আইন চূড়ান্ত— ভূমি জালিয়াতির মামলার নিষ্পত্তি ৬ মাসের মধ্যে
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:০৫
ঢাকা: ভূমি নিয়ে প্রতারণা, জালিয়াতি বা অবৈধ দখলের মামলার বিচার ১৮০ দিন বা ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনে ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ দখলের মতো ১২টি অপরাধ চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি ভূমি অপরাধসংক্রান্ত কোনো কাজে সহায়তা করেন, তিনিও অপরাধ সংঘটনকারীর সমপরিমাণ দণ্ডে দণ্ডিত হবেন বলে উল্লেখ রয়েছে আইনে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে আইনটি স্পষ্টীকরণে আলোচনার আয়োজন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। সেখানে আইনটির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এ সময় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আইনটি কার্যকর হলে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ কমে যাবে। ফলে জমিজমা সংক্রান্ত মামলাও অনেক কম হবে।
আইনে যা আছে
‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩’-এ মোট ২৭টি ধারা রাখা হয়েছে। আইনে ভূমিবিষয়ক আট ধরনের অপরাধ এবং আরও চার ধরনের সম্পূরক অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এসব অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি রাখা হযেছে সাত বছরের কারাদণ্ড। পাশাপাশি ভূমিসংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ আইনে।
অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনার জন্যও দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। কোনো অপরাধ একাধিকবার করলে দণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ রাখা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানি অপরাধ সংঘটন করলে তার মালিক, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, সচিব বা জড়িত অন্যান্য কর্মকর্তারা দায়ী হবেন; যদি না তারা প্রমাণ করতে পারেন যে তাদের অজ্ঞাতসারে এ অপরাধ সংঘটন হয়েছে বা অপরাধ রোধ করার জন্য তিনি বা তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন।
বিধি প্রণয়ন করে এ মাসের মধ্যেই এ ধরনের অভিযোগ নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে। ভূমির তথ্যসম্বলিত সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরির বিধানও রাখা হয়েছে আইনটিতে।
১২ ধরনের অপরাধ
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩-এ মোট ১২ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করা হয়েছে। ভূমিবিষয়ক আট ধরনের অপরাধের মধ্যে রয়েছে ভূমি প্রতারণা; ভূমি জালিয়াতি; অবৈধ দখল; ক্রেতা বরাবর বিক্রিত ভূমির দখল হস্তান্তর না করা; সীমানা বা ভূমির ক্ষতিসাধন; সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমির অবৈধ দখল, প্রবেশ বা কোনো কাঠামো নির্মাণ বা ক্ষতিসাধন; সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বার্থযুক্ত বা জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধ ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন; এবং মাটির উপরিস্তর কর্তন ও ভরাট।
আরও চার ধরনের সম্পূরক অপরাধের কথা উল্লেখ রয়েছে আইনে। আদেশ অমান্য, অপরাধ সংঘটনে সহায়তা বা প্ররোচনা, অপরাধ পুনর্সংগঠন এবং কোম্পানির মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনকে এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
শাস্তি
ভূমি প্রতারণাসংক্রান্ত অপরাধ ও ভূমি জালিয়াতিসংক্রান্ত অপরাধে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অন্যান্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাজা দুই বছরের কারাদণ্ড। আর একই অপরাধ আবারও করলে সাজা হবে দ্বিগুণ।
জামিন
ভূমি প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে আইনে। বাকি অপরাধ জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য রাখা হয়েছে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, ভূমি প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধের বিচার প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান প্রযোজ্য। এ ছাড়া ভূমি প্রতারণা, জালিয়াতি, অবৈধ দখলচ্যুত ব্যক্তির দখল পুনরুদ্ধার এবং অপরাধ পুনর্সংগঠনের বিচার ছাড়া অন্যান্য অপরাধ তফসিলভুক্ত হওয়াসাপেক্ষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিচার করা যাবে।
আইনটিতে আরও বলা হয়, এই আইনের কোনো বিধানের অস্পষ্টতার কারণে তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে সরকার অন্যান্য আইনের বিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ওই অসুবিধা দূর করার আদেশ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভূমির জবরদখল, ক্ষতি ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে জালিয়াতি বা প্রতারণা বন্ধ করাই এ আইনের প্রধান উদ্দেশ্য। পাশাপাশি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে জনগণের ভোগান্তি দূর করা এবং ভূমিসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ ও দ্রুত প্রতিকারের বিষয় রয়েছে নতুন আইনে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে এই মুহূর্তে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪০ লাখের মতো। এসব মামলা বড় অংশই জমিজমাসংক্রান্ত, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, পুরনো মামলায় আমরা হাত দিতে পারব না। সেগুলো আগের মতোই চলবে। তবে নতুন আইন কার্যকর হলে ভবিষ্যতে ভূমিসংক্রান্ত মামলার সংখ্যা অনেক কমে আসবে।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ আইন ভূমি আইন ভূমি জালিয়াতি ভূমি দখল ভূমি প্রতারণা ভূমি প্রতারণা আইন ভূমিমন্ত্রী ভূমিসংক্রান্ত অপরাধ