Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৫ বছরেও ফায়ার সার্ভিসের কথা আমলে নেননি কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ীরা

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪১

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেখানে চারটি ফায়ার হাইড্রেন্ট ও একটি গভীর টিউবওয়েল বসানোর তাগিদ দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ফায়ার সার্ভিসের কথায় গুরুত্ব দেননি ব্যবসায়ীরা। যার ফলে ঘটে গেল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। আগুনে ব্যবসায়িক সরঞ্জাম ও দোকানপাট পুড়ে ছাই। এখন ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট রইল না।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ফায়ার সার্ভিস ও একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীরা জানান, অন্তত পাঁচ বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস এসে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করেছে। এখানকার ব্যবসায়ী সমিতিকে বারবার তাগিদ দিয়েছিল মার্কেটের চার কোণায় চারটি ফায়ার হাইড্রেন্ট ও একটি সেন্ট্রাল হাইড্রেন্ট বসানোর জন্য। কিন্তু ব্যবসায়ী নেতারা তা আমলে নেননি। মার্কেটে আগুন লাগলেও পানি সংকটের কারণে ফায়ার সার্ভিস পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করতে পারেনি। আশেপাশে কোথাও নেই জলাধার। আগুন নেভাতে পানি কোথা থেকে আসবে, সে ব্যাপারেও ছিল সংশয়। যার ফলে আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষি মার্কেটে হাবীব ক্লথ স্টোরের মালিক হাবীবুর রহমান মন্টু সারাবাংলাকে জানান, ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় আগুন লাগার পর রাজধানী জুড়ে ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটের যে তালিকা করেছিল তাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটও ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রয়েছে। এরপর ফায়ার সার্ভিস এসে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যানার লাগায়। তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন মার্কেট কর্তৃপক্ষ যেন একটি ডিপ টিউবওয়েল বসিয়ে নেয়। তাহলে কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলেও যেন পানি স্বল্পতায় পড়তে না হয়। কিন্তু কেউ আমলে নেননি।

বিজ্ঞাপন

ক্রোকারিজ ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যখন আসে তখন অর্ধেক মার্কেটেও আগুন আসেনি। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের দুইটি গাড়ির মধ্যে একটিতে পানি ছিল, অন্যটিতে ছিল না। ওয়াসার গাড়ি তখনও পানি সরবরাহ শুরু করেনি। আমাদের দোকানের মালামাল পুড়ছে অথচ আমরা দাঁড়িয়ে দেখছি। কিছুই করতে পারছি না। ধানমন্ডি লেক, বছিলায় তুরাগ নদী ছাড়া কাছাকাছি আর কোথাও পানির উৎস ছিল না। সকালের দিকে অদূরে রাস্তার ওপারে টোকিও স্কয়ার মার্কেটের ফায়ার হাইড্রেন্ট থেকে পানি নিয়েছে। সকালের দিকে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও সেনাবাহিনীর পানির বড় ট্যাংক আসার পর আগুন নেভানো সম্ভব হয়েছে। ততক্ষণে সব শেষ। অথচ এর কিছুই ঘটত না যদি ব্যবসায়ী সমিতি ডিপ টিউবওয়েল বসানো হতো। এতে আগুন লাগলে পুরো মার্কেট পুড়ে ছাই হতো না।’

ব্যবসায়ীদের দাবি, মার্কেটটিতে ছোট বড় মিলে কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশতর মতো দোকান ছিল। যার ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাকি যে পাঁচ ভাগ রয়েছে সেগুলোর মালামালও ব্যবহারযোগ্য না। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মার্কেটটিতে ২৪৩টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলে দোকানের সংখ্যা পাঁচশর বেশি হবে।

স্থানীয়দের মতে, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটটি অনেক পুরনো। এই মার্কেটে মোহাম্মদপুর, আদাবর, ঢাকা উদ্যানসহ আশেপাশের সব এলাকার ক্রেতারা আসতেন। সব শ্রেণির মানুষের চাহিদা পুরণ হতো এই মার্কেট দিয়ে। মুদি দোকান, কাঁচা বাজার, তৈরি পোশাক, থান কাপড়, গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য্য জিনিসপত্র, জুয়েলারি দোকান, ক্রোকারিজসহ সবকিছু মিলত এই মার্কেটে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা মেট্টো) দেবাশীষ বর্ধন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোহাম্দপুর এলাকায় বা তার আশেপাশে কোথাও পানির উৎস নেই। যেখান থেকে পানি দ্রুত নিয়ে আগুন নেভানো যাবে। মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল তাই গভীর নলকূপ বসাতে বলা হয়েছিল। সেটিও তারা করেনি। সবশেষ আজকে আগুন লাগার পর পানির কষ্টে ভুগতে হলো। দূ থেকে পানি আনতে গিয়ে মার্কেট পুরোটাই পুড়ে গেল। ফায়ার সার্ভিসের কিছুই করার ছিল না।’

সারাবাংলা/ইউজে/একে

আগুন আগুন নেভান কৃষি মার্কেট ব্যবসায়ী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর