সমাধানযোগ্য সংকট। সেই সংকটকে পুঁজি করে সবসময় আপনাকে নিয়ে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের একটি কথা আলোচনায় চলে আসে, এই আলোচনা কি আপনার জন্য সম্মানের? দেশের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত তৈরি করে, মায়ের বুক খালি করে, রক্তপাতের উসকানি দিয়ে বিশ্বমোড়লদের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতারোহণের চিন্তা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাজ হতে পারে না।’

‘আপনাকে দেশের সংকটে পাশে চাই, উন্নয়ন-অগ্রগতি ও প্রগতির পক্ষে আপনার ভূমিকা প্রত্যাশা করি— সংঘর্ষ ও সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় ক্ষমতারোহণের অনুঘটক নয়। আমরা বাঙালির সামগ্রিক জাগরণে, চেতনায়, মননে জাগ্রত শুদ্ধ বিবেক হিসেবে নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেখতে চাই। বিশ্বের আকাশ থেকে আপনি নেমে আসুন বাঙালির মর্ত্যে, এ কামনা করি।’

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এরপর থেকে রাজনৈতিকভাবেও আলোচনায় আসা ইউনূসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। এসব মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি, তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী আছেন। এরপর থেকে তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

ড. ইউনূস ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর