‘মার্কিন ফর্মুলায়’ নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা আসছে
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৬
ঢাকা: সংবিধান সংশোধন করে ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠার দাবিতে এক দফার আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি। ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যক্ষ সমর্থনে ধারাবিহক কর্মসূচি চালিয়ে গেলেও তাদের এ আন্দোলন গায়ে মাখছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এবার ‘মার্কিন ফর্মুলায়’ নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। সব কিছু ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই দলের পক্ষ থেকে এ রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অক্টোবরের শেষ অথবা নভেম্বরের শুরুতে মার্কিনিদের মধ্যস্ততায় সংলাপ শুরু হতে পারে। তার আগেই ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’র রূপরেখা ঘোষণা করবে বিএনপি।
পশ্চিমা বিশ্বের যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘অতিমাত্রায় কনসার্ন’, তাদের দেশেও ‘কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট সিস্টেম’ নেই। সুতরাং সংবিধান সংশোধন করে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য চাপ প্রয়োগের নৈতিক ভিত্তি বাইরের দেশের নেই। বড় জোর বিদ্যমান সংবিধান কাঠামোর মধ্য থেকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বিদেশিরা— এ বিষয়টি বিএনপি ভালো করেই জানে।
এমন বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে ‘নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার’র একটা রূপরেখা দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এবং সেটা তারা করতে চায় আমেরিকাকে পাশে রেখে ‘মার্কিন ফর্মুলা’ অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে বিএনপির চাওয়া হচ্ছে- শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে অন্য যে কাউকে প্রধান করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। যে সরকার নির্বাচনের সময় কেবল রুটিন কাজগুলো করবে। গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনের ওপর সে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির শীর্ষ এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এর পর যা হবে, মার্কিন ফর্মুলা অনুযায়ী হবে। তারা যে ফর্মুলা দেবে, সেই ফর্মুলা অনুযায়ী বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবে। খুব শিগগিরই এ রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। বিএনপির একটাই চাওয়া শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন। এ ব্যাপারে দুই দলকে এক টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে আমেরিকা।’
গত জুনের শেষে দিকে বেশ কয়েকটা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন— খুব শিগগিরই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবে তার দল। জানা গেছে, ইতোমধ্যে এর একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। খসড়ায় কার্যত তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন।
খসড়া রূপরেখায় বিলুপ্ত কাঠামোতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা হুবহু ফিরিয়ে আনার কথা সরাসরি নেই। বিলুপ্ত ব্যবস্থায় কিছু সংস্কার এনে নতুন ধাঁচের ফর্মুলা প্রণয়ন করা হচ্ছে। বিশেষত, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান যিনি হবেন, তিনি বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার মতো সর্বশেষ অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি হবেন- এমনটি নয়। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে ‘সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি’ কথাটি যুক্ত করা হচ্ছে। যে ফর্মুলাই চূড়ান্ত হোক না কেন, সেখানে মূল কথা থাকবে- সরকারের পদত্যাগ অর্থাৎ আর যাই হোক নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন করতে হবে।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত শিরোনামে যে ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেছিল, সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে। এখানে প্রধান প্রস্তাব থাকছে- বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন। শুধু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নয়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা যাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়, সেই লক্ষ্যে এটিকে স্থায়ীভাবে প্রবর্তনের প্রস্তাব থাকছে বিএনপির রূপরেখায়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা তো একটা আসবেই। যারা এটা নিয়ে কাজ করছে, তারাই এর দিনক্ষণ ঠিক করবেন। আশা করছি খুব শিগগিরই সেটি হবে।’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম