মশা নিধনে হাল ছেড়ে দিয়েছে চসিক!
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আক্রান্ত বাড়ছে, প্রতিদিন মৃত্যুও হচ্ছে এক বা একাধিক। বিশেষত নগরীর পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কিত বাসিন্দারা। এ পরিস্থিতিতে মশা নিধন কিংবা ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ আশার সঞ্চার করতে পারছে না নগরবাসীর মধ্যে।
গত জুনে ঢাকঢোল পিটিয়ে মশা নিধনের ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। কিন্তু দু’মাসের ব্যবধানে সেই কর্মসূচি থিতিয়ে পড়ে। ড্রোন উড়িয়ে মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে জরিমানা আদায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করেছিল চসিক। সেই অভিযানও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। চসিকের ঢিমেতালে গতানুগতিক মশা নিধন কার্যক্রম, যা নগরবাসীর কাছে তেমন দৃশ্যমান নয়। এতে ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে।
চলতি বছরের গত সাড়ে আটমাসে সাত হাজারেরও বেশি ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ সরকারি হিসেব অনুযায়ী, মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। বছরের প্রথম পাঁচমাস ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও জুন থেকে সেটা বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ে এসে সেটা পুরোপুরি ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ হয়ে পড়ে। জুন মাসে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮৩ জন, একমাসের ব্যবধানে সেটা জুলাইয়ে প্রায় দশগুণ বেড়ে ২ হাজার ৩১১ জনে পৌঁছায়। আগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৩১১ জন। আর সেপ্টেম্বরের মাত্র ১২ দিনে ১ হাজার ৫৬৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া চলতি বছরের আটমাসেই মৃত্যুর সংখ্যা ২০২২ সালকে ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের। আর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৩ জনের। সেপ্টেম্বরে এ পর্যন্ত আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি জহরলাল হাজারীর দাবি, আক্রান্তের সংখ্যা নগরীর চেয়েও উপজেলায়, গ্রামগঞ্জে বেশি।
কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের মাসিক সমন্বয় সভায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মধ্যে আমরা জরিপ করে দেখেছি, ভাসমান রোগীর সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ বিভিন্ন উপজেলা কিংবা পার্শ্ববর্তী জেলার বাসিন্দা কিন্তু কর্মসূত্রে চট্টগ্রাম শহরে আসা-যাওয়া করেন এমন রোগীর সংখ্যা বেশি।’
‘এখন সেই রোগী চট্টগ্রাম শহরে মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন কি না সেটা বলা কঠিন। আবার অনেকে গ্রামগঞ্জে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন শহরের হাসপাতালে। সেটাকেও নগরীতে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে এখনও ডেঙ্গু পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে।’
গতবারের চেয়ে এবার চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ‘আশঙ্কাজনক’ উল্লেখ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত জুনেই সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে চিঠি দেন সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। অভিযোগ আছে, এর আগ পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপকে আমলে নেয়নি সিটি করপোরেশন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগও ছিল না। এমনকি জুনে যখন এডিস মশা নিধনে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করা হয়, তখনও করপোরেশনের কাছে যথেষ্ঠ ওষুধ মজুদ ছিল না।
তবে এখন মশার ওষুধের যথেষ্ঠ মজুদ আছে এবং প্রতিদিন অন্তঃত ৫টি ওয়ার্ড ও ৫টি চিহ্নিত প্রজননস্থলে সেই ওষুধ ছিটানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম। ১৭২টি স্প্রে মেশিন দিয়ে প্রতিদিন প্রশিক্ষিত ১৭৫ জন স্প্রে–ম্যান মশা নিধনে কাজ করছে বলে দাবি এই কর্মকর্তার।
চসিক সূত্র জানায়, পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী এডাল্টিসাইড, লার্ভা ধ্বংসকারী লার্ভিসাইড, লাইট ডিজেল অয়েল (এলডিও-কালো তেল) এবং নেটোরাল-ডিটি ট্যাবলেট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে আপাতত ফগার মেশিন ও এডাল্টিসাইডের ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে ওষুধ এবং পর্যাপ্ত স্প্রে-মেশিন আছে। প্রতিদিন পাঁচটি ওয়ার্ড এবং পাঁচটি এডিস মশার বিশেষায়িত প্রজনন পয়েন্টে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। বড় বড় খালগুলোতে আমরা কালো তেল ছিটিয়ে দিচ্ছি। আমেরিকা থেকে নেটোরাল-ডিটি ওষুধ আনা হয়েছে। সেটা ২০০-৪০০ লিটার পানি যেখানে জমে থাকে, সেখানে দেয়া হচ্ছে।’
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘লার্ভিসাইড, এলডিও. এডাল্টিসাইড পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন ওয়ার্ডে, ওয়ার্ডে নিয়মিত ছিটানো হচ্ছে। মশা নিধনের অভিযান চলমান আছে এবং সেটা আমরা করপোরেশনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে মনিটরিং করছি।’
নগরবাসীর অভিযোগ, চসিকের মশা নিধনের এই কর্মকাণ্ড শুধুই লোকদেখানো, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংস্থাটি মশা নিধনে কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছে। মাসে একবার-দু’বার ওষুধ ছিটাতে গেলেও শুধু রাস্তার পাশে ছিটিয়ে চলে যান চসিক কর্মীরা।
নগরীর লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মুরাদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন শত, শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মানুষ মরছে। এই নগরের একজন বাসিন্দা হিসেবে আমি আতঙ্কিত। কারণ, আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়ে চেয়ারে বসিয়েছি, এই পরিস্থিতিতে তারা আমাদের পাশে নেই। আপনি কি খাল-নালা পরিস্কার করতে সিটি করপোরেশনের কোনো জোরালো পদক্ষেপ দেখেছেন ? মশা নিধনে নগরবাসী আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোনো কাজ কি সিটি করপোরেশন করছে ? আমরা তো দেখতে পাচ্ছি না।’
নগরীর বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) সেই বিদ্যালয়ের সামনে পানি, ময়লা-আবর্জনা জমে থাকতে দেখা গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন অভিভাবক সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষেরও কোনো দায় নেই, এলাকার জনপ্রতিনিধিরও কোনো ভূমিকা নেই। অথচ কত শিশু আক্রান্ত হচ্ছে, কত শিশু মারা গেল !’
চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যবহৃত মশার ওষুধের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য সিটি করপোরেশনের অনুরোধে ২০২১ সালের মার্চে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আগস্টে কমিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে গবেষণা প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছিল, যাতে উঠে এসেছিল প্রচলিত রাসায়নিক ব্যবহারে মশা মারার পদ্ধতি প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ার কথা। গবেষক দল মশা নিধনে রাসায়নিকের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সুপারিশ করেছিল। একইসঙ্গে নালা-নর্দমায় পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ওপরও জোর দিয়েছিল।
কিন্তু গত দুইবছরেও সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন গবেষক দলের সদস্য সচিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ফগার মেশিনের পরিবর্তে লার্ভাসনিক মেশিন ব্যবহারের কথা বলেছিলাম। কারণ লার্ভাসনিক মেশিন ব্যবহার কররে যে শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তাতে লার্ভার অস্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালো তেল পরিবেশের ক্ষতি করে। এর পরিবর্তে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেছিলাম। ড্রেনে-নালায় ছোট মাছের চাষ করা, কিছু কিছু উদ্ভিদ আছে যেগুলো মশা সহ্য করতে পারে না, সেগুলো লাগানোর কথা বলেছিলাম।’
‘আমরা বলেছিলাম যে, দীর্ঘদিন ধরে একই ওষুধ ব্যবহার করলে সেটা সহ্য করে নেয়ার ক্ষমতা মশার শরীরে তৈরি হয়ে যায়। এজন্য প্রতিবছর মশার জেনেটিক চরিত্র বিশ্লেষণ করে ওষুধ নির্ধারণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে আমাদের চোখে পড়েনি। মশা নিধনে কোটি কোটি টাকা খরচ করলাম কিন্তু মশা মরল না, তাহলে লাভ কী ?’
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওষুধ সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে পরীক্ষা করে ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে তারপর ছিটাচ্ছি। আমরা হাল ছেড়ে দিইনি। আমাদের কার্যক্রম আরও জোরালো হয়েছে। আপনারা দেখবেন, কয়েকমাস আগেও শহরে মশার উপদ্রব যেভাবে ছিল, সেটা এখন নেই। আপনারা যাচাই করে দেখুন, মশা মরছে কি না। মশা মরছে, তবে আমরা ডেঙ্গু কমাতে পারছি না, এটা সত্য। বাস্তবে ডেঙ্গুর উৎস হচ্ছে মানুষের বাসাবাড়িতে। মানুষ সচেতন হতে হবে।’
কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফগার মেশিন দিয়ে এডাল্টিসাইড ছিটালে আওয়াজ বেশি হয়। তখন মানুষ মনে করে, মশা নিধনে অনেক কাজ করছে সিটি করপোরেশন। বাস্তবে এটা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়। স্প্রে মেশিন নিয়ে লার্ভিসাইড ছিটালে আওয়াজ হয় না। সেজন্য এটা তেমন দৃশ্যমানও হয় না। কিন্তু আমাদের কাজ বন্ধ নেই। আমরা লার্ভার প্রজননস্থলে ব্লিচিং পাউডারও ছিটিয়ে দিচ্ছি। এটা ছিটালে তিনদিন মেয়াদ থাকে। নগরবাসী কেউ চাইলে আমরা ওয়ার্ড অফিস থেকে সেটা বিনামূল্যে দিচ্ছি।’
কাউন্সিলর মোবারক আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শহরে আমরা প্রতিদিন, প্রতিমুহুর্তে তো সব জায়গায় ওষুধ ছিটাতে পারবো না। আমরা শহরের মধ্যে আক্রান্ত যেখানে পাচ্ছি, সেই নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করেও ওষুধ ছিটাচ্ছি। শহরে সেভাবে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে অনেকবেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে, এমন নয়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য বিশেষ এলাকা শনাক্ত করা যাচ্ছে না।’
নগরবাসীকে সচেতন করতে ড্রোন উড়িয়ে বাসাবাড়িতে মশার আবাসস্থল খোঁজার পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু করেছিল চসিক। কিন্তু গত দু’মাস ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৩ আগস্ট জলাবদ্ধতা নিয়ে চট্টগ্রামে এক জরুরি সভায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে চসিকের নিয়মিত অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সভায় তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে দুটি এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের পদ আছে। পাঁচমাস ধরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নেই। মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখেছি, তদবির করেছি কিন্তু পাচ্ছি না।’
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলীও ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে অভিযান শিথিল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
তবে মুহাম্মদ আবুল হাশেম দাবি করেছেন, আগস্টের প্রথম সপ্তাহে অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছিল। গত দু’দিন ধরে আবারও অভিযান শুরু হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ