Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বামীর ঠিকানায় ১০ শিক্ষিকার বদলির আদেশ বহাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৩

ঢাকা: স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ বহাল রেখেছেন চেম্বার জজ আদালত। এছাড়া আরেক পুরুষ শিক্ষকের বদলির আদেশও গ্রহণের নির্দেশ বহাল রেখেছেন আদালত।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে এই ১১ জনের যোগদানপত্র গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

এর আগে, গত ২০ সেপ্টেম্বর স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি হওয়া ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা সম্বলিত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহার এ আবেদন করেন।

আদালতে এমপি বাহারের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা। শিক্ষকদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া।

শুনানিতে আদালত এমপি বাহারের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির সুযোগ আইনে দেওয়া হয়েছে। তাই ঘরের বউকে সসম্মানে ঘরে তুলুন।’

এর আগে আদালতের আদেশপ্রাপ্তির পাঁচ দিনের মধ্যে স্বামীর স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আরেক পুরুষ শিক্ষকের যোগদানপত্রও গ্রহণ করতে বলেন আদালত। কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে এই ১১ জনের যোগদানপত্র গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দিয়েছিলেন।

রুলে বদলি করা ১০ নারী শিক্ষিকাসহ ১১ জন শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা ১০ নারীসহ ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে এবং কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায় বদলি করা ১১ শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করার নির্দেশনা চেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।’

মশিউর রহমান, ফজিলত পারভিন, উম্মে কুলছুম, দিল আফরোজ, আমিনাতুর রহমানসহ ১১ জন শিক্ষক ওই রিট দায়ের করেন। রিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়।

আদেশের পর রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, ‘রিটকারীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রিটকারীদের মধ্যে একজন পুরুষ শিক্ষক এবং বাকি ১০ জনই নারী। রিটকারী মশিউর রহমানের স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলায়, কিন্তু নিয়োগের সময় তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।’

অন্য ১০ জনই নারী শিক্ষক। তারা বিভিন্ন বিভাগ, সিটি করপোরেশন, জেলা এবং উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন বদলি বন্ধ থাকায় তারা বদলি হতে পারেননি। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি করার উদ্দেশ্যে ‘সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকা (সংশোধিত) ২০২২’ নামে বদলি নির্দেশিকা জারি করেন। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা তাদের স্থায়ী ঠিকানা এবং তাদের স্বামীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির জন্য আবেদন করেন।

তাদের আবেদন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত মার্চ মাসে আবেদনকারীদের কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করে। বদলির আদেশ অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রিটকারী শিক্ষকদের তাদের বদলি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য ছাড়পত্র দেন।

পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা তাদের বদলি করা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে যান। কিন্তু কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে যোগদানপত্র দাখিল করিতে গেলে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর রিটকারীরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে দু’টি আবেদন করেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক গত ১৬ জুলাই অপর একটি চিঠি ইস্যু করে। চিঠিতে রিটকারী ১১ শিক্ষকসহ মোট ১৫ জন শিক্ষকের যোগদানপত্র গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের প্রতি নির্দেশ দেন।

কিন্তু কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। যার ফলে কোনো বিদ্যালয়ে কর্মরত না থাকায় রিটকারী শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়।

পরে রিটকারী শিক্ষকেরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে আবার আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এরপর ওই শিক্ষকেরা সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও

টপ নিউজ বদলির আদেশ স্বামীর ঠিকানা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর