জাপায় রওশন শিবির চাঙ্গা, জি এম কাদেরপন্থিরা নীরব
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২০:১১
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসতে না আসতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে উত্তাপ। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আগে থেকেই নির্বাচনসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দুই শিবিরে বিভক্ত। রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়েও দেখা দিয়েছে বিপরীত চিত্র। রওশদ এরশাদ শিবির যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে, জি এম কাদের তখন একেবারেই নীরব হয়ে পড়েছেন।
জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, সম্প্রতি জি এম কাদের ভারত সফর করেছেন। সেখানে তিনি ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। নেতা-কর্মীদের ধারণা, সেখান থেকে তিনি যে পরামর্শ নিয়ে এসেছেন, সেটি অনুসরণ করতে গিয়েই হয়তো জি এম কাদের নীরব রয়েছেন। ভারত সফরের আগে তিনি যেভাবে সরকারের সমালোচনা করে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতেন, সেই বক্তব্যও সে কারণেই বন্ধ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন রওশন এরশাদ। নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে আগামী মাসে দলের যৌথ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জাপার দলীয় সংসদ সদস্য, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কো-চেয়ারম্যানরা এখন তার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছেন। তারা যৌথ সভায় অংশ নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। রওশন এরশাদের অনুসারীরা জানিয়েছেন, যৌথ সভায় জি এম কাদেরপন্থি সবাইকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। তারা সাড়া না দিলে তাদের বাদ দিয়েই রওশন এরশাদ সামনে এগিয়ে যাবেন।
এর আগে গত মাসে ভারত সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ওই সফরের আগে প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে নির্বাচন ও দ্রব্যমূল্য নিয়ে বক্তব্য রাখতেন তিনি। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সরকারের দুর্নীতির অভিযোগও নিয়মিত করতেন। দলের নেতা-কর্মীরাই বলছেন, ওই সফর থেকে দেশে ফেরার পর তিনি একদম চুপ হয়ে গেছেন।
অন্যদিকে তিনি ভারত সফরে থাকা অবস্থাতেই পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রওশন এরশাদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। তবে দলের নেতৃত্ব এখন কার হাতে, সেটিও স্পষ্ট হয়নি কোনোভাবেই। এর মধ্যেই সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে বলেন, ‘আমার দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে।’ সব মিলিয়েই জি এম কাদের জাপায় অনেকটাই সাইডলাইনে চলে গেছেন।
এ অবস্থাতেও জাতীয় পার্টির নেতাদের একাংশ এখনো নির্বাচন নিয়ে রওশন এরশাদের পক্ষে অবস্থান নেননি। তারা বলছেন, রাজপথে থাকা বিরোধী দলগুলো সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাতে পারবে বলে মনে করছেন তারা। সেক্ষেত্রে তারা বিএনপির সঙ্গে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। সে কারণেই নির্বাচন নিয়ে রওশন এরশাদের কার্যক্রমের সঙ্গে তারা তাল মেলাচ্ছেন না।
জি এম কাদেরের অনুসারী এই অংশটি বলছে, আপাতত তারা কোনো জোটে যাবেন না। তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। অক্টোবরের শেষের দিকে গিয়ে হয়তো নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। ওই সময় বিএনপি তাদের আন্দোলনে সফল হলে তারা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করবেন। আর আন্দোলন সফল না হলে সরকারের সঙ্গেই দর-কষাকষি করে আসন বাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করবেন।
এসব বিষয়ে রওশন এরশাদপন্থি নেতা গোলাম মসীহ সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। আগামী মাসে আমাদের যৌথ সভা আছে। সভায় সবার উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জি এম কাদেরের অনুসারীরা কেউ না এলে না আসবেন। তবে পার্টির এমপিসহ শীর্ষ নেতারা সভায় থাকবেন বলে আভাস দিয়েছেন। ফলে সভা হবে। সভার পর প্রয়োজনে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্তও আসতে পারে।
গোলাম মসীহ আরও বলেন, রওশন এরশাদ মনে করেন, নির্বাচনের আগে কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুলতে হবে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা খুব কম ভোট পেয়েছেন। তাই সংকট কাটাতে ভোটের আগে তৃণমূলকে উজ্জীবিত করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চলবে।
অপর দিকে জি এম কাদেরপন্থি একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করা পর্যন্ত আমরা চুপ থাকব। এর মধ্যে বিএনপির আন্দোলন সফল হলে সেদিকে যাব। না হলে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করব। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর