Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফিরতে চান বহিষ্কৃতরা, সাড়া নেই বিএনপির

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:২৭

ঢাকা: বিএনপির দুই সাবেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার ‘তৃণমূল বিএনপি’তে যোগ দেওয়ার পর রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে গুঞ্জন— আরও অনেকে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। বিভিন্ন সময় বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া, অভিমান নিয়ে নিজে থেকে সরে যাওয়া এবং পদচ্যুত ও পদবঞ্চিত নেতারা দলবেঁধে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন।

তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারও তাদের বক্তব্যে এমন আভাস দিয়েছিলেন। পারিপার্শ্বিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনটিই ধরে নেওয়া হচ্ছিল, খুব শিগগিরই বিএনপির সাবেক নেতারা তৃণমূল বিএনপিতে গিয়ে ভিড়বেন।

বিজ্ঞাপন

আলোচনায় যাদের নাম বারবার উঠে আসছিল তাদের মধ্যে ছিলেন খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কুমিল্লার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানসহ স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী বিএনপির সাবেক কয়েক ডজন নেতা।

তবে বিএনপির সাবেক এসব নেতাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ‘তৃণমূল বিএনপিতে’ নয়, বিএনপিতে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। এরই মধ্যে দলে ফেরার জন্য আবেদনও করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেছে, শমসের মবিন চৌধুরী ও তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করেছিলেন, চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে বহিষ্কৃত নেতাদের দ্রুতই ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু ওই দিন রাতে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া কয়েক শ নেতাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এদের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় নেতা। এ ছাড়া শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতাকেও বহিষ্কার ও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কুমিল্লার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান অন্যতম।

এদের মধ্যে নজরুল ইসলাম মঞ্জু দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলায় ২০২১ সালের ডিসেম্বরে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এখন দায়িত্ব পালন করছেন সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। আর দল থেকে অব্যাহতির পরও নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিএনপির সব কর্মসূচিতে অনুসারীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টকশোতে তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেওয়ায় বিএনপির বিরাগভাজন হন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। এরপর দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি তাকে বহিষ্কার করা হয়।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে অংশ নেন মনিরুল হক সাক্কু। গত বছর মে মাসে তাকেও দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। দুই-তিন মাস আগে তিনিও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছেন। অনুরোধ জানিয়েছেন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য। এখনো সেই চিঠির কোনো জবাব পাননি তিনি। দলের পক্ষ থেকেও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তারপরও দলের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি। ভবিষ্যতে বিএনপিতেই থাকতে চান মনিরুল হক সাক্কু।

গত ১৬ মার্চ ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’র এক সুধী সমাবেশ ও নৈশভোজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। বিএনপির ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি’কে পাশ কাটিয়ে ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’র সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ ‘অন্তর্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবি তোলেন।

বিএনপির সন্দেহ, ‘জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাই শওকত মাহমুদকে বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরও জিয়াউর রহমানের আদর্শ ও খালেদা জিয়ার প্রতি নিজের আনুগত্যের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন শওকত মাহমুদ। তিনিও বিএনপিতে ফিরতে চান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেনি। শওকত মাহমুদও দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তৃণমূল বিএনপি বা অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছাও তার নেই।

জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করে, দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রেখে সংগঠন শক্তিশালী করা যায় না। এরই মধ্যে অনেক সময় পার হয়ে গেছে। দলের এখনই উচিত বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের দলে ফিরিয়ে নেওয়া। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।’

তৃণমূল বিএনপি বা অন্য কোনো দলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না— জানতে চাইলে মঞ্জু বলেন, ‘কেউ ডাকলেই চলে যাব, এমন রাজনীতি আমি করি না। আমার দল বিএনপি। আমি বিএনপিতেই থাকতে চাই। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে চাই। দলের উচিত দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া। আমি শুধু একা নই, রাজশাহী, বরিশাল, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপির অসংখ্য নেতা দলে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখুন, তারাও আমার মতো বলবে।’

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের বহিষ্কার করা হয়। আবার দলের প্রতি আনুগত্য, দলীয় কর্মকাণ্ডে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, ত্যাগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেকে ফিরেও আসে। দলের দরজা কারও জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় না। তার মানে এই নয়, বিশেষ একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলবেঁধে সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা মানলে এবং অতীত ভুলের জন্য অনুতপ্ত হলে বহিষ্কৃত নেতারা দলে ফিরতে পারবেন।’

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

তৈমূর আলম খন্দকার দলে ফেরা নজরুল ইসলাম মঞ্জু বহিষ্কৃত নেতা বিএনপি মনিরুল হক সাক্কু মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান শওকত মাহমুদ শমসের মবিন চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর