শেখ হাসিনাকে ফের প্রধানমন্ত্রী করার শপথ জনপ্রতিনিধিদের
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৫৮
ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ভোটযুদ্ধের দামামা বেজে ওঠার আগে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনীতির ময়দানে। টানা তৃতীয় সরকার পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। আগামী জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সারাদেশের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার অঙ্গীকার করলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দ্বাদশের ভোটযুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে শপথ নিলেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৩’ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিরা এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণলায়ের উদ্যোগে এ বছর দেশে প্রথমবারের মতো ‘স্থানীয় সরকার দিবস’ উদ্যাপন হচ্ছে। দিবসটি উদ্যাপনে স্লোগান রাখা হয়েছে ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’। এ উপলক্ষে গণভবনের খোলা মাঠে প্যান্ডেল করে আয়োজন করা হয় স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি সমাবেশ। সারাদেশের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিততে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে সমাবেশ চলে বিকেল ৩টা ২০ মিনিট পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য পর্ব শুরু হয়।
সারাদেশের সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া জনপ্রতিনিধি এবং যাদের নামে মামলা রয়েছে, তারা আমন্ত্রণপত্র পাননি।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের পক্ষে চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াজিষপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সরোয়ার্দী, গোলাপগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতীর শেখ শুকর আহম্মেদ, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদীর বেলায়েত হোসেন (বিল্লাল গাজী), নেত্রকোনা মোহনগঞ্জের ১ নম্বর বড়কাশিয়া বিরামপুরের মোতাহার হোসেন চৌধূরী, সাতক্ষীরা কলারোয়া সোনাবাড়ীয়ার বেনজীর হোসেন হেলাল, বাগেরহাট মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতীর মোরশেদা আক্তার, সুনামগঞ্জ সুরমা উপজেলার লালাবাজারের তোয়াজিদুল ইসলাম তুহিন এবং নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান ফেরদৌস কামাল জুয়েল বক্তব্য দেন।
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের পক্ষে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বেবী নাজনীন ও মৌলভীবাজার জুড়ী উপজেলার রিংকু রঞ্জন দাশ বক্তব্য দেন। জেলা পরিষদ সদস্যদের পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদ সদস্য মো. বাবুল মিয়া বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নিলুফার ইয়াসমিন ইতি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন বক্তব্য দেন। পৌরসভা মেয়রদের পক্ষে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী (জলি) ও নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ বক্তব্য দেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের পক্ষে রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি, খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার মেমং মারমা, চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার এ কে এম এহেছানুল হায়দর বাবুল ও পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার হারুন-আর-রশীদ হাওলাদার বক্তব্য দেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের পক্ষে বক্তব্য দেন পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম।
সিটি করপোরেশনের মেয়রদের পক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করার অঙ্গীকার করেন। এ লক্ষ্যে সরকারের উন্নয়ন তূণমূলে তুলে ধরে আগামী দিনের ভোটযুদ্ধে জয়ী হতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণের দ্বারে দ্বারে কাজ করার শপথ নেন তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রাউজানের নোয়াজিষপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সরোয়ার্দী বলেন, আপনি এই দেশের জন্য অনেক করেছেন। এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়। আমি মনে করি গ্রামীণ জনপদের প্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধ আছি। গ্রামের সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আগামীতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করব।
ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্মানি ভাতা দেশের অন্যান্য স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের ভাতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার বিবেচনা করতে আহ্বান জানান বাগাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন। বলেন, আপনার নির্দেশনা পেয়ে গ্রাম-বাংলার এই জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় যাবে এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অধিষ্ঠিত করে ঘরে ফিরবে।
প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করে নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, আপনার সাফল্য দেখে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নয়, আপামর মানুষ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আপনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচনে শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নয়, দেশের আপামর মানুষ উন্নয়ন দেখে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে পঞ্চমবারের মতো আপনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে।
নীলফামারী পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, আপনি ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে, দেশের ১৭ কোটি মানুষ ভালো থাকবে। আমরা দোয়া করি, আপনি যতদিন বেঁচে আছেন আল্লাহ যেন আপনাকে এই দেশের প্রধানমন্ত্রী করে রাখেন। আমাদের ৩২৯টি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা শপথ করেছি, আগামী নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করব। আপনি যাকেই যেখানে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তার পক্ষে কাজ করে নির্বাচিত করব।
রংপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার’ স্লোগান দিলে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা সমস্বরে গলা মিলিয়ে স্লোগানে সমর্থন জানান।
রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম এহেছানুল হায়দর বাবুল বলেন, নেত্রী, আপনি আমাদের সব দিয়েছেন। আমরা আর কিছু চাই না। আমরা চাই আপনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে।
সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন-আর-রশীদ হাওলাদার বলেন, তাহলে একাত্তর, পঁচাত্তর ও ২০০৪-এর খুনিদের পরাজিত করে পুনরায় শেখ হাসিনাকে আমরা প্রধানমন্ত্রী করতে পারব। এই হোক আজকে স্থানীয় সরকার দিবসের অঙ্গীকার।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সালমা রহমান হ্যাপী বলেন, আপনার নেতৃত্বে আমরা এটি সমৃদ্ধশালী দেশে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আপনাকে আমাদের বেশি প্রয়োজন। আপনি হাঁটুন বাঙালির অগ্রভাগে। আমরা আপনাকে আমাদের অগ্রভাগে দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। নেত্রী আপনাকে কথা দিচ্ছি, আমরা তৃণমূলে যারা আছি সবাই মিলে কথা দিচ্ছি, আগামী সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে আপনাকে বিজয়ী করে আমরা ঘরে ফিরব।
আজকের স্থানীয় সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অনেকেই সাবেক ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনে এই স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা সকলেই শপথ নিচ্ছি, জান বাজি রেখে যেভাবে আমরা বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি পঁচাত্তরের পরে করেছি, স্বৈরাচার জিয়া-এরশাদ আর বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবেলা করেছি, আজও ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবেলা করে আপনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে কাজ করব।
খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, একটি সরকার যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তখন ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে মানুষের হতাশা থাকে, কর্মীদের হতাশা থাকে। কিন্তু আপনি একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আপনি বাংলার মানুষকে যে অঙ্গীকার করেছিলেন, ওয়াদা করেছিলেন, আপনি পর্যায়ক্রমে ওয়াদা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই আমি মনে করি, আজ যারা আপনার সামনে বসে আছেন, তারা স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করছেন। সেই কাজের সফলতা ব্যর্থতা-সফলতা দুটোই থাকতে পারে। আপনার বিজ্ঞ দেশ পরিচালনা করার জন্য এ দেশের গরীব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আপনি যে প্রচেষ্টা এবং কঠোর পরিশ্রম করছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন আশাবাদ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আপনার দৃঢ়চেতা মনোভাব, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরাশক্তিকে আপনি যেভাবে মোকাবেলা করছেন, সেটি একমাত্র আপনাকেই মানায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেই আপনি এটি বলতে পেরেছেন, করতে পেরেছেন। আশা করি আগামী নির্বাচনে আপনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আমাদের নির্দেশনা দেবেন।
শিশুবান্ধব শহর ও নগর গড়তে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইভী বলেন, আপনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদের সার্কুলার জারি করেছেন। প্রতিটি সিটিকে আপনি শিশুবান্ধব নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে চান। অর্থাৎ আপনি খেলার মাঠ চান, পার্ক চান। শিশুবান্ধব পরিবেশ চান। কিন্তু সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাগুলোতে সেভাবে জায়গা নেই। আমরা আপনার নির্দেশ পালন করতে পারছি না। জেলা প্রশাসকের কাছে প্রচুর খাস জায়গা থাকে। আপনি যদি ওই জায়গা আমাদের ব্যবহার করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন, তাহলে আমরা কাজটি করতে পারব। আমরা জমির মালিক হতে চাই না, আমরা কেবল জায়গাটি ব্যবহার করতে চাই।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর