নিয়ন্ত্রণহীন চবি ছাত্রলীগ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই শৃঙ্খলায় আনা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অজুহাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছোটখাটো অপ্রীতিকর কিংবা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে নানা গ্রুপ এবং উপগ্রুপে বিভক্ত সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
আধিপত্য, দখল ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের জন্য ছাত্রলীগ বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষক নেতাদের। অন্যদিকে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া সংঘাত কমানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রক্টর। ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিব্রত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন আগামী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
কখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন, কখনও নিজেদের কমিটির জন্য ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ, কখনও আবার নিজেদের গ্রুপ-উপগ্রুপের কোন্দলে সংঘাত- এ নিয়েই চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বিভিন্নসময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে লুটপাট করা হয় হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ, নগদ টাকাসহ মালামাল। আহত হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের এ ধরনের আচরণে শঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ একেবারে তুচ্ছ ঘটনায় গত দু’দিন ধরে ছয়বার সংঘাতে জড়িয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৬ জন আহত হয়। গ্রুপ দুটি হল, শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের সিক্সটি নাইন ও চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) গ্রুপ।
সিক্সটি নাইন গ্রুপ চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু এবং সিএফসি সহ সভাপতি মির্জা খবির সাদাফের অনুসারী। টিপু চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিনের অনুসারী এবং খবির শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
একই গ্রুপ শুক্রবার সন্ধ্যায় আবারও সংঘাতে জড়ায়। এরপর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালায়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ১৪ বছরে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকায় ছাত্রলীগের অন্ততঃ ১৯০ জনকে বহিষ্কার করেছে, যদিও তাতে অপরাধ থামেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাত্রলীগ তোয়াক্কা করে না।
অভিযোগ আছে, উপাচার্য হিসাবে অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে বিশৃঙ্খলা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিবারই ঘটনার পর গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের ‘দৃশ্য-অদৃশ্য’ হস্তক্ষেপের জন্য কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।
শাস্তির বদলে সমঝোতায় অপরাধীদের পার পাইয়ে দেওয়ার কারণে কোন্দলে জড়িত নেতাকর্মীদের দাপট কমছে না। আবার প্রশাসনেরও একধরনের প্রশ্রয় আছে তাদের প্রতি। গত জানুয়ারিতে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও চার কর্মী নিজ নিজ বিভাগ ও বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
প্রশাসন বলছে কোন্দল যেহেতু ছাত্রলীগের, সেটার সমাধান রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এখানে মুখ্য নয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলই মূল সমস্যা। এর সমাধান যতদিন হবে না, ততদিন সংঘাতও কমবে না। এখানে সংগঠনের ভেতরে নানা গ্রুপ-উপগ্রুপ আছে। বগি নিয়ে উপগ্রুপ আছে। এসব গ্রুপে আবার সংগঠনের সিনিয়র নেতারাও জড়িত। তাদেরকেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মূল ভূমিকা রাখতে হবে।’
চবি ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মির্জা খবির সাদাফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংগঠনের ভেতরে শৃঙ্খলা আনতে হলে নেতৃত্বের জট কমাতে হবে। এক বছরের কমিটির মেয়াদ যখন পাঁচ বছর হয়ে যায়, তখন কারও আস্থা থাকে না। যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এখন কোনো আস্থা নেই। তাদের নিজেদের সংগঠনের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এজন্য বারবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।’
চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘যারা উচ্ছৃঙ্খলতা করছে, যারা অপরাধ করছে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তখন শৃঙ্খলা অবশ্যই ফিরবে।’
সারাবাংলা/এমএ/একে