সংসদে প্রধানমন্ত্রী— জনগণ ভোট না দিলে বিরোধী দলে যাব
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৬
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিলে ফের ক্ষমতায় আসবেন এবং জনগণ ভোট না দিলে বিরোধী দলে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের আসনগুলো দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অক্টোবর মাসে আরেকটা অধিবেশন বসবে। সেটাই হবে এই সংসদের শেষ অধিবেশন। পরে নির্বাচন হবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট দেয়, আবার এদিকে (সরকারি দল) আসব। না দিলে ওদিকে (বিরোধী দল) যাব। কোনো অসুবিধা নেই। জনগণের ওপর আমরা সবকিছু ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যেটা করবে, সেটাই হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২৪তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। এ সময় ভোটের অধিকার নিয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারা যেন ব্যাহত করতে না পারে। কোনো চক্রান্তের কাছে বাংলাদেশের জনগণ মাথানত করেনি, করবেও না।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন হয়েছে— উপনির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচন, প্রতিটি নির্বাচন স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এর থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কবে হয়েছে বাংলদেশে? বা পৃথিবীর কোন দেশে হয়ে থাকে?
সংসদ নেতা বলেন, অনেক দেশে নির্বাচন তো এখনো তাদের বিরোধী দল মানেইনি। এরকম তো ঘটনা আছে। তারপরও আমাদের নির্বাচন নিয়ে অনেক সবক শুনতে হচ্ছে। আজ যখন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আমরা করছি, তখনই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা— এর অর্থটা কী? আজ দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন কেন?
গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা তুলে ধরে দলটির প্রধান বলেন, জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছি আমরা। রাজপথে ছিল আওয়ামী লীগ। রক্ত দিয়েছি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই শহীদের তালিকা দেখলে আওয়ামী লীগের নাম পাওয়া যাবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছি, এটাই সব থেকে বড় কথা।
নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আজ দেখি নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিয়ে সবাই সোচ্চার। যেসব দেশ আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন— পঁচাত্তরর পর থেকে যে নির্বাচনগুলো হয়েছিল, সেই সময় তাদের এই চেতনাটা কোথায় ছিল? ওই সময় তাদের এই বিবেক কি নাড়া দেয়নি?
সমাপনী বক্তব্যে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আজ যখন আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার সরকারে এসেছে, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে কাজ করে যাচ্ছি, তার সুফল তো দেশের তৃণমূলের জনগণ পাচ্ছে। আমরা যে ওয়াদা দিই, সেটা রাখি। আমরা রাখতে পারি। সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এই অগ্রযাত্রাটা যেন অব্যাহত থাকে। বিশ্বব্যাপী বাঙালি যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদা অব্যাহত রেখেই আমরা এগিয়ে যাব। আবার দেখা হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সময়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও উন্নয়নের অগ্রগতি শুরু করলেও বঙ্গবন্ধুকে গত্যার হত্যার পর সেই অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালেও দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দেশের গ্যাস বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই ক্ষমতায় আসতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলোর অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আবার বিএনপি অংশ নিলেও সেটি তারা মূলত মনোনয়ন বাণিজ্য করার জন্যই করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাইকে হিসাব করে চলতে বলেন। পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথাও বলেন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণেও সবাইকে সচেতন হতে পরামর্শ দেন। বলেন, সরকার বা সিটি করপোরেশনকে শুধু গালি দিলে হবে না। তাদের কাজ তারা করে যাচ্ছে। নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হবে। নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে।
টানা ক্ষমতায় থাকার ফলেই দেশকে উন্নয়নের অগ্রাযাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। বলেন, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই চাই। দেশবাসীর কাছে সেটুকুই আমার আহ্বান।
মুদ্রাস্ফীতির কারণে কিছু মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিনিসের কিন্তু অভাব নেই। উৎপাদনে ঘাটতি নেই। উৎপাদনের জন্য যা যা দরকার সেটা করছি। বাজারে জিনিসের অভাব নেই, মনে হয় কৃত্রিম উপায়ে মূল্য বাড়ানো হয়, ইচ্ছা করে বাড়ানো হয়। অনেক সময় গোডাউনে রেখে দিয়ে কেউ কেউ এরকম খেলা খেলে। সরকার পদক্ষেপ নিলে কমে আসে।
এ অবস্থায় বাণিজ্যমন্ত্রীকে বাজার মনিটরিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাকে বলেছি বিশেষভাবে দেখার জন্য, কেন জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকের সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছি। ধীরে ধীরে সেটা বাড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো হচ্ছে না। অনেকেই বলছে টাকা ছাপিয়ে টাকা ছড়ানো হচ্ছে। টাকা ছাপানো একদম বন্ধ করে দিয়েছি। টাকা ছাপানো হবে না। ডলার বিনিময় হার যেন নমনীয় থাকে, সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন ইচ্ছামতো এলসি খোলা যায় না। যাচাই করে এলসি খোলা হয়। অতিমূল্য (ওভার ইনভয়েসিং) বা অবমূল্যায়নের (আন্ডার ইনভয়েসিং) সুযোগ আর নেই। এতে টাকা পাচারের সুযোগ কমে যায় বলে হয়তো কিছু ব্যবসায়ী বিপদে পড়ে যান। কিন্তু সেটা সঠিক বিপদ না। তাছাড়া দেশের মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেজন্য নিত্যপণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে টাকা দিচ্ছি। ডলারের ওপর চাপ কমাতে ভারতের সঙ্গে লেনদেনে নিজস্ব অর্থে কেনাবেচার চুক্তি করা হয়েছে। এতে ডলারের ওপর চাপ কমে যাবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনী ভাষণ সংসদ অধিবেশন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা