সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে চাই: সিইসি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪০
ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী বারবার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর আগে কোনো সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রতি দেয়নি। সরকার যেহেতু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকার তার প্রতিশ্রুত রক্ষা করবেন। সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাই।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক বৈঠকে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। সভায় নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, অধ্যাপক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা অত্যন্ত আশস্তবোধ করছি যে, সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে চাই। এর আগে কোনো সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয় নাই। আইনমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রী বলছেন। এমনকি সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রীও যখন বলেছেন, তিনি কিন্তু পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলেননি। প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্টভাবে বেশ কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছেন। আমি সরকারের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যেহেতু তার জায়গা থেকে এটা অনুধাবন করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সরকার তার প্রতিশ্রুত রক্ষা করবেন, আমি আশ্বস্ত বোধ করছি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনটা আমাদের জন্য খুব সহজ বিষয় না। একটা কঠিন অবস্থায় আছি। এটা বিলেতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে না। এটা অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন হতে যাচ্ছে না। এখানে বিভিন্ন ধরনের সংকট আছে। সেটা আপনারাও বলেছেন, আমরা সেটা অনুধাবন করি। এখানে অনেকগুলো সংকট নিরসন করতে হবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। আমাদের জন্য যদি অনুকূল পরিবেশ রাজনৈতিবিদরা তৈরি করে না দেয়, তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হবে। আর অনুকূল হলে কাজটা সহজ হবে।’
সিইসি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের পর মাছের বাজারে গেলে নিন্দার স্বীকার হব, এমন কিছু প্রত্যাশা করি না। নির্বাচন ভালো হবে কি হবে না, সেটার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। এটা আমাদের মধ্যে থেকে আসবে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা রাজনীতি থেকে আসবে।’
‘নির্বাচনের পরবর্তীতে সহিংসতা নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন অত্যন্ত লজ্জজনক বিষয়। এগুলো যাতে না হয় সেজন্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা নজর রাখব। নির্বাচনের সময় যাতে প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে সেদিকে নজর রাখব।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে ব্যাপক অংশগ্রহণ করার বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেব। যাতে ৬০, ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচনে কম ভোট পড়লে আইনগত সমস্যা না হলেও এটা দৃষ্টিকটু লাগে। সকল অংশীজন যদি নির্বাচনে অংশ না করে সহায়তা না করে তাহলে ভাল নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আপনাদের অনেকে প্রত্যাশার কথা বলেছেন। সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারলে ভালো লাগত। তবে নির্বাচন কমিশনের পরিধি ও ক্ষমতা আইন ও সংবিধান দ্বারা সীমিত। নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক কার্যকলাপে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমরা বারবার আলোচনার কথা বলেছি। কিন্তু কেউ আলোচনায় রাজী না। এক্ষেত্রে আমাদের সিভিল সোসাইটিও কোনো ভূমিকা রাখছে না।’
সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, আইডিয়া দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম, ইসির সিস্টেম ম্যানেজার ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নাগরিক সমাজের মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবীর, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ প্রমুখ অংশ নেন।
সারাবাংলা/জিএস/এনএস