৩২ পৌরসভায় পানি সরবরাহ: প্রকল্প শেষ হয়নি ৫ বছরেও, কমছে ব্যয়
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২০
ঢাকা: দেশের ৩২টি পৌরসভায় সুপেয় পানি সরবরাহসহ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। দুই বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রকল্পটি একবার সংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে শেষ করা যায়নি পাঁচ বছরেও। এখন আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন প্রকল্পে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় বাড়লেও এই প্রকল্পের ব্যায় উল্টো কমানোর প্রস্তাব করছে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতেও সামান্য কিছু ব্যয় কমানো হয়েছিল। তবে এবার ওই সংশোধনী ব্যয় থেকেও ১১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট প্রকল্পের ১৬ শতাংশ বা প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ।
‘৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রন মেন্টাল স্যানিটেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ব্যয় কমিয়ে ও মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব রেখে প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৭১২ কোটি ৬৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে সামান্য কমিয়ে ব্যয় ধরা হয় ৭১২ কোটি ৫২ লাখ চার হাজার টাকা। এবার প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ১১৪ কোটি ৯৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকা কমিয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ৫৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যয় কমছে ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।
এদিকে প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, আমরা পিইসি সভা করব। এরপর জানা যাবে কোন কোন খাতে ব্যয় কমবে, কোন কোন খাতে বাড়বে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের ৩২টি পৌরসভার জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে। সেই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের অনেক পৌরসভাতেই জনসংখ্যার তুলনায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। ফলে এসব পৌরসভায় পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩২ পৌরসভার জন্য পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশনের প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে।
প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১২ কোটি ৫২ লাখ চার হাজার টাকা। বর্তমানে সুষ্ঠু বাস্তবায়নের সুবিধার জন্য প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় কমিয়ে ৫৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে চলমান প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
যেসব পৌরসভায় প্রকল্প
প্রকল্পের অধীন পৌরসভাগুলো হচ্ছে বরগুনা জেলার বেতাগী; পটুয়াখালীর বাউফল; ব্রাক্ষণবাড়িয়ার কসবা; চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ; চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সাতকানিয়া; কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট; ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভুঁইয়া; নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী; দিনাজপুরর হাকিমপুর; কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী; গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ; ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ; রাজশাহীর আড়ানী; ফরিদপুরের নগরকান্দা; গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর, গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর; এবং কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও কুলিয়ারচর।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে জমি বুঝিয়ে দিতে না পারায় ২১টি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামো নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্প থেকে ২১টি কঠিন বর্জ্য সটিং নির্মাণ ও ২১টি মানববর্জ্য কাঠামো নির্মাণ অঙ্গ বাদ দেওয়া হয়েছে। এগুলো অসমাপ্ত রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে মূল উদ্দেশ্য অর্জন হবে কি না— তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের।
এ ছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব পৌরসভায় জমি পাওয়া যাবে কি না এবং কোন কোন পৌরসভা বাদ দেওয়া হয়েছে— তা নিয়েও পরিকল্পনা কমিশনের প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের কিছু কিছু অঙ্গে খরচ বাড়লেও অনেক অঙ্গেই খরচ অনেকটা কমেছে। এসব খরচের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলবে কমিশন। কিছু কিছু অঙ্গের কলেবর বাড়ানো নিয়েও জানতে চায় কমিশন। প্রশ্নগুলোর ইতিবাচক উত্তর পেলে প্রকল্পের দ্বিতীয় এই সংশোধনী অনুমোদন হতে পারে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, উৎপাদক নলকূপের সংখ্যা বাড়লে খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রদান এবং নিরাপত্তা দেওয়াল পাম্প হাউজ নির্মাণ বেড়েছে। বৈদ্যুতিক প্যানেল বোর্ড, কলাম পাইপসহ সাব-মারসিবল পাম্পের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক লাইনসহ ট্রান্সফরমার সংযোগ বেড়েছে। রাস্তা মেরামতসহ পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্যও বেড়েছে। অন্যদিকে গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কমেছে। ট্রান্সমিশন লাইনসহ সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট নির্মাণ কমেছে। সমন্বিত মানববর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাঠামোও কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব সমন্বয় করতেই প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর