যাত্রীসংকটের শঙ্কায় উড়াল সড়কে উঠছে না বাস
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২৮
ঢাকা: সাড়ে ১১ কিলোমিটার উড়াল সড়কের কোথাও যাত্রী ওঠানামার সুযোগ নেই। কিন্তু টোল দিতে হবে ঠিকই। টোলের বাড়তি এই টাকার ভার গিয়ে পড়বে যাত্রীদের ঘাড়ে। বাস মালিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া গুনতে অনীহা রয়েছে অনেক যাত্রীরই। ফলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাস চালালে পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে না, গুনতে হবে লোকসান। এ কারণেই তারা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে তারা বাস চালাচ্ছেন না।
সড়ক কর্তৃপক্ষ বলছে, সাময়িক সমস্যা হলেও পুরো এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে সুফল পাবে সব ধরনের গাড়ি। আর উড়াল সড়ক দিয়ে যাত্রী পরিবহনে শিগগিরই চলতে শুরু করবে বিআরটিসির বাস।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক অন্যতম। যানজট কমিয়ে রাজধানীবাসীর যাতায়াত সহজ করতে প্রায় এক যুগ আগে ২০১১ সালে রাজধানীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। পিপিপি পদ্ধতিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল-বনানী-মহাখালী- তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও-কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্যের এই উড়াল পথ। ওঠা ও নামার জন্য আরও প্রায় ২৮ কিলোমিটারের র্যাম্প। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৭ কিলোমিটার পথের উড়াল সড়কটির ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার পথ গত ২ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরদিন ৩ সেপ্টম্বর থেকে উড়াল সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু উড়াল সড়ক দিয়ে চলছে না যাত্রীবাহী বাস।
বাসচালকরা বলছেন, পুরনো সড়ক দিয়ে চলাচলে যাত্রী পাওয়া যায়। কিন্তু উড়াল সড়কে যে সুযোগ নেই। তাই তারা পুরনো সড়ক দিয়ে বাস নিয়ে চলাচল করেন। কিন্তু টোল ঠিকই দিতে হবে। সেই টোলের সঙ্গে এখনো বাস ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি। ফলে পুরো বিষয়টিই লোকসানের কারণ হবে।
বাস মালিক সমিতি বলছে, বাস ভাড়ার নীতিমালাতেই উল্লেখ আছে টোলের সঙ্গে ভাড়া কীভাবে সমন্বয় করতে হবে। সে কারণেই যেসব গাড়ি উড়াল সেতু দিয়ে চলতে চায়, তাদের ভাড়া নিয়ে কোনো ধরনের জটিলতা হবে না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, সিটির গাড়িগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলবে না। কারণ তারা উড়াল সড়কে কোনো যাত্রী পাবেন না। নিচে তো জায়গায় জায়গায় তাদের স্টপেজ। আর দূরপাল্লার গাড়িগুলো যাওয়ার সময় যেতে পারবে, কিন্তু ফেরার সময় পারবে না। কারণ কাকলী, বনানী, মহাখালীতে অনেক যাত্রী নামেন। কিন্তু মহাখালী দিয়ে কোনো র্যাম্প নামেনি। এখন সেদিকে যাওয়ার বাসগুলো যাবে কোথায়?
এনায়েত উল্লাহ বলেন, আমার কোম্পানির বাসকে বলেছি উড়াল সড়ক ব্যবহার করার জন্য। ফার্মগেট থেকে তেঁজগাও ও আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত একটা সার্ভিস করা যেতে পারে, যদি সরকার রোড পারমিট দেয়। এমন যদি পরিকল্পনা করে এবং অনুমতি দেয়, তাহলে আমরা এটা করব।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঘুরে দেখা গেছে, খুব কময়েই গাড়ি পার হচ্ছে। অন্যদিকে নিচের পুরনো সড়কে সেই আগের মতোই যানজট। এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, উড়াল সড়ক চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত যত গাড়ি চলাচল করেছে, তার ৯৫ শতাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি। ছোট-খাটো ট্রাক ছাড়া বড় কিংবা কোনো ছোট বাস উড়াল সড়ক ব্যবহার করছে না।
বিষয়টি স্বীকার করে এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার সারাবাংলাকে বলেন, গত কয়েকদিনে ব্যক্তিগত গাড়িই বেশি উড়াল সড়ক ব্যবহার করছে। সিটিতে চলা গাড়িগুলোর স্বল্প দূরত্বে চলে, বেশির ভাগ যাত্রীই কম দূরত্বে যাতায়াত করে। সেখানে উড়াল সড়কে উঠলে যাত্রী পাবে না বাসগুলো, সেটি সত্যি। কিন্তু দূরপাল্লার বাস চাইলে যেতে পারে। এগুলো আস্তে আস্তে হবে।
এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের এই পরিচালক বলেন, এখানে টোল দিতে হবে, সেখানে ভাড়া সমন্বয়ের একটি বিষয় রয়েছে। আমরা এখন দেখছি, ছোট গাড়িগুলো বেশি চলছে। এখানে আমরা এক্সপ্রেসওয়েটি আংশিকভাবে চালু করেছি। যখন পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে, আশুলিয়ার অংশ যখন কাওলাতে মিশবে, তখন সুবিধা পাওয়া যাবে। কারণ ইপিজেড থেকে যেসব গাড়ি চট্টগ্রাম যাবে তাদের তো শহরের মধ্যে থামার দরকার হবে না। ওপর দিয়ে বাইপাস করে চলে যাবে। তাদের নিচে চলার দরকার হবে না।
এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত যতগুলো গাড়ি চলেছে তার ৯০ শতাংশের বেশি ব্যক্তিগত গাড়ি। যানজটমুক্তভাবে সহজে গন্তব্যে পৌঁছানোর সুযোগ নিতেই উড়াল পথে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ পরিস্থিতিতে উড়াল সড়ককে সামনে রেখে নতুন কয়েকটি বাস নামানোর চিন্তা করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিসি)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আপাতত সাত-আটটি গাড়ি ছাড়ব। এরই মধ্যে সাইট ভিজিট করেছি। রুট নির্ধারণ চলছে। আশা করি এ সপ্তাহে চূড়ান্ত করে উদ্বোধন করতে পারব। আমাদের গাড়ি, চালক সবই প্রস্তুত।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এই উদ্যোগের উদ্বোধন করবেন বলে জানান বিআরটিসির চেয়ারম্যান।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর