Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পশ্চিমা রাষ্ট্র বাংলাদেশের মোল্লাতন্ত্রের বেস্ট ফ্রেন্ড’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫৪

ফাইল ছবি: মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পশ্চিমা দেশগুলো এখন বাংলাদেশের মোল্লাতন্ত্রের ভালো বন্ধু বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামে রাধাষ্টমী উৎসবের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এই বাংলাদেশে যারা সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, সে যুদ্ধাপরাধী চক্র থেকে শুরু করে সকল প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এবং আমাদের সঙ্গে সমমনা সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃ্তিক সংগঠন সবাইকে লড়াই করার নির্দেশনা দিয়েছেন। ঐক্যবদ্ধভাবে এই অশুভ শক্তি ও দানবীয় শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। এক চুলও ছাড় তিনি দেবেন না।’

‘পশ্চিমার অনেক রাজনৈতিক শক্তি ধমক, হুমকি, অনেক ধরনের অনুরোধ সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধী চক্রকে তিনি ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন। যারা আমাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করেছে ,আমার ভাইদের হত্যা করেছে সেই খুনি যুদ্ধাপরাধিদের ট্রায়াল করে যাদের ফাঁসি হওয়া দরকার ফাঁসি দিয়েছেন, যাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়া দরকার তিনি তাদের সেভাবে বিচার করেছেন। কিন্তু এদের যে রাজনৈতিক ধারক এবং বাহক এরা কিন্তু বাংলাদেশে এখনও আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনেও ওদের ২৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম লীগের সঙ্গে ছিল। পরবর্তীতে এরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে। আমরা আজ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সত্য। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন বলে ও তিনি রাষ্ট্রকে সেভাবে পরিচালনা করছেন বলেই। কিন্তু এর মধ্যে আমরা দেখি প্রায়ই সময় এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নানান গুজব ছড়িয়ে নানাভাবে আক্রান্ত করে শুধু সকল প্রগতিশীল শক্তিকে নয়, সকল ধর্ম থেকে শুরু করে অন্যন্য ধর্মের ভাই বোনদের আক্রমণ করে।’

বিজ্ঞাপন

‘যাতে করে বাংলাদেশ জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণিত হয়। এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। এটাকে সাথে নিয়েই আমাদের দেশ চালাতে হয়, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়। তাই আমাদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘জার্মানি যখন স্বাধীন হয়, মিত্র শক্তি তখন সেখানে হিটলারের সকল রাজনীতি ও দলটি নিষিদ্ধ করেছে এবং সেখানে হিটলারের নাম-গন্ধ শোনা যেত না। দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। তাই সেখানে তারা সভ্য হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা ইউরোপে দেখি দীর্ঘদিন ধরে সেখানে নিশ্চুপ থাকার কারণে হিটলারীয় শক্তির উত্থান ঘটেছে। সেই হিটলারীয় শক্তির উত্থান ঠেকাতে অনেক সময় আমরা দেখেছি আজ ইউক্রেন যুদ্ধে মানুষকে হত্যা করার একটি শক্তি ব্যাপক মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। সেটা কিন্তু আজ পরাজিত হতে চলেছে।’

পশ্চিমা গোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নাম করে অনেক নিরপরাধ মুসলমানকে গুলি করে হত্যা করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আজ পশ্চিমা রাষ্ট্র থেকে এসে আমাদের উপদেশ দেয় নির্বাচন নিয়ে। অর্থাৎ প্রতিক্রিয়াশীল যে সমস্ত সাম্প্রদায়িক চক্র এবং গোষ্ঠী আছে নির্বাচনে তাদেরকে আমরা দাওয়াত দিয়ে না আনলে নাকি নির্বাচন হবে না। তারা আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে সবক দেয়, মানবাধিকার নিয়ে ছবক দেয়। এই মানবাধিকার নিয়ে নসিহৎ করা গোষ্ঠীরা ইরাকে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, সিরিয়ায় ও লিবিয়ায় মানুষকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশে এসে তারা মোল্লাতন্ত্রের বেস্টফ্রেন্ড হয়ে গেছে।’

‘দ্বিচারিতার একটি সীমা থাকে। এই পশ্চিমা গোষ্ঠী তাদের দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নাম করে অনেক নিরপরাধ মুসলমানকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তখন মানবাধিকারের কোনো কথা এলো না। আমাদের দেশে যখন ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে লাখ লাখ সনাতন ধর্মের ভাই-বোনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হলো, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের ঘরবাড়ি। তখন কোনো কথা আমরা তাদের কাছ থেকে শুনলাম না। বরং সংবিধান সংশোধন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করে দেওয়া হলো। মানবাধিকারের কথা তাদের কাছ থেকে আমরা শুনলাম না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘যখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো যুদ্ধাপরাধীকে ফাঁসিতে ঝুলানোর কথা আসলো তখন তারা আমাদের মানবাধিকারের কথা বলল। অর্থাৎ মানবাধিকার শুধু তাদের স্বার্থে। আর আমার ভাই-বোনরা যখন এখানে জ্বলবে যারা নিহত হয়েছে, ধর্ষিত হয়েছে তাদের জন্য কোনো মানবাধিকার নেই। আজ আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মানুষ আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই খবরদারি চলবে না।’

‘আমাদের মতো করে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র আমরা এই বাংলাদেশে আমরা গড়ব। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই পশ্চিমা শক্তিকে বারংবার সাবধান করে দিয়েছেন তাদের বিষয়ে নাক না গলাতে। বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবিচল আস্থা রেখেছেন। সেই আস্থার ওপর ভর করে মানুষ তার প্রতি নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন।’

আমেরিকার সবক নিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করে না জানিয়ে নওফেল বলেন, ‘কারও চোখ রাঙানিতে, কারও ভিসা বন্ধতে বা কারও বিদেশ যাওয়া আটকানোতে আমরা ভয় পাই না। আমেরিকার ছবক নিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করে না। কিছুদিন আগে ভারতে কানাডার ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা সন্ত্রাসীকে তারা সেখানে লালন পালন করছিল।’

‘অথচ ওই সন্ত্রাসী ৩০০ জন জন মানুষকে বোমা বিস্ফোরণ করে উড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসীকে তারা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। আমেরিকাতে বঙ্গবন্ধুর খুনিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। কানাডাতে বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিদের আশ্রয় এবং প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মৌলিক প্রশ্নে আমাদের সবার ঐক্য আছে। আমাদের প্রতিবাদী হতে হবে। আমরা ভয় পাই না। আমার বাবা তিনি অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমান ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সনাতন ধর্মের যে হাজার বছরের ঐতিহ্য সেটা তার সন্তানকে শেখাতে হবে, জা্নাতে হবে। এ জন্য তিনি আমাকে রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করিয়েছিলেন। সেখানে পড়াশোনা করেছিলাম,কিছু সময়। মৌলবাদী গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে নানানভাবে অপপ্রচার করে যে আমি এখানে গোপনভাবে ইসকনের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি।’

‘এরা কতটকু সংকীর্ণ মানসিকতার, কূপমণ্ডূকতার এই মৌলবাদী গোষ্ঠী আপনারা সবাই জানেন। এরা কিন্তু আস্তে আস্তে আমাদের সমাজের অনেককেই মোহগ্রস্ত করে ফেলেছে। আমাদের একজন ক্রিকেটার বা অ্যাথলেট। তার খেয়ে দেয়ে কাজ নেয় যে মহিলাদের চাকরি-বাকরি ও কাপড় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মন্তব্য করতে হবে। আপনার কাজ হচ্ছে খেলাধুলা করা আপনি খেলাধুলা করবেন। সমাজ সংস্কার করা আপনার কাজ না। তিনিও এখন নানাভাবে ছবক দিচ্ছেন।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দ্বীন ই ইসলামের কোনো ব্যাখ্যা একক ব্যক্তি দিতে পারেন না। কীভাবে ব্যাখা হবে সেটির জন্য প্রক্রিয়া আছে, ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমে। এখানে একক ব্যক্তি যেমন ইচ্ছে তেমন বলে দিলে হবে না। আমাদের সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। বৃহত্তর ঐক্য অবশ্যই আমাদের করতে হবে। আমাদের শক্তিশালীভাবে এই অপরাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিহত করে পরাজিত করার প্রক্রিয়া অব্যহত রাখতে হবে।’

ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী সভাপতিত্বে ও দেবাশীষ আচার্য্য এবং শুভাশীষ শর্মার সঞ্চলানায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহিউদ্দিন বাচ্চু, পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, স্থপতি আশিক ইমরান, চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের উপ উপাচার্য. বেণু কুমার দে, দিলীপ মজুমদার, বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারি, পুলক খাস্তগীর, রুমকি সেনগুপ্ত, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল।

সারাবাংলা/আইসি/একে

চট্টগ্রাম পশ্চিমা রাষ্ট্র বাংলাদেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর