নেতাদের কোন্দলে বন্ধ সমবায় সমিতি, ক্ষতি হাজারো গ্রাহকের
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৮
ঠাকুরগাঁও: নেতাদের কোন্দলের জেরে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় ‘রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতি’র লাখ লাখ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক। অপরদিকে দায় এড়াতে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে সমবায় কর্তৃপক্ষ। এতে চরম ক্ষতির আশঙ্কায় শত শত গ্রাহক। বিভিন্ন দফতরে গিয়েও মিলছে না সুরাহা।
সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ কলেজ বাজারে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে সমিতির সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ জন। কিন্তু পরবর্তীতে সমিতির কার্যক্রম বাড়ার সাথে সাথে সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, একপর্যায়ে সমিতির সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ২০০ এর অধিক। ২০০০ সালে রংধুন বহুমুখী সমবায় সমিতি সমবায় অধিদফতর থেকে নিবন্ধন লাভ করে। কোটি কোটি টাকা সমিতির মূলধনও দাঁড়ায়। সমিতিটির ব্যাপক নাম ডাকও ছিল কিন্তু কমিটির কোন্দল, অর্থ-আত্মসাৎ এবং কিছু নেতার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরে সমিতির কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ায় ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সমবায় কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন বাতিল করে সমবায় কর্তৃপক্ষ।
সমিতির একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতি এক সময় উত্তর বঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সমিতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। কিন্তু কতিপয় ব্যাক্তির কারণে সমিতির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে এবং সদস্যদের জমানো লাখ লাখ টাকা, ভোগদখলীয় জমি, মোটরসাইকেল, ৪টি মাইক্রোবাস আত্মসাৎ করে একটি চক্র। আর এই চক্রের সদস্যরা হলেন সাবেক সভাপতি আমিনুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণিসহ আরো অনেকে। যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
তবে আমিনুল ইসলাম এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই, আর গিয়াস উদ্দীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ওসমান গণি অবসপ্রাপ্ত একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, তিনি এখনও দৈনিক ভিত্তিতে ব্যাংকে কর্মরত। তারা প্রভাব খাটিয়ে এ সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। গিয়াস উদ্দীনের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ভূমি দখলেও অভিযোগ রয়েছে।
সমিতির এক ভূক্তভোগী সদস্য আমিরুল হক বলেন, ‘সমিতিতে আমার প্রায় ৪৮ হাজার টাকা জমানো আছে। কিন্তু সেই টাকা কোনভাবেই ফেরৎ পাচ্ছি না। সমিতির জায়গা ছিল, অনেক মালামাল ছিল সেগুলোও এখন ভোগদখল করে খাচ্ছেন একটি চক্র।’
সমিতির আরেক সদস্য আব্দুল বারি বলেন, ‘আমি টাকা চাইতে গেলে আমাকে উল্টো ধমক দেখায়, আমাকে রাগ দেখায়।’
সমিতির জায়গায় ফলের দোকান করেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘অনেক টাকা জামানত দিয়ে আমি দোকান ঘর ভাড়া নিয়েছি গিয়াস উদ্দীনের কাছে। তিনি প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে যান।’
একই কথা বলেন আরেক ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন, তিনিও গিয়াসের ভাড়া দিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আলম বলেন, ‘সমিতিটি এক সময় উত্তরবঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সমিতি ছিল। কিন্তু সমিতির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীনের কারণে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। সমিতির দোকান ঘর ছিল, যা সমিতির পক্ষ থেকে ভাড়া দেওয়া ছিল। কিন্তু গিয়াস উদ্দীন তা নিজের দখলে নিয়ে আত্মসাৎ করছে।’
রংধনু বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম ও ওসমান গণি দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করে ফেলে।’
আবার ওসমান গনি বলছেন, প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পিছনে দায়ি গিয়াস উদ্দীন।
আর আমিনুল ইসলাম বলছেন, ‘মিটিং ডাকতো না, টাকার হিসাব নিকাশ দিতো না, সে নিজে ঋণদান সমিতি করে সেখানে টাকা সরিয়ে নেয়। ধ্বংসের পিছনে দায়ি ওসমান গণি ‘
পীরগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেন, ‘কতিপয় অসাধু সদস্য নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমিতির সম্পদ এবং অর্থ লোপাট করার জন্য, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নিবন্ধন বাতিল করেছেন।’
জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের চিত্র দেখে সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল হয়। তখন যারা ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে ছিলেন তারাই নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করেছিল। অন্য কোনভাবে বাতিল করার সুযোগ নেই।’
সারাবাংলা/এমও