Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অপহরণের পর মিয়ানমারে নিয়ে ৫৬ দিন ধরে নির্যাতন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম থেকে অপহরণের শিকার চার কিশোরকে ৫৬ দিন পর কক্সবাজারের টেকনাফে সমুদ্র সৈকতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পেয়ে উদ্ধার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে অপহারণকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে। তাদের কাছ থেকে পুলিশ পেয়েছে কক্সবাজার-মিয়ানমার সীমান্ত ব্যবহার করে গড়ে ওঠা শক্তিশালী একটি অপরাধী সিন্ডিকেটের তথ্য, যেটি নিয়ন্ত্রণ করছে রোহিঙ্গা অপরাধীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে চার কিশোরকে প্রথমে টেকনাফে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সমুদ্রপথে তাদের মিয়ানমারের একটি এলাকায় নিয়ে জিম্মি করে রাখা হয়। পুলিশ টেকনাফে থাকা অপহরণকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য এবং দু’দেশের স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করলে তাদের হাত-পা বেঁধে সমুদ্র সৈকতে ফেলে যাওয়া হয়।

গ্রেফতার পাঁচজন হলেন- আব্দুল করিম জীবন (১৯), হাকিম বাদশা (২২), মেহেদী হাসান (২৭), মো. হারুন (৩৭) এবং নুরুল হক (৪৫)।

নগরীর বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে জানান, গত ২ আগস্ট নগরীর বাকলিয়া থানার বাস্তুহারা কলোনি বস্তি থেকে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী চার কিশোর অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। মামলা তদন্তে নেমে পুলিশ অপহৃতদের অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে বলে তথ্য পায়। সেখানে অভিযান চালিয়ে তথ্য মেলে, তাদের মায়ানমারে পাচার করে দেয়া হয়েছে।

এরপর পুলিশ গোপন তথ্যে টেকনাফে অপহরণকারী চক্রের কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদের উপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে। টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কয়েকজন চেয়ার‌ম্যান-মেম্বারের মাধ্যমে চার কিশোরকে জিম্মি করে রাখা মিয়ানমারের অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

অব্যাহত নানামুখী চাপের মুখে রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে অপহৃত চার কিশোরকে ফেলে যাওয়া হয় টেকনাফের সমুদ্র সৈকতের লম্বরীঘাট এলাকায়। বাকলিয়া থানা পুলিশ তাদের উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতার করে পাঁচ অপহরণকারীকে।

ওসি আব্দুর রহিম বলেন, ‘গ্রেফতারের পর মেহেদী হাসান আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চার কিশোরকে মাছ ধরার ট্রলারে চাকরি দেয়ার কথা বলে তিনি টেকনাফে নিয়ে যান। সেখানে তাদের তুলে দেয়া হয় হারুনের হাত। হারুন তাদের পৌঁছে দেন সাইফুল ইসলাম সাবু নামে একজনের কাছে। সাবু এবং তার চক্রের কয়েকজন মিলে চার কিশোরকে সমুদ্রপথে পাচার করে দেয় মিয়ানমারের বুচিদং এলাকার জোবায়েরের কাছে।’

এদিকে মিয়ানমারে ৫৬ দিন জিম্মিদশায় থাকা কিশোররা মুক্তি পাবার পর পুলিশের কাছে দিয়েছে সেখানে নির্যাতনের লৌমহর্ষক বর্ণনা। তাদের তথ্যে ওসি জানান, মিয়ানমারে অপরাধীদের আস্তানায় চার কিশোরসহ মোট ৩৬ জন জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। এদের মধ্যে কয়েকজন নারীও আছেন। সেখানে তাদের নিয়মিত অমানবিকভাবে মারধর করা হতো। তাদের কান্নার শব্দ ইমো নম্বরে কল দিয়ে শোনানো হতো বাংলাদেশে পরিবারের সদস্যদের।

‘মিয়ানমারের জোবায়ের ভিকটিমদের অভিভাবকের কাছে ইমো নম্বরে কল দিয়ে মুক্তিপণ দেয়ার চাপও দিয়েছিল। জোবায়ের একজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। যে পাঁচজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি তারাও মায়ানমার ফেরত রোহিঙ্গা। তবে দীর্ঘসময় ধরে থাকার কারণে তারা এদেশে জাতীয় পরিচয় পত্র পেতে সক্ষম হয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী এবং টেকনাফের বেশ কয়েকজন মিলে গড়ে তুলেছে বিশাল অপরাধী সিন্ডিকেট। বাংলাদেশ থেকে অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর এবং এটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’

চার কিশোরকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে ওসি আব্দুর রহিম জানান।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

অধিকারকর্মী নির্যাতন অপহরণ কিশোর মায়ানমার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর