ভারত-জার্মানি ছাড়া সব দেশেই পোশাক রফতানি বেড়েছে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৩৬
ঢাকা: পোশাক রফতানিতে অর্থবছরের শুরুটা ভালো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রফতানির প্রধান গন্তব্যগুলোতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ইতিবাচক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেও (ইইউ) এই সময়ে রফতানি বেড়েছে উল্লেখযোগ পরিমাণে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়েছে পোশাক রফতানি।
তথ্য বলছে, ভারত ও জার্মানি ছাড়া বাকি প্রায় সব দেশেই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেড়েছে বাংলাদেশের প্রধান এই রপ্তানি পণ্যের বাজার। বিশেষ করে অপ্রচলিত বাজারেও পোশাক রফতানি ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতেও সামনের মাসগুলোতে পোশাক রফতানি নিয়ে শঙ্কা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্রেতারা এখন ক্রয়াদেশ দিতে সংযত অবস্থানে রয়েছেন।
জানতে চাইলে পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভারত ও জার্মানি ছাড়া প্রায় সব দেশেই পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি রয়েছে। এটি খুবই ভালো দিক। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য হচ্ছে— কনটেইনার রফতানি কমেছে ১৫ শতাংশ। ডিসেম্বরের আগে রফতানির প্রকৃত তথ্য বোঝা যাবে না। নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা ভাবছে, ক্রয়াদেশ দিলে নির্বাচনের আগে তা ডেলিভারি দেওয়া যাবে কি না। ক্রেতাদের ইনকোয়ারি আছে। দরকষাকষি চলছে। তবে নতুন অর্ডারের ফ্লো কম।’
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী সারাবাংলাকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমাদের রফতানি বাণিজ্য চ্যালেঞ্জের মুখে। তুলার দাম বেড়েছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত পণ্যের দাম কম। সব মিলিয়ে আমাদের রফতানিমুখী শিল্প স্বাস্থ্যগত দিক থেকে খুব ভালো অবস্থানে আছে, তা বলা যাবে না। আমরা খুব ভালো, আছি তা নয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রায় সব দেশে রফতানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। এটি খুবই ভালো দিক। এ খাতের উদ্যোক্তা ও শ্রমিকদের ভূমিকা ও সরকারের নীতি সহায়তার প্রভাবে খাতটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। আশা করি সামনের দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেড অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমরা অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে ভালো করছি। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। বিজিএমইএ সবসময় রফতানি বাড়াতে সজাগ। ফলে রপ্তানি বাড়ছে।
মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, ইউরোপে বড় বাজার সবসময় ছিল, এখনো আছে। যুক্তরাষ্ট্রে কখনো কম, কখনো বেশি হচ্ছে। তবে কানাডা ও যুক্তরাজ্যে নিয়মিতভাবে বাড়ছে। খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না। বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি ভালো হলে রপ্তানি আরও বাড়বে। আশা করা যাচ্ছে, বাজার আরও ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ বাংলাদেশে ভালো করার মতো অবকাঠামো আছে, দক্ষ জনবল রয়েছে। কিন্তু বাজারে পণ্যের চাহিদা থাকতে হবে। চাহিদা এখন আসলেই কম। যুদ্ধ ও সুদের অবস্থার উন্নতি হলে মার্কেট আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
ইপিবির তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের চেয়ে ইউরোপের বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রফতানি ছিল ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে। অর্থাৎ এ সময়ে আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪১ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি বেড়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম দুই মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশটিতে পোশাক রফতানি ছিল ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও পোশাক রফতানি বেড়েছে এবং এই দেশেই রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশটিতে পোশাক রফতানি ছিল ৮১৯ মিলিয়ন ডলার, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ মিলিয়ন ডলারে।
প্রথম দুই মাসে কানাডাতেও পোশাক রফতানি বেড়েছে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে দেশটিতে রফতানি হয়েছে ২৪৩ মিলিয়ন ডলারের পোশাক, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২২৭ মিলিয়ন ডলার।
ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির এই চিত্রের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য জার্মানির ক্ষেত্রে। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এই দেশে পোশাক রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া এ সময়ে ভারতেও পোশাক রফতানি কমেছে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। তবে স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ডের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু বড় বাজারে রফতানিও যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ ও ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে প্রচলিত বাজারের বাইরে অপ্রচলিত বাজারেও চমক দেখিয়েছে পোশাক রফতানি। অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে এসব বাজারে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে এই বাজারে পোশাক রফতানি বেড়েছে ২২ শতাংশ। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, চীন, সৌদি আরব, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশেও প্রথম দুই মাসে পোশাক রফতানি বেড়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
তৈরি পোশাক খাত পোশাক রফতানি বিজিএমইএ রফতানি রফতানিতে প্রবৃদ্ধি