Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টানেল উদ্বোধনের পর চট্টগ্রামে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহু প্রতীক্ষার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন শেষে চট্টগ্রামে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের দিনটি আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) নগরীর পতেঙ্গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মুখ্য সচিব। এর আগে, তিনি সফরসঙ্গীদের নিয়ে টানেল পাড়ি দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা প্রান্তে গিয়ে আবার ফিরে আসেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে যে টানেল যাচ্ছে, সেটি দেখার জন্য এসেছি। এটি সরকারের একটি সিগনেচার প্রজেক্ট। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের অসাধারণ কর্মনৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন। এটি আমাদের জন্য অনেক বড় সাফল্য, অনেক বড় গর্ব।’

‘এই টানেল শুধু দু’পাড়কেই সংযুক্ত করবে না, ওয়ান সিটি টু টাউনও বাস্তবায়ন হয়েছে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা একে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। এছাড়া দু’পাড়ে অবকাঠামোগত যে বিশাল উন্নয়ন হয়েছে এবং আগামীতেও হবে এটা আমরা ধরে রাখতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন। টানেল উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী এখানে জনসভায় বক্তব্য দেবেন। আমরা আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করতে চাই, যেন সারা বাংলাদেশের মানুষ এটি নিয়ে গর্ব করে। তিন দশমিক তিন এক কিলোমিটারের এই টানেল, মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটের গাড়ি পার হওয়া যাবে। নদীর ১৮ থেকে ৩১ মিটার তলদেশ দিয়ে গাড়ি চলে যাবে, আমরা দিনটির অপেক্ষায় আছি।’

বিজ্ঞাপন

টানেলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মুখ্য সচিব বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে দুটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে। পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশও টানেলের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য সিডিএ একটি প্রকল্প নিয়েছে। শিগগিরই সেটার কাজ শুরু হবে। নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার, সবটুকুই আমরা করব।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ছিলেন।

কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

নগরীর পতেঙ্গায় নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

টানেল দিয়ে মোটর সাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল হার চূড়ান্ত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ। টানেল উন্মুক্ত করার দিন থেকে টোলের হার কার্যকর হবে বলে সেতু বিভাগের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে।

উল্লেখ্য, ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে যুক্ত করবে। এই টানেলের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। এটা বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নদী তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

কর্ণফুলী টানেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া

বিজ্ঞাপন

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর