খলিস্তানপন্থি নিজ্জার হত্যা: ভারত নিয়ে সুর পাল্টালেন ট্রুডো
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৬
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে খলিস্তানপন্থি শিখ নেতা হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় কানাডা-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নিজেই বলেছিলেন, এ হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে পারে। এর জের ধরে দুই দেশ দুই কূটনীতিককে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারও করে।
এর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই কিছুটা নমনীয় হয়েছেন ট্রুডো। বলেছেন, ভারতকে উসকানি দিতে চান না বা উত্তেজনা বাড়াতে চান না। তবে ভারত যেন নিজ্জার হত্যাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাস্টিন ট্রুডো। সেখানেই তিনি ভারত সরকারের প্রতি নতুন বার্তা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- এবার কানাডার জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত
ট্রুডো বলেন, আমরা কাউকে উসকানি দিতে চাই না কিংবা কারও সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে চাই না। আমরা ভারত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তবে সবকিছু হতে হবে স্পষ্ট এবং উপযুক্ত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে হতে হবে।
এর আগে গত ১৮ জুন ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে হারদ্বীপ সিং নিজ্জারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে আলাদা ও স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের বড় নেতা ছিলেন। তবে ভারত তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। ভারতের অভিযোগ, নিজ্জার দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলেন।
নিজ্জার হত্যার তিন মাস পর এ ঘটনায় ভারত সরকারের গুপ্তচরদের জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে কানাডা। সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাউজ অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, কানাডার নাগরিক নিজ্জার হত্যায় ভারত সরকারের গুপ্তচরদের জড়িত থাকার প্রাণিধানযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে। কানাডার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সে অভিযোগ তদন্ত করছে। পরে কানাডায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) প্রধানকে বহিষ্কার করা হয়।
আরও পড়ুন- শিখ নেতা হত্যা: কানাডা থেকে ‘র’ প্রধান বহিষ্কার
এদিকে নিজ্জার হত্যায় ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত। দেশটি বলছে, এ অভিযোগ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পরে ভারতে নিযুক্ত কানাডার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে নয়া দিল্লি। তাকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছাড়তে বলা হয়েছে।
ভারত ও কানাডার মধ্যে এই উত্তেজনার শুরু সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন থেকে। ওই সম্মেলনের সাইডলাইনে ট্রুডো ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ওই বৈঠকেও মোদির কাছে নিজ্জার হত্যা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন ট্রুডো।
ওই সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, কানাডা বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহ দিচ্ছে এবং ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে। এতে ভারতীয় সম্প্রদায় ও তাদের উপাসনালয় হুমকির মধ্যে পড়ছে।
ট্রুডো ওই সময় সাংবাদিকদের বলেন, কানাডা সবসময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়পরায়ণতা ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সমর্থন করে এবং করবে। একইসঙ্গে সহিংসতা ও বিদ্বেষও প্রতিরোধ করবে।
ভারতের পাঞ্জাব মূলত শিখ অধ্যুষিত রাজ্য। এর বাইরে শিখ সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন কানাডায়। এই শিখরা স্বাধীন রাষ্ট্র খলিস্তানের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। কানাডাতেও তারা নিয়মিতই খলিস্তানের দাবিতে মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন। খলিস্তানের দাবিতে আন্দোলনরত তেমনই এক সংগঠন ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্সের’ (কেটিএফ) প্রধান ছিলেন নিজ্জার।
এদিকে খলিস্তানের দাবিতে আন্দোলনকে ভারত সরকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসমূলক বলে অভিহিত করে আসছে। কানাডায় এ দাবিতে কর্মসূচি পালন নিয়েও ভারত সরকার ক্ষুব্ধ ছিল দেশটির ওপর। পাশাপাশি নিজ্জারের বিরুদ্ধে ভারতে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগও ছিল ভারতের। তাকে গত ১৮ জুন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের পাঞ্জাবি অধ্যুষিত শিখদের ধর্মীয় উপাসনালয়ের পার্কিংয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সারাবাংলা/টিআর
খলিস্তান খলিস্তানপন্থি নেতা জাস্টিন ট্রুডো টপ নিউজ নরেন্দ্র মোদি নিজ্জার হত্যা হারদ্বীপ সিং নিজ্জার