কমডোর রাব্বানী হত্যা: খালাস পাওয়া আসামির পুনঃবিচারে যাবজ্জীবন
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুই দশক আগে বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা মামলার সাক্ষী অবসরপ্রাপ্ত কমডোর গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া এক আসামিকে পুনঃবিচারে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও একমাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রবিউল আলম রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত মো. সাইফুল প্রকাশ বিলাই সাইফুল প্রথম দফা বিচারে খালাস পেয়েছিলেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে পুনঃবিচারের মুখোমুখি হতে হয় সাইফুলকে।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক কুমার দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘হাইকোর্ট আপিল আদেশে বলেছিলেন, আসামি সাইফুলের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষ্য বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনা ছাড়াই রায় দেওয়া হয়েছিল। ফলে আসামি বিচারে খালাস পেয়েছিলেন। হাইকোর্ট থেকে নথিপত্র বিচারিক আদালতে পাঠিয়ে ফ্রেশ জাজমেন্টের আদেশ দেওয়া হয়েছিল। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার নথি আসার পর আসামি সাইফুল আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।’
‘এরপর দু’জন সাক্ষীকে রি-কল করে পুনরায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে বুধবার। এরপর জামিনে থাকা সাইফুলকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। আজ রায়ের মাধ্যমে এটা প্রমাণ হয়েছে যে, আসামি সাইফুল এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’
নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশে গুলিবিদ্ধ হন। ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ওই বছরের ২৪ এপ্রিল মারা যান। সেসময় তিনি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
ওই ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম এমতাজুল ইসলাম এজাহার দায়ের করেন। ওই বছরের ২৮ আগস্ট সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।
আসামিরা হলেন- আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেক ও মো. হাশেম।
২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মো. সেলিম, মো. হাশেম ও সোহেলকে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(বি) ও ৩০২ ধারায় পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল ও মনছুর আলমকে বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অশোক কুমার দাশ সারাবাংলাকে জানান, নিম্ন আদালতের রায়ের পর মামলার বাদী হাইকোর্টে দুই আসামি আবু নাসের ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে এবং আসামি সাইফুলের খালাসের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীর সাজা বাড়িয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন।
এছাড়া খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলামের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নতুন করে রায় দিতে বিচারিক আদালতে নথি ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ