সিগারেট কেনা নিয়ে ঝগড়া, পরে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপে সংঘর্ষ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ছয় জন আহত হয়েছেন। দোকান থেকে সিগারেট কেনার সময় কথা কাটাকাটি থেকে সংগঠনটির কিছু নেতাকর্মী এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ালে এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল ও শাহআমানত হলের সামনে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বিবদমান দু’পক্ষ হলো- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তক ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)। এর মধ্যে সিক্সটি নাইন গ্রুপটি চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু এবং সিএফসি সহ-সভাপতি মির্জা খবির সাদাফের অনুসারী। টিপু চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং মির্জা খবির সাদাফ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, শাহজালাল হলের সামনে একটি দোকানে ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন গ্রুপের এক কর্মী সিগারেট কিনতে যায়। সিগারেট কেনা নিয়ে সেখানে থাকা সিএফসি গ্রুপের এক কর্মীর সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। সিএফসি গ্রুপের ওই কর্মী তাকে গালাগাল দেয়। সিক্সটি নাইন গ্রুপের কর্মী তার নাম-পরিচয় জানতে চায়। কিন্তু নাম-পরিচয় না বলে সে শাহ আমানত হলের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় সিক্সটি নাইন গ্রুপের ওই কর্মী আরও কয়েকজন নিয়ে চিৎকার করতে করতে শাহ আমানত হলের সামনে যায়। তখন সিএফসি গ্রুপের ওই কর্মীর সঙ্গে কয়েকজন বেরিয়ে এলে মারামারি শুরু হয়।
এক পর্যায়ে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা পরস্পরের দিকে ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র অনুপ সরকার আকাশের হাতে আঘাত করে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আকাশ সিক্সটি নাইন গ্রুপের সঙ্গে জড়িত।
সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা চবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম সাইদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগের সংঘর্ষের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে সিনিয়ররা শাহজালাল হলের সামনে দোকানে বসে সেই মামলার বিষয়টি সমাধান করছিলাম। তখন সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে আমাদের ওপর হামলা করে।’
সিএফসি গ্রুপের নেতা চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিল। সেই প্রোগ্রাম চলাকালেই আমারে ওপর হামলা হয়েছে।’
চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু অবশ্য দাবি করেছেন, র্যাগ ডে পালন নিয়ে জুনিয়র কিছু কর্মীর মধ্যে ‘ঝামেলা’ হয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.নূরুল আজিম সিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘একেবারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। উভয়পক্ষের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, যাতে আর কোনো সমস্যা না হয়।’
চবি মেডিকেল সেন্টারের প্রধান চিকিৎসক ডা. আবু তৈয়ব সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আহত অবস্থায় ছয় জনকে পেয়েছি। দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি চার জনকে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, চবি ক্যাম্পাসে শাহ আমানত ও শাহজালাল হল দুটি পাশাপাশি। শাহ আমানত হলে সিএফসি গ্রুপ এবং শাহজালাল হল সিক্সটি নাইন গ্রুপের আধিপত্য বেশি।
এর আগে, গত ২ জুন রাতে শাহ আমানত হল সংলগ্ন একটি খাবারের দোকানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। সিক্সটি নাইন উপগ্রুপের নেতা ও চবি ছাত্রলীগের উপ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মাহফুজ আল মামুন ওই হোটেলে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। সিএফসি উপগ্রুপের তৃতীয় বর্ষের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) ৮ থেকে ১০ জন কর্মীও সেখানে খাবার খেতে যায়। এ সময় সিএফসির কর্মীরা মাহফুজকে সরে গিয়ে জায়গা দিতে বলেন। এ নিয়ে ওই কর্মীদের সঙ্গে মাহফুজের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে মারামারিতে চবি ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক রমজান হোসাইন গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
সারাবাংলা/এমএ/পিটিএম