Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ধানের নতুন জাতে প্রথমবারেই আশানুরূপ ফলন, চাষে আগ্রহী কৃষক

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৫০
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় আউশ মৌসুমে নতুন জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে প্রথমবারেই আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন কৃষককেরা। কম সময়ে অধিক ফলন, চাষে খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের এ জাতের ধান চাষে আগ্রহ বেড়েছে।  সাধারণত আউশ মৌসুমের অন্য জাতের ধানে ১৬ থেকে ১৭ মণ ফলন হলেও নতুন এই ধানে বিঘাপ্রতি গড়ে ২২ মণ ফলন পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। এখন শ্রমিকেরা দল বেঁধে কাঁচি দিয়ে ধান কাটছেন। আবার কোথাও কোথাও কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারে চলছে ধান কাটার উৎসব।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় গত আউশ মৌসুমে জেলার সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। আশানুরূপ ফলন পেয়ে ওই বীজ থেকে চারা তৈরি করে চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে এ ধানের আবাদ করে কৃষকরা। তাতে ৭ হাজার ১৪৩ মেট্রিক টন ধান ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে জেলায় আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৮ হাজার ৭৬৭ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ১০ হাজার ৬০০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর। গত ৮ বছরের ব্যবধানে আউশের আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে নতুন জাতের ব্রি-৯৮ ধানের চাল লম্বা, চিকন, সাদা ও দামও বেশি হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বাড়ছে। গত বছরই প্রথম ১০ হেক্টর জমিতে এই ধানের আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৮৯১ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪৭ হেক্টর।

দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের কৃষক জগবন্ধু বোস জানান, মোক্তারপুর ও কানাইডাঙ্গা গ্রামে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর আউশ মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে আসছেন। গত বছর পুরো জমিতে ব্রি-৪৮ আবাদ করেছিলেন। এ বছর ২০ বিঘা জমিতে ব্রি-৪৮ এবং ২০ বিঘা জমিতে ব্রি-৯৮ আবাদ করেছেন।
সদর উপজেলার খেঁজুরতলা গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন আমরা খাটোবাবু ধানই আবাদ করে আসছিলাম। অনেকের কাছে শুনে ব্রি-৯৮ ধান দেখতে এসেছি। ধানটা খুবই চিকন আর লম্বা, চিটে নেই। সামনে বার আমি ৫ বিঘা জমিতে এই ধান আবাদ করব।’

কার্পাসডাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, ‘উন্নত জাতের অভাব, খরা, বন্যা ও অতিবৃষ্টি এবং তুলনামূলক ফলন কম হওয়ায় আউশ ধান চাষ দিন দিন কমছিল। দেশের কৃষিবিজ্ঞানিদের প্রচেষ্টায় আউশ মৌসুমের জন্য উদ্ভাবিত ব্রিধান-৯৮ খুবই সম্ভাবনাময়। সাধারণত অন্যান্য জাতের ধান বীজতলা থেকে চারা তুলে লাগানোর পর ১০৫ থেকে ১২০ সময় লাগে। সেখানে ব্রি-৯৮ ধান ৯০ থেকে ১০০ দিনে কৃষক ঘরে তুলতে পারছেন।’

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘এর আগে এ জেলায় ব্রিধান-৯৮ চাষ হয়নি। গত মৌসুমের শুরুতে আউশ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ব্রি ধান- ৯৮ নিয়ে কাজ শুরু করি। ১০ হেক্টর জমিতে উফশি জাতের ব্রি ধান-৯৮ চাষ করে ৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। এমন ফলন দেখে কৃষকরা বেশ খুশি হয়।’
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ব্রি ধান- ৯৮ মাঠপর্যায়ে জনপ্রিয় করতে পারলে দেশে আউশ আবার বড় ফসলে পরিণত হবে। একইসঙ্গে এটি লাভজনক ফসল, এই ধানে সেচ ও সার কম লাগে। এতে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। ধানের আকার চিকন ও লম্বা এবং উৎপাদনে সময় কম লাগায় কৃষকেরা এই জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।’ ব্রি-৯৮ জাতের ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরণের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এমও

আউশ কৃষক ধানের নতুন জাত ফলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর