নদী দখলের পেছনে মন্ত্রীর হাত— অভিযোগ নদী কমিশন চেয়ারম্যানের
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:০৪
ঢাকা: নদী দখলের পেছনে প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘পদ্মা নদীতে তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ তৎপর রয়েছে। তাদের দৌরাত্ম্যে নদীর অবৈধ খনন ঠেকানো যাচ্ছে না। কর্ণফুলীর মতো অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদীকে লিজের নামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রীর কারণে মেঘনা নদীকে দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না।’
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় নদী দিবসের এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নদীর ওপর হায়েনার মতো হামলা চালানো হচ্ছে। নদীর অবস্থা ভালো নেই। দেশে প্রতিদিন ৮ থেকে ১২টি নদীর ওপর হামলা হচ্ছে। দূষণ, দখল, বালু তোলার মাধ্যমে এই হামলা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে নদী কমিশন কর্তৃক নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণের পাশাপাশি নদ-নদীর সংখ্যার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ সময়য় মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর অনুষ্ঠান করছি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। হামলা থেকে নদীকে বাঁচাতে পারছি না।’
বাংলাদেশের নদ-নদীর অভিভাবক হিসেবে সহয়ায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নদী কমিশন নিঃসঙ্গ সেরপার মতো কাজ করছে। আমাদের আশেপাশে কেউ নেই। এমনকি আমাদের টাকা-পয়সাও দেয় না। নদী কমিশন বছরে মাত্র ৫ কোটির কম টাকায় চলে। নানা সময় সরকারের কাছে নানা কিছু চেয়েও পাচ্ছি না। বিশজন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েও পাইনি।’
নদীরক্ষায় কাজ করতে গিয়ে নদী কমিশন ও প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা হয়রানির শিকার হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশনকে বলা হয় নখদন্তহীন। আসলে আমাদের হা-পা কেটে ফেলা হয়েছে। আজকে যে নদ-নদীর তালিকা প্রকাশ করলাম, টাকা না থাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েও জানাতে পারছি না। পর্যাপ্ত ফান্ড থাকলে এগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যেত। তার ওপর আমাদের দক্ষ কর্মকর্তাদের বদলি করে বা পদোন্নতি না দিয়ে নির্জীব করে দেওয়া হয়। ফলে আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
ঢাকার চারপাশের চারটি নদীসহ, পদ্মা, মেঘনা ও কর্ণফুলীর মতো দেশের প্রধান প্রধান নদী প্রভাবশালীদের জন্য দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না উল্লেখ করেন তিনি।
মনজুর চৌধুরী বলেন, ‘ইলিশ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মেঘনা থেকে ইলিশ গবেষককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে চিংড়ি গবেষণায়। এভাবে যারাই যেখানে নদী উদ্ধারে বা দূষণ দূর করতে কাজ করছেন তাদেরকেই নানাভাবে ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে।’
এদিকে পরিবেশ অধিদফতর উদ্যোগে ঢাকার চারপাশের নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হলেও দূষণ রোধে তারা ব্যর্থ। ফলে নদীর তীরবর্তী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এতেও কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙছে না। নদী দখলকারীদের কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: দেশে নদ-নদী ১ হাজার ৮টি
সারাবাংলা/আরএফ/একে