Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেব না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:২০

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয় নাই, ব্যর্থ হবে না; আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এগিয়ে যাবে। আপনারা তৃণমূলের মানুষ, জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা আপনার-আমার সকলেরই দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে এগিয়ে যাবেন।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণলায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিজ্ঞাপন

দেশে প্রথমবারের মতো ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ উদযাপন হচ্ছে। ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’ স্লোগান নিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশের স্থানীয় সরকারের আওতাধীন প্রায় সাত হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধি সমাবেশে যোগ দেন।

এদিন সকাল ১১টা ২০মিনিটের পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ২১ বছর পর জনগণের শক্তি নিয়ে দেশে ফিরে আসার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘পিতা-মাতা-ভাই সব হারিয়েছি। বিদেশে ছোট বোন ও আমাকে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছিল। আমার ছোট বোন রেহানার পাসপোর্টটাও জিয়াউর রহমান দেয়নি। সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল রিনিউ করে দেয়নি। যে দেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল সেখানে নিজেদের নামটাও ব্যবহার করতে পারতাম না নিরাপত্তার জন্য। তবু তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। একাত্তরে যেমন আমাদের দেশের মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে, পরবর্তী সময়েও দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য দলের নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘হারিয়েছিলাম বাবা-মা-ভাই। পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা আমার পরিবার। বাংলাদেশে মানুষেই আমার আপনজন, তারাই আমার পরিবার। সেখানেই আমি খুঁজে পেয়েছি আমার সমস্ত শক্তি।’

গণভবনে আগত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি সমগ্র বাংলাদেশ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। গণভবনে আপনাদের উপস্থিতিতে এখানকার মাটি ধন্য হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব দেশ স্বাধীন করেছিলেন মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য, গণমানুষের কল্যাণের জন্য, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য। সেই তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আজ আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন। তাই আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যেন এই মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করার পাশাপাশি মন্দির মসজিদ প্যাগোডা গির্জা সংস্কার করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। আমরা যে শুধু মসজিদ করে দিচ্ছি সেটা নয়, আমরা কিন্তু মন্দির বা গির্জা-প্যাগোডা নির্মাণেও সহযোগিতা করছি। ঢাকেশ্বরী মন্দিরও আমরা তৈরি করে দিয়েছি। কারণ, বিএনপির আমলে অনেক মন্দির ভেঙে ও পুড়িয়ে দিয়েছিল। কাজেই আমাদের যারা অন্যান্য সম্প্রদায় তাদের সাথে আমরা এক হয়ে চলি। কারণ, একইসঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি।’ তাই এই বিষয়গুলোর দিকেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভালোভাবে দেখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশটাকে আরও উন্নত করতে চাই, এগিয়ে নিতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বব্যাপী মর্যাদা পেয়েছে; এই মর্যাদা ধরে রাখব। আর এখন ঘোষণা দিয়েছি, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যেটুকু সম্পদ আছে তা নিয়েই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সেভাবেই সকলকে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাই। আমরা একটানা তিনবারে সরকারে এসেছি। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ রেখে আমাদের উন্নয়নের কাজ করতে পেরেছি। গণতান্ত্রিক ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি। যার জন্য আমরা একেবারে গ্রাম পর্যন্ত উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো আমি জানি অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আর থাকবে না। ইনশাআল্লাহ আবার যদি জনগণের সেবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই সেগুলোও করে (পাকা) দেব। কারণ, প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো গড়ে উঠবে। আমার গ্রাম, আমার শহর- আপনারা জানেন সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সেভাবেই গড়ে তুলব।’

সারাদেশে অবকাঠামা উন্নয়নে রাস্তাঘাট-পুল-ব্রিজ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের উপর অভিযোগ দিয়েছিল। চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম নিজের অর্থে করব। সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মায় রেললাইনও করে দিয়েছি। এখন আর যোগাযোগের কোনো অসুবিধা নাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যতটুকু এগিয়েছিলাম তা ওই বিএনপি-জামায়াত জোট পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২৩ বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এটা যেন অব্যাহত থাকে। কাজেই জনগণের কাছে আমার একটাই আহ্বান থাকবে, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে আরও উচ্চ আসনে নিয়ে যেতে হবে।’

স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধের নিরাপদে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে জনগণকে তার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেওয়ারও আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর