নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনও অনড় বিএনপি, তবে…
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৫৬
ঢাকা: বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে এখনও অনড় বিএনপি। তবে পরিস্থিতি বদলালে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে যাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে দলটি। ভোটে অংশ নিতে ভেতরে ভেতরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে তাদের। তিনশ’ আসনের জন্য সহস্রাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রস্তুত করছে তারা। নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজও চলছে পুরোদমে।
দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আন্দোলন কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিলেও রাজনৈতিক ফায়সালার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টিও মাথায় রয়েছে তাদের— এমনটিই জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
দলীয় সূত্র মতে, ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা, দলের সাবেক এমপি-মন্ত্রী, বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিগত জাতীয় নির্বাচনে যারা ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তিনি। ধারাবাহিক ওইসব বৈঠকে চলমান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য পুরো প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে, আপাতত সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনকেই প্রধান এজেন্ডা হিসেবে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস- আন্তর্জাতিক মহলের চাপ, দ্রব্যমূল্যসহ নানাবিধ কারণে সাধারণ মানুষের সরকারবিরোধী মনোভাব এবং বিএনপির এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার ‘একরোখা’ অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে সরকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে। একটা সমঝোতার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের পথ খুলে যাবে। সেক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে যেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে না হয়, সেজন্য আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে বিএনপি। তবে, কৌশলগত কারণে এ বিষয়টি এখনই সামনে আনছে না তারা।
জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতাদের যার যার অবস্থান থেকে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন। আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় থাকলে কেউ ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। যারা আন্তরিকতার সঙ্গে মাঠে থাকবে, তারাই পাবে ধানের শীষ প্রতীক। পাশাপাশি আগামীতে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও তাদের দেওয়া হবে।
সূত্র মতে, বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে যেসব বিষয় আলোচনা হচ্ছে, তার একটা সারসংক্ষেপ তৈরি করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে নিয়মিত তুলে ধরছেন তিনি। আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ এবং সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে করণীয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওইসব বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতাদের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান।
জানা গেছে, চলতি সেপ্টেম্বরও সভা-সমাবেশ, গণমিছিল, পদযাত্রা, গণসংযোগ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পার করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কার্যালয় একটি চিঠি দিয়েছে। অনুমতি পেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় ধরনের জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
সূত্র জানায়, অক্টোবর পর্যন্ত এ ধরনের ‘নিয়মতান্ত্রিক’ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান বারবার তুলে ধরতে চায় বিএনপি। পাশাপাশি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও সেরে রাখতে চায় তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে আমরা নির্বাচনে যাব না, সেটা পরিষ্কার করে বলেছি। তার মানে এই নয় যে, আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি নেই। নির্বাচনের জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত। সারাদেশে আমাদের নেতা-কর্মী এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রস্তুত রয়েছেন। আজ যদি আমাদের দাবি মেনে নিয়ে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্চানের ঘোষণা দেয়, কালই আমরা নির্বাচন করতে পারব।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিটি আসনে আমাদের অন্তত পাঁচ জন করে প্রার্থী প্রস্তুত আছে। তত্ত্বাবধায়কের ঘোষণা আজ দিলে, কালই আমরা নির্বাচন করতে পারব। আমাদের পরিষ্কার কথা- এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। সে নির্বাচনে তিনশ’ আসনে লড়াই করার মতো শক্তি, সামর্থ্য, লোকবল, সংগঠন— সবকিছু আমাদের আছে। এ নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবতে হবে না।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম