দাম নির্ধারণের পর হিমাগারগুলোতে আলু বিক্রি বন্ধ!
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৯
জয়পুরহাট: সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৭ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হচ্ছে না হিমাগারে। কম দামের অভিযোগ তুলে আলু বিক্রি করছেন না হিমাগারে রাখা আলুর মালিকরা। বর্তমানে ৩৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হলেও চাহিদা মতো আলু মিলছে না হিমাগারগুলোতে। হিমাগারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরা বাজারেও আলুর দাম কমছে না। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই দাম বেড়েছে আলুর, এমন দাবি হিমাগার কর্তৃপক্ষের।
হিমাগারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ১৯টি হিমাগারে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু মজুদ করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় আলুর চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। জেলার হিমাগারগুলোতে আলুর মজুদ রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন। গেল রোববার থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির সরকারি ঘোষণার পর থেকে হিমাগারে আলু বিক্রি করতে আসছেন না আলু ব্যবসায়ীরা। ফলে জেলার হিমাগারগুলোতে কমে গেছে আলুর বেচা-কেনা।
সরকার খুচরা আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বেঁধে দিলেও বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু। জেলার বাজারগুলোতে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। তবে নজরদারির কারণে বস্তাপ্রতি এক-দেড়’শ টাকা টাকা দাম কমলেও ২৭ টাকা কেজিতে কেউ আলু বিক্রি করতে আসছেন না হিমাগারে।
অথচ কয়েকদিন আগেও জেলার প্রতিটি হিমাগার থেকে প্রতিদিন আলু বিক্রি হয়েছে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কেজি। আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার কেজিরও কম। সরকার দাম কমে দেওয়ায় জেলার আলুর বাজারে এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এমন দাবি স্থানীয় আলু ব্যবসায়ীদের।
হিমাগার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ীরা যদি তাদের আলু বিক্রি না করে, তাহলে হিমাগার কর্তৃপক্ষের করার কি আছে। তারা সর্বোচ্চ ব্যবসায়ীদের তালিকা দিতে পারেন, এর বাইরে করার কিছুই নেই।
আর ভোক্তা অধিকারের দাবি, আগামী ২/১ দিনের বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি শুরু করতে হবে। তা না করা হলে হিমাগার সিলগালা করে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।
আলু ব্যবসায়ী মাসুদ আলী বলেন, ‘সরকার ২৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির সরকারি ঘোষণার পর থেকে বেশিরভাগ হিমাগারগুলোতে বিগত দিনের মতো আলু বিক্রি হচ্ছে না। যারা আলু মজুত করে রেখেছে তারা আলু বিক্রি না করার কারণে আজ এই অবস্থা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বিগত বছরের লোকসানের ভার থেকে আজও মুক্ত হতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকের ঋণ আজও জট বেঁধে আছে, তখন সরকার কোথায় ছিল? আজ ব্যবসায়িরা লাভ করছে, তা আর সহ্য হচ্ছে না। সবাই উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশাসনের চাপাচাপির কারণেই ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছে। তাছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণের সময়ও আছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি ঘটে।
নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেদিন থেকে আলুর দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি না করলে আমাদের করার কি আছে। কয়েকদিন আগেই প্রতিদিন ৭ থেকে ৮টি করে আলুর ট্রাক লোড হতো। এখন আলু বিক্রি বন্ধ থাকায় সেড ফাঁকা পড়ে আছে। তাছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদও আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আছে।’
বগুড়া আঞ্চলিক ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই মূলত আলুর দাম এতো বেশি। হিমাগারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমান আলু রয়েছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজির বিপরীতে বেশি দরে আলু বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে জরিমানাসহ তাদের সতর্ক করা হচ্ছে।’
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী জানান, যে উপজেলাগুলোতে হিমাগার রয়েছে, সে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তরা নিয়মিত হিমাগারগুলোতে যাচ্ছেন। সেখানে আলুর মজুদ কতোগুলো কতটুকু বের হচ্ছে সেগুলোর উপর আমরা কঠোর নজরদারি শুরু করেছি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আশা করছি সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে বাজারে আলু বিক্রি হবে।
সারাবাংলা/এমও