‘সরকার টিকবে না’ বিশ্বাস পুঁজি করে এগোচ্ছে বিএনপি
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:৩৬
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টানা এক বছর ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত কোনো সাফল্য ঘরে তুলতে পারেনি দলটি। তাদের একটি দাবিও পূরণ করেনি সরকার। ভবিষ্যতে পূরণ করবে এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচনের মাত্র তিন মাস বাকি। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপ-সমঝোতার কোনো সম্ভাবনাও দেখছে না বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সংলাপ কীভাবে হবে? তারা (ক্ষমতাসীন দল) তো মাঝখানে একটা দেয়াল তুলে দিয়েছে। আলোচনা তো দূরের কথা। মুখ দেখা-দেখিও বন্ধ।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারের মনোভাব ও নিজেদের সক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা সত্ত্বেও ‘সরকার টিকবে না’ এমন বিশ্বাসকে পুঁজি করে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটির বেশিরভাগ নেতা, মাঠ পর্যায়ের কর্মী এবং সমর্থকেরা মনে করেন আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হঠানো সম্ভব না। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপিকে বাইরে রেখেই নির্বাচন করে ফেলবে সরকার। টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন শেখ হাসিনা।
তবে, বিএনপিকে বাইরে রেখে ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে ফের ক্ষমতায় গেলেও তিন মাসের বেশি টিকবে না সরকার। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত চাপ, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির ফলে সৃষ্ট ‘জনরোষে’ তিন মাসের মধ্যে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে সরকার। এ রকম বিশ্বাস থেকে নির্বাচনের আগের দুই মাস এবং নির্বাচনের পরের তিন মাসকে গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারকে একটি ‘গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে বাধ্য করতে’ না পারলেও নির্বাচনের পরের তিন মাসকে আন্দোলনের টার্নিং মোমেন্ট হিসেবে নেওয়া হবে।
সম্প্রতি সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তো আন্দোলনে বিরতি দেব না। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করলে ভোটের পর টানা তিন মাস আন্দোলন চালিয়ে যাব। সেই আন্দোলন মোকাবিলা করে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না।’
এ ধরনের নানা ইকুয়েশন মাথায় রেখে সম্প্রতি এক টিভি টকশোতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘সাত মাস পরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন তারেক রহমান।’ চারমাস পরে যেখানে নির্বাচন, সেখানে সাত মাস লাগবে কেন তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হতে?— এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ‘সাত মাস পরই সব দেখা যাবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন এত কাছাকাছি চলে আসার পরও অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি তার মধ্যে ঘেরাও, হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি নেই। ‘সরকার টিকবে না’— এ ধরনের বিশ্বাস বুকে ধারণ করেই প্রচলিত ও নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছাতে চাচ্ছে বিএনপি।
তবে, ঘোষিত কর্মসূচিতে বাধা দিলে এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠলে আন্দোলনের গতি ও প্রকৃতি বদলাতে পারে বিএনপি। গত দুই দিন দলের দায়িত্বশীল দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও রুহুল কবির রিজভী হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির কথা বলেছেন। যদিও গুলশান কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একটা সূত্র জানিয়েছে, কোনো অবস্থাতেই হরতাল অবরোধের মতো ‘হঠকারী’ কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি।
জানা গেছে, মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর হতে শুরু করায় বিএনপির মধ্যে ‘সরকার টিকবে না’ বিশ্বাস আরও বেড়েছে। সে কারণে আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর একে কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়াতে চায় তারা। সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সমর্থন হারাতে চায় না তারা।
দলটির সিনিয়র এক নেতা সম্প্রতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের ওপর ভরসা করে সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছে, তাদের অধিকাংশ আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে-মেয়েরা আমেরিকা-কানাডায় লেখা-পড়া করে। অনেকেই আবার আমেরিকা-কানাডায় গাড়ি-বাড়ি করে ফেলেছেন। সুতরাং সরকারকে সহযোগিতা করতে গিয়ে নিজেদের সন্তান-সম্পত্তির ক্ষতি ডেকে আনবে না। সুতরাং এবার আর একতরফা নির্বাচন করে পার পাবে না সরকার। সে কারণে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই থাকতে চাই।’
জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার টোটাল পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখান থেকে তারা আর ফিরতে পারবে না। মার্কিন ভিসানীতি শুধু নয়, গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ দেশের জনগণও তাদের সঙ্গে নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপিকে বাইরে রেখে যেনতেন একটা নির্বাচন তারা করে ফেললেও টিকে থাকতে পারবে না।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম