১৯৭১ এর গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:১৭
ঢাকা: জাতিসংঘের কাছে অবিলম্বে পাকবাহিনী ও তার দোসরদের হাতে বাঙালি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জোর দাবি জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। বিশ্বসভ্যতার নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি রক্ষায় বাঙালির এই স্বীকৃতির বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচিত হওয়া উচিত বলে মনে করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। একইসঙ্গে ফোরাম মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ দেখতে চায়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেন আর স্বাধীনতা বিরোধীশক্তি বা তার সহযোগীরা বসতে না পারে সেদিকে স্বাধীনতার স্বপক্ষের মক্তি ও সমর্থকদের কড়া নজর রাখার আহ্বান জানান।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এ আহ্বান জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব বাংলাশে সংবাদ সংস্থার সাবেক এমডি হারুন হাবীব। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি নুরুল আলম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম হামিদ, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি নুরুল আলম, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতিসংঘ শতাব্দী প্রাচীন আর্মেনিয়া গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপে নির্মম গণহত্যার শিকার লাখো ইহুদি জনগোষ্ঠীর নিধনের স্বীকৃতি দিয়েছে। সম্প্রতিক রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া, সিয়েরা লিয়ন, বসনিয়ার গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজও বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেয়নি। ১৯৭১ সালে গড়ে দৈনিক ৬ থেকে ১২ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। অথচ কম্বোডিয়ার এই হার ছিল ১২০০। পরিকল্পিতভাবে শত শত শীর্ষ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। বাঙালি গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানব সভ্যতার দাবি, ন্যায় বিচারের দাবি, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের মাটিতে আর কখনও এমন কাউকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চাই না যারা যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আল বদর আল শামসের অনুসারী, কিংবা তাদের প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষক। আমরা চাই পূর্ণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি পবিত্র জাতীয় সংসদ চাই এমন সরকার ও বিরোধী মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাসের প্রণেতা হবেন, জাতির অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে সমুন্নত রাখবেন।
১. সংগঠনের অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনের ঘোষনা তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশের মাটিতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের ঘাতক দোসরদের হাতে যে নিষ্ঠুরতম গণহত্যা ঘটে- তা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বৃহৎ এবং নিষ্ঠুরতম গণহত্যা হওয়ার পরও জাতিসংঘ আজও পর্যন্ত তার স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই জাতীয় সম্মেলন নির্বিচার বাঙালি গণহত্যা, নারী নির্যাতনের স্বীকৃতি দিতে বিশ্বসভার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এবং স্বীকৃতি না দেওয়া পর্যন্ত মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারে বিশ্বাসী সব মানুষকে দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলে স্বক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানায়।
২। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করতে অবিলম্বে একটি জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। তদন্তের ফলাফল শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করা হোক। সম্মেলন একই সঙ্গে মনে করে, মাননীয় আইনমন্ত্রীর একাধিক ঘোষণার পরেও কমিশনের কাজ শুরু না হওয়ায় জাতীয় ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
৩। তাই জাতীয় সম্মেলন দাবি করে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যুগ যুগ ধরে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের সব অঞ্চল এবং প্রধান প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র ও বধ্যভূমিতে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বন্ধু রাষ্ট্র ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যে সব সৈনিক আমাদের স্বাধীনতার রণাঙ্গণে জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক।
৪. সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের এই জাতীয় সম্মেলন মনে করে যে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও বাঙালির জাতীয় স্বাধীনতা এবং অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তার বিরুদ্ধে আজও ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের সব অভ্যন্তরীণ সংকটের সমাধান অবশ্যই দেশের ভেতর থেকে হতে হবে, বাইরের হস্তক্ষেপে নয়।
৫। বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দগুলো সংযোজন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই সাংবিধানিক স্বীকৃতির পাশাপাশি জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘ভিআইপি’ মর্যাদা নিশ্চিত করা হোক। দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের নিকট পরিবার সদস্যদের জন্য সরকারি খরচে অগ্রাধিকারভিত্তিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক।
৬। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক সম্মানী ভাতার অংক প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করা হোক।
৭। জাতির জনকের হাতে তৈরি ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের পুনরুদ্ধার দাবি করছে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক অগ্রযাত্রার স্বার্থে সংবিধানের মূল নীতি বিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের সব অঞ্চলে বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করছে এবং সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিকৃত ইতিহাস সরবরাহের দাবি জানাচ্ছে।
৮। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নব প্রজন্যের মানুষের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ঢাকাসহ বড় বড় শহরের নিকটবর্তী স্থানে স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করা হোক।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আইই