৬ দলের ‘জাতীয় জোটের’ আত্মপ্রকাশ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৪
ঢাকা: ছয়টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয় জোট’ নামের একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এই জোট ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেনকে চেয়ারম্যান এবং একই দলের মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. ইয়াকুল ইসলামকে মুখপাত্র করে এই জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই জোট ঘোষণা করা হয়। জোটটি নির্বাচনি ইশতেহার এবং নির্বাচনি সরকার সম্পর্কে প্রস্তাব তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে।
জোটভুক্ত অন্য পাঁচটি দল হলো- গণঅধিকার পার্টি-পিআরপি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ গ্রীন পার্টি ও বাংলাদেশ সৎ-সংগ্রামী ভোটার পার্টি। দলগুলোর চেয়ারম্যান ও মহাসচিব যথাক্রমে জোটের কো-চেয়ারম্যান ও সমন্বয়কারী হিসেবে থাকছেন। জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আগামীতে একসঙ্গে অংশ নেওয়া ছাড়াও এই জোট দেশ ও জনগণের স্বার্থে এবং জাতীয় সংকট নিরসনে যৌথভাবে কর্মসূচি দেবে।
জোট ঘোষণার সময় অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ। মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই ব্যবসায়ী-শিল্পপতি হওয়ার তারা সব সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেখেন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে অধিক মুনাফার আশায় একটার পর একটা জিনিসের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করে চলেছে। এক্ষেত্রে সরকারের উপযুক্ত নজরদারী নেই।
সংবাদ সম্মেলনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য জাতীয় জোটের সুপারিশসমূহ বলা হয়, ডিসিদের পরিবর্তে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করতে হবে এবং সব ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নির্বাচনে সকল প্রকার প্রচারণা করতে হবে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা অনুসারে। প্রার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত মুদ্রণ ফি নিয়ে নির্বাচন কমিশন সকল প্রার্থীর নাম ও ছবি সম্বলিত পোস্টার মুদ্রণ করবে। প্রার্থীদের মধ্যে সমসংখ্যক পোস্টার বিতরণ করবে এবং নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত স্থানে প্রার্থীরা পোস্টার প্রদর্শন করবেন। তবে প্রার্থীগণ নিজ উদ্যোগে মাইকিং ও হাতে হাতে প্রচারপত্র বিতরণ করতে পারবেন। কেন্দ্রে একটি অস্থায়ী মনিটরিং কমিটি নিয়োজিত রাখতে হবে। নির্বাচনের দিন নির্বাচনি এলাকায় বিশেষ ছুটি ঘোষণা করতে হবে এবং সকল প্রকার অফিস প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবে বলা হয়, যে কোন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অনুমোদিত বা নিবন্ধিত দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষণ সংস্থা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের অবাধ সুযোগ দিতে হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রস্তাবে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে এবং তফসিল ঘোষণার পর থেকে যে সরকার থাকবে তা নির্বাচনি সরকার হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বারা পরিচালিত হবে।
জাতীয় জোটের নির্বাচনী ইশতেহার
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনি ইশতেহারও প্রকাশ করে জাতীয় জোট। জোটটির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলো হলো, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রকে দুর্নীতিমুক্ত করা। বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাখা। ইউনিয়ন পর্যায়ে থেকে প্রশাসনিক স্তর বিন্যাস ও সার্বিক বিকেন্দ্রীকরণ। কৃষি ও শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব দুর করা। সবার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি, উন্নত যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করা। ইউনিয়ন পর্যায়ে জাতীয় মানের শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা। জনপ্রতিনিধিদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করণে ‘জবাবদিহি কমিশন’ গঠন। বাংলাদেশে একটি ন্যায় ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং স্বনির্ভর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যেখানে দল, মত, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, উপজাতি নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকারসমূহ ন্যায়সঙ্গতভাবে ভোগ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে জোটটির প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আরও বলা হয়, অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র চর্চা ও সুস্থ ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং রাজনীতিতে মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিতদেরও সুযোগ সৃষ্টি করা। গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা ও সমাধানের পন্থা উদ্ভাবন করা। জাতিগত ও পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করা। ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে ধর্মীয় মূল্যবোধ, গণমুখী দেশীয় সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক তথা মানব জীবনে সার্বিক বৈষম্য দূরীকরণে গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখা। আইনি কাঠামোয় স্বাধীন, শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা। প্রবাসীদের কল্যাণে কার্যকর ব্যবস্থা করা। সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা। সরকারি প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ করা। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ভূমিহীন ও শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
জোটটির প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং সংবাদকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ। বয়সসীমা রহিত করে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিতে সুযোগদান নিশ্চিত করা। উপজাতি ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারার জীবন-যাপনে বিশেষ সহযোগিতা দেওয়া। দেশের সব স্তরে পরিবেশবান্ধব কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। দেশের যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়োজিতদের কাজের জবাবদিহিতা আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পার্টি-পিআরপির চেয়ারম্যান সরদার মো. আব্দুস সাত্তার, বাংলাদেশ বেকার সমাজের সভাপতি মো. হাসান, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা কামাল বাদল, বাংলাদেশ গ্রীন পার্টির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মনছুর আহমেদ ও বাংলাদেশ সৎ-সংগামী ভোটার পার্টির চেয়ারম্যান মো. মোবারক হোসেন বক্তব্য দেন।
এছাড়া গণঅধিকার পার্টি-পিআরপির মহাসচিব ড. শরীফ সাকি, বাংলাদেশ বেকার সমাজের সাধারণ সম্পাদক মো. রাহাত চৌধুরী, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব মো. আমিনুল ইসলাম সুমন, বাংলাদেশ গ্রীন পার্টির মহাসচিব মো. মোস্তাকিম হোসাইন ও বাংলাদেশ সৎ-সংগামী ভোটার পার্টির মহাসচিব মো. নিজাম উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আইই